শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
নোটিশঃ
দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি আবশ্যক। নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ এস সি/ সমমান পাস। যোগাযোগঃ 01715247336

বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে আজ আমরা আলো জ্বালাতে পেরেছি -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মো.ফরিদ উদ্দিন বিপু,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি, / ২৯৩
নিউজ আপঃ সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২, ১২:১৯ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,’ ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্ম গ্রহন করেন। যাঁর জন্ম না হলে আমরা কোনদিন স্বাধীনতা পেতাম না। জাতি হিসেবে মর্যাদা পেতাম না। এ মার্চ মাসের ২৬ মার্চ তিঁনি স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ২৫শে মার্চ যে গনহত্যা শুরু করে তার পরপরই তিঁনি স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। আর এ মার্চ মাসেই আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে আজ আলো জ্বালাতে পেরেছি।’ আজ সোমবার ২১ মার্চ দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫’র ১৫ আগষ্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিল জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধুকে। স্বজন হারা, দেশ হারা হয়ে রিফুজি হয়ে থাকতে হয়েছিল বিদেশের মাটিতে। বেশ সময় লেগেছিল এ আঘাত সহ্য করতে। ৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। তখন দেশে ছিল বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, সামান্য কিছু লোক বিদ্যুৎ পায়। গ্রামে গ্রামে তো বিদ্যুৎ নাই। আমরা উদ্দোগ নিলাম। শুধু সরকারই না, বেসরকারী খাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌছাঁবো। যেখানে মাত্র ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম, পাঁচ বছরের মধ্যেই আমরা ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হলাম। দুর্ভাগ্য আমরা ২০০১ এ সরকারে আসতে পারিনি। ২০০৮এ নির্বাচনের পর যখন ২০০৯এ সরকার গঠন করি তখন দেখলাম ৪৩০০ থেকে কমে ৩২০০তে নেমে গেছে বিদ্যুৎ। মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু বাংলাদেশ সেখানে পিছিয়ে যাচ্ছিল। ২১টা বছর, এছাড়া ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যারা সরকারে ছিল এদেশকে এগিয়ে নেয়ার কোন আন্তরিকতাই তাদের ছিল না। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য এদেশের মানুষের। ’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ’২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০২২ পর্যন্ত এই ১৩ বছর এক টানা গনতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি বলেই দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি মানুষ ও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবেনা। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো, ইনশাআল্লাহ। রাঙ্গাবালী, নিঝুম দ্বীপ, স্বন্দীপ এলাকায় নদীর তলদেশ থেকে আমরা সাব মেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি। ২১০০ সালের ডেল্টা প্লান আমরা করে দিচ্ছি।

বিদ্যুত ও জ্বালানী মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (বিপু) এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, চীন সরকারে রাষ্ট্রদূত লে চিং, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো.হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড (বিপিসিএল)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদ আলম প্রমুখ। এ সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বৃন্দ, সিনিয়র সচিব বৃন্দ, প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত ছিলেন। করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুইবছর পর এই প্রথম কোনও প্রকল্প উদ্বোধনে সরাসরি অংশ নিলেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড.তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানের ৭৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় থাকলেও বাংলাদেশের ১০০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সেবা
পাচ্ছেন। এ অর্জন প্রধানমন্ত্রীর অর্জন। তার নেতৃত্বেই এটি সম্ভব হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সবার জন্য বিদ্যুৎ, এ ধারণা বঙ্গবন্ধুর। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ। প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ও দিক-নির্দেশনা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন। বর্তমানে বিদ্যুতের আওতার বাইরে দেশে কেউ নেই। এটা অনেক বড় সাফল্য।

এর আগে সকাল ১০দিকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে এসে পৌঁছান। পরে কোল জেটি এলাকার রাবনাবাদ নদীর মোহনায় ২২০টি নৌকার সমন্বয়ে এক মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান এই অঞ্চলের জেলেরা। এর মধ্যে ১০০টি পালতোলা নৌকা, ১০০ নৌকায় ছিল প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন। প্রতিটি নৌকায় রঙ-বেরঙের পোশাকে দু’জন করে ৪০০ জেলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বাকি ২০নৌকায় ছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং রঙ-বেরঙের কাপড় ও কাগজ দিয়ে সাজানো হয় এসব নৌকা। সঙ্গে বাজানো হয় ‘ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে নাও ছাড়িয়া দেগানের যন্ত্রসংগীত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সেই প্রদর্শনীর দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এসব নৌকা তৈরি করা হয়েছে। উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নজীবপুর গ্রামের আন্ধারমানিক নদীর তীরে নৌকাগুলো তৈরি করেছেন বরিশাল চারুকলা বিদ্যালয়ের ১০ জন শিল্পী। চার দিনে ২৫ সহকারীর প্রচেষ্টায় নৌকাগুলো সাজসজ্জার কাজ শেষ করেছেন ১০ শিল্পী। লাল-সবুজ, নীল এবং হলুদ রঙে নৌকাগুলো সজ্জিত করা হয়েছে। এর পরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর এর নাম ফলক উন্মোচন করেন। এসময় এক হাজার ৩২০টি পায়রা ওড়ানো হয়।

সকাল ১১টা ৪৬ মিনিটে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এরপর ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সভাস্থলে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির উপর বিশেষ প্রমান্য চিত্র উপভোগ করেন।
পরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন ও দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষনার পর পর রঙীন আতশবাজিতে বর্ণিল হয়ে ওঠে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার রোদ্রজ্জ্বল নীল আকাশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩ তম দেশ। এশিয়ায় সপ্তম ও দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।

উল্লেখ্য,২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমর্পোট অ্যান্ড এক্সর্পোট করপোরশনের (সিএমসি) মধ্যে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে কয়লা ভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ হাজার একর জমির উপর নির্মিত পরিবেশবান্ধব এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মানে ব্যয় হয়েছে ২.৪৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার।


এই বিভাগের আরও খবর....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর