রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের সম্মেলন ঘীরে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বিতর্কিত নেতা তৌরিদ আল মাসুদ রনি। তিনি আসন্ন ২৬ সেপ্টেম্বর যুবলীগ সম্মেলনের সভাপতি প্রার্থী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে তাঁকে নিয়ে চলছে জোর সমালোচনা। কেউ বলছেল তিনি আসলে কোন দলের তা পরিষ্কার নয়। তাঁর সখতা ছিলো জামায়াত- বিএনপি ও হেফাজতের সঙ্গে। স্বার্থের প্রয়োজনে ব্যবসায়ী ফায়দা হাসিলে বিএনপি, জামায়াতসহ বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গেও রয়েছে তাঁর ব্যবসায়ীক লেনদেন। ২০১৩ সালে কোটা আনন্দোলনে তাঁর ছিলো মনো সমর্থন। সে সময় সামাজিক মাধ্যমে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া’র কাউকে তিনি চান না বলেও একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো তিনি আসলে কার? তিনি আসলে একজন নামকরা ঠিকাদার। তিনি আসলেই স্বার্থের! ঠিকাদারি ফায়দা হাসিলে সকলের সঙ্গে সখতা তাঁর। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের পদ পেতে রাজধানীতে করছেন কোটি কোটি টাকার বিনিময়। কেন্দ্রে জোর তদবির করছেন তিনি। মহানগরে একক আদিপত্য ও একপেশে কমিটি নিতে তাঁর পছন্দের অন্য এক যুবলীগ নেতাকে নিয়ে করছেন প্রচার প্রচারণা। এতে তাদের সমর্থনে আছে যুবদলের কর্মীসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী।
এর আগে ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল মহানগর যুবলীগের সম্মেলনেও তাদের এ দুটি পদে রাখা হয়। এর ফলে প্রায় দুই যুগ ধরে রাজশাহী মহানগর যুবলীগে নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়নি। এবার নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে বলে জানা গেছে। রনি মহানগর যুবলীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যদিও ২০১৭ সালের কেন্দ্রের অনুমোদিত কমিটিতে তাঁর নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এবারের সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে ২৮টি জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১০টি, সাধারণ সম্পাদক পদে মোট ১৮টি আবেদন আছে। এছাড়া রাজশাহী জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। সে সময় দ্বিতীয়বারের মতো আবু সালেহকে সভাপতি ও খালিদ ওয়াসিকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তবে পরে খালিদ ওয়াসি মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন আলী আজম। আবু সালেহ ২০০৪ সালে প্রথম জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। এরপর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হলেও তা পেছানো হয়।
জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর যুবলীগের পদে সভাপতি পদ পেতে জোর তদবির করে যাচ্ছেন তৌরিদ আল মাসুদ রনি। রাজশাহীতে কৌশলি হয়ে ভিন্ন নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে জামায়াত ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছয়ায় দলটি নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে হেফাজত ইসলামের নেতারা মহানগর যুবলীগের ঐ নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে হেফাজত পরিচালিত হাফেজিয়া মাদ্রাসা কমিটিতে নাম রেখেছেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওই যুবলীগ নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিতও হয়েছেন ওই যুবলীগ নেতা।
সূত্র বলছে, বিতর্কিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে গোপনে ‘ইত্তেফাকুল ওয়ায়েজীন বাংলাদেশ’ নামে কার্যক্রম চালায়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ওই নামও পরিবর্তন করে ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন বাংলাদেশ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। সেসময় রাজধানীতে একটি বৈঠকে মাওলানা আব্দুল বাসেত খান সিরাজীকে সভাপতি ও মাওলানা হাসান জামিলকে সেক্রেটারি করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন আলোচিত হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক।
গ্রহণযোগ্য সূত্র বলছে, নতুন কমিটি গঠনের পর উত্তরবঙ্গকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চিহ্নিত করে কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেওয়া হয় উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোর কমিটি। যেখানে ২১ সদস্য বিশিষ্ট রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলা কমিটি গঠনের পর অনুমোদন দেন সংগঠনটির নেতারা। ওইদিন গঠিত রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি হন মুফতি মুহাম্মদ ওমর ফারুক এবং সাধারণ সম্পাদকের পদ পান মুফতি মো. হাবিবুর রহমান কাসেমী।
এছাড়া মুফতি আব্দুস সবুর সিরাজীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। মূলত এ নেতার সঙ্গেই রাজশাহী মহানগরীর যুবলীগ নেতা তৌরিদ আল মাসুদ রনির সখ্য রয়েছে। যুবলীগের গত কাউন্সিলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেয় রনি। সিটি কর্পোরেশেন বিএনপির নেতা বুলবুল মেয়র থাকাকালীন থেকে রনি সিটি কর্পোরেশনের টেন্ডার কাজ এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন। এখনো তা অব্যাহত রেখেছেন। মেয়র বুলবুলের সঙ্গে ছিলো তাঁর চরম সখতা। সিটি করপোরেশনের কাজ বাগিয়ে নিতে তিনি এ সখতা সব সময় করে এসেছেন। সখতা এতো গভির ছিলো যে, বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র বুলবুলের সঙ্গে তিনি বিদেশ সফর করেন। তাঁর সঙ্গে জোট বাধা অপর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মুকুল শেখের পরিবারের সদস্যরাও বিএনপি সমর্থিত।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কিছু তথ্য থেকে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা জামায়াতে আমির নজরুলের সঙ্গেও তাঁর ছিলো ব্যবসা। তাঁর পৌরসভার কাজও তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন।
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলন ঘীরে রনি-মুকুলের প্রচার প্রচারণায় কাজ করছেন বিএনপি’র কর্মীরা। ইতিমধ্যে এনামুল হক পলাশ নামে যুবদলের এক কর্মী তাঁর পক্ষে প্রচারণায় মাঠে সবর হয়েছে৷ বানিয়েছেন ব্যানার ফেস্টুন। একইভাবে নাঈম কবির নামে আরেক বিএনপি কর্মী তাঁদের প্রচার প্রচারণা করছেন। মুলত সাবেক মেয়র বুলবুলের সমর্থকেরা এবার রনি’র পেছনের শক্তি হয়ে কাজ করছে বলে বিভিন্ন সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ সব বিষয়ে কথা বলতে তৌহিদ আল মাসুদ রনিকে একাধিকবার ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই বিভাগের আরও খবর....