শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
নবাবগঞ্জে বজ্রপাতে নিহত দুই বিয়াই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ছাত্রদল নেতা তাজ খান নাঈমের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট বিরামপুরে শহিদ পরিবারের সাথে জামায়াতে ইসলামীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত সনাতন ধর্মালম্বীদের সাথে বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নবাবগঞ্জে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সাবেক যুগ্মসচিব নিশীথ কুমার সরকার রাজশাহীতে আল আকসা’র বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ২০২৪ জামাল হত্যা মামলার বাদী ইমরানের বসত বাড়ি, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায় হরিলোট প্রতিবাদে মানববন্ধন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ মতবিনিময় সভা মাদ্রাসার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন কলাপাড়া প্রকল্পে চাকুরি, লভ্যাংশ প্রদান সহ ৭ দফা দাবিতে পায়রা  তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্থদের মানব বন্ধন
নোটিশঃ
দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি আবশ্যক। নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ এস সি/ সমমান পাস। যোগাযোগঃ 01715247336

শিশু যখন শ্রমিক

প্রতিবেদকের নাম / ৪৪৩
নিউজ আপঃ রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ৬:০৬ পূর্বাহ্ন

সম্পাদকীয় ॥

যে বয়সে বইখাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, খেলার মাঠে নিমগ্ন হওয়ার কথা, সে বয়সে যেতে হয় আয়-রোজগারে। নামতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। বেঁচতে হয় শ্রম। দু’বেলা দু’মুঠো যোগাড়ে অবস্থা হয় প্রাণান্তকর। কুঁড়িগুলো তাই আর ফুল হয়ে ফুটতে পারে না। অচিরেই যায় ঝরে।

‘শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত’ এই নীতিবাক্য তাদের জীবনে কখনই ধরা দেয় না। এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জগত তাদের সবকিছুতেই জড়িয়ে যায়। শ্রমে যুক্ত হওয়ার কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হয় ব্যাহত।

এই রাজধানীতেই প্রতিদিন দৃশ্যমান হয় শিশু শ্রমিকদের কষ্টকর শ্রমজীবন। কোমল যে হাত, সে হাতে ভারি জিনিস বহন করতে হয়। তুলে নিতে হয় হাতুড়িও। ভাঙতে হয় ইট, কিংবা পাটকেল, কিংবা বাস, টেম্পো, লেগুনায় হেলপারের মতো কঠিন কঠোর কাজও আয়ত্ত করে নিতে হয় অল্প বয়সেই। হোটেলে ‘পিচ্চি’ হিসেবে অভিহিত হয়ে কাজ করতে হয় নানারকম। শারীরিক সামর্থ্যে হয়ত কুলোয় না। একটু ভুলত্রুটি হলে কাজে, বকাঝকা বরাদ্দ হয়ে যায়, এমনকি গায়েও হাত তোলে।

বাসাবাড়ির কাজেও এই শিশুরা বারো ঘণ্টার মতো কাজ করে, প্রায়শই মারধর থেকে রেহাই মেলে না। পর্যাপ্ত খাবার কিংবা ঘুমোবার স্থানও থাকে না। পিতৃ-মাতৃ স্নেহবঞ্চিত এই শিশুরা বড় হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তাকে ভর করে। এই করুণ কষ্টকর অবস্থা থেকে বুঝি মুক্তি নেই। যুগ যুগ ধরে তারা নিরন্তর ঝুঁকির ভেতর দিয়ে পাড়ি দেয়। রাষ্ট্রব্যবস্থা তাদের প্রতি সহমর্মী, সমব্যথী এমনটা নয়। তবে আইন রয়েছে। কিন্তু সে আইনও যেন কাজীর গরু কেতাবে থাকার মতো। আর শুধু আইন দিয়ে শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব নয়। অথচ শ্রম আইনানুযায়ী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ দেয়া যায় না।

এ ছাড়া শিশুদের দিয়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো ও চৌদ্দ বছরের কম বয়সী শিশুদের শ্রম একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ বাস্তব দৃশ্য যা তাতে এই আইন প্রয়োগের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। আইনে আছে কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিয়োগ দিলে বা আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করে কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিয়োগ দিলে অথবা আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করে কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরি করার অনুমতি দিলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড দিতে হবে। আর কোন শিশুর বাবা-মা বা অভিভাবক এই পঁয়ত্রিশ ধারা অমান্য করে কোন শিশু সম্পর্কে চুক্তি করলে তাকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড দিতে হবে। অথচ বাস্তবে যেসব শিশুকে কাজে নিয়োগ দেয়া হয়, সেখানে কোন নিয়োগপত্র থাকে না। চুক্তিও নয়। যে কোন সময়ে যে কোন শিশু কর্মচ্যুত হতে পারে যে কোন কাজ থেকে। ফলে আইন আর সেখানে পৌঁছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশে মোট শিশুর সংখ্যা অন্তত সাড়ে পাঁচ কোটি। এর মধ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক শিশুশ্রম সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে ১৩ লাখ শিশু। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বে পাঁচ থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১২০ মিলিয়ন। এদের মধ্যে ছেলে ও মেয়ে শিশু সমভাবে জড়িত। অবশ্য শিশুশ্রমের দিক থেকে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশের তিন শতাধিক কাজে অন্তত ৭৪ লাখ শিশু নিয়োজিত। এরা কলকারখানা, বাসাবাড়ি, টেম্পো, বাস, লেগুনায় হেলপার ইটভাঙা, ময়লা-আবর্জনা টোকোনো, খাবার দোকান, ওয়ার্কশপের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত। শ্রমে যুক্ত হওয়ার কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। বর্তমানে কলকারখানায় শিশুশ্রমের সংখ্যা বাড়ার কারণ এদের মজুরি নামমাত্র। বড়দের মতো কাজ করে ৮৫ শতাংশ শিশু।

কর্মক্ষেত্রে দূষিত পরিবেশে কাজ করছে ১৭ শতাংশ। কর্মক্ষেত্রে মালিক দ্বারা শোষিত ও নির্যাতনের শিকার হয় প্রায় শিশুই। সঙ্কট-দুর্যোগ যাই হোক, শিশুশ্রম বন্ধ হোক বলে যতই হাঁকডাক দেয়া হোক, বাস্তবতায় তা ধোপে টেকে না। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এর আগে তা করার কথা থাকলেও হয়নি। শিশুশ্রমকে সামাজিকভাবে বর্জন করা দুরূহ। কারণ হতদরিদ্র, অতিদরিদ্র অবস্থার পরিবর্তন না হলে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগাড় করতে শিশুদের শ্রমজীবী হতেই হয়। শুধু আইন দিয়ে কিছুই করা সম্ভব নয়।


এই বিভাগের আরও খবর....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Share
Share