ফরিদপুরের সালথায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত আসাদ মোল্যা (৪২) নামে আরও এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বুধবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। আসাদ উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামের মো. হাসেম মোল্যার ছেলে। স্ত্রীসহ তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
এরআগে গত ৫ মে সকালে খারদিয়া গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে নিহত হন সিরাজুল ইসলাম (২৫)। তিনি খারদিয়া ঠাকুর পাড়ার মো. ইশারত মোল্যার ছেলে। সিরাজুল স্থানীয় একটি স.মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। সে মাত্র কয়েক মাস আগে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন।
এদিকে আসাদের মৃত্যুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বুধবার রাতেই তার দলের সমর্থকরা প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ উঠে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান উত্তেজিত খারদিয়া গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি উভয় নিহতদের বাড়িসহ ভাঙচুর হওয়া বাড়িতে গিয়ে খোজখবর নেন। তার সাথে উপস্থিত ছিলেন- সরকারী পুলিশ সুপার মো. সুমিনুর রহমান ও সালথা থানার ওসি মো. শেখ সাদিক।
সম্প্রতি- আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৫ মে সকাল ৬টা দিকে খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক মোল্যা ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর মিয়ার সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে রফিকের সমর্থকরা আলমগীরের সমর্থক সিরাজুল ইসলামকে কাতরা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। বিষয়টি তখন জানাজানি হলে রফিকের সমর্থকদের অন্তত ৫০টি বসত বাড়িঘর ভাঙচুর করে আলমগীরের সমর্থকরা। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছিল।
অপরদিকে মারা যাওয়া আসাদকে উভয় দলের নেতারা তাদের সমর্থক দাবি করে হাসপাতালে লাশ নিয়ে টানাটানি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আসাদ কোন দলের সমর্থক তা নিয়ে উভয় দলের নেতারা পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দিয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান রফিক মোল্যার দলনেতা নেতা জাহিদ মিয়া দাবি করে বলেন- আসাদ আমাদের দলের সক্রিয় সমর্থক। তবে আসাদের মামা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সালাম মোল্যা ও কালাম মোল্যা আলমগীরের সমর্থক। তারাই এখন ঢাকায় আসাদের লাশ নিয়ে টানাটানি করছেন বলে শুনেছি। তারা যাচ্ছে- আসাদকে আলমগীরের সমর্থক দাবি করে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করতে।
ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর মিয়ার দলনেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক ইউপি সদস্য ইমরুল খাঁ বলেন- আসাদ ছিলেন আমাদের দলের সমর্থক। ঘটনার দিন সংঘর্ষে তিনি আহত হওয়ার পর তাকে আমরা প্রথমে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি।
পরদিন হাসপাতাল থেকে রফিক চেয়ারম্যানের মা অসুস্থ আসাদকে গোপনে উঠিয়ে নিয়ে গোপালগঞ্জ তাদের এক আত্মীয়র বাড়িতে নিয়ে রাখেন। সেখানে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে আসাদের মামা সালাম ও কালাম তাকে উদ্ধার করে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন- আসাদের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর খারদিয়া গ্রামে রফিকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানোর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
সেখানে গিয়ে রাতভর অভিযান চালানো হয়। এ সময় দুটি কাতরাসহ একজনকে আটক করা হয়। এসপি স্যারও ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এলাকার পরিবেশ এখন স্বাভাবিক। মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।