রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহারকারী পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চালকদের ৩০ মিনিটের নদী পার হতে সময় লেগে যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ ঘন্টা। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সড়কে কাটাতে হচ্ছে দিনের পর দিন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোলা আকাশের নিচে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে এসব চালকদের।
এ তালিকায় শুধু পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চালকরাই নয়, দূরপাল্লার পরিবহনের চালক ও যাত্রীদেরকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে নদী পারের জন্য।
অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানগুলো নদী পারের জন্য ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও গোয়ালন্দ মোড়ে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে এলাকায় অবস্থান করছে গত দুইদিন ধরে। অন্যদিকে দূরপাল্লার পরিবহনগুলোকে নদী পারের জন্য ৭-৮ ঘণ্টা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় বাসের মধ্যে বসে থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা পড়েছে চরম বিপাকে।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) সকালে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৫ নং পল্টুন থেকে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুই সারিতে কয়েকশো যানবাহন নদী পারের জন্য অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে দূরপাল্লার পরিবহন রয়েছে প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক। আর পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। অন্যদিকে, গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ীর দিকে কল্যাণপুর বাজারও ছাড়িয়ে গেছে পণ্যবাহী ট্রাকে। এসব ট্রাকগুলোকে কমপক্ষে দুইদিন অপেক্ষা করতে হবে নদী পারের জন্য।
ফেরি ও নাব্যতা সংকটের কারণেই এ ভোগান্তি বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। গত কয়েকদিন আগে এই নৌরুটের তিনটি রো-রো ফেরি মেরামতের জন্য ডক ইয়ার্ডে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই তিনটি ফেরি বহরে যুক্ত হলে ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে বলে জানিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। তবে ঘাট এলাকাতে শতশত যানবহন ও পণ্যবাহী ট্রাক নদী পারের জন্য অপেক্ষায় থাকলেও চাপ নেই ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি নদী পার করার কারণে ঘাটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না যাত্রীদের। ঘাট এলাকাতে এসে কিছু সময় পরই ফেরিতে উঠে যাচ্ছে ছোট গাড়িগুলো।
সাতক্ষীরা থেকে ছেড়ে আসা মামুন পরিবহনের যাত্রী ও চালকরা বলেন, রাত ১১টার দিকে ঘাটে এসেছি। সারা রাত বাসের মধ্যেই কেটেছে। প্রায় ৮ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে উঠতে পেরেছি। বাসের অনেক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইদহ থেকে ছেড়ে আসা অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক চালক রফি মোল্লা বলেন, বুধবার (২৩ মার্চ) সকাল থেকে নদী পারের জন্য খোলা আকাশের নিচে রয়েছি। হয়তো আর ঘণ্টাখানের মধ্যে ফেরিতে উঠতে পারবো।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের (বিআইডাব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শিহাব উদ্দিন বলেন, ফেরী ও ঘাট সংকটের কারণে একটু যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এই দীর্ঘ সারি ঘাট এলাকায় যেনো না থাকে। যত দ্রুত সম্ভব ঘাট থেকে যানবাহনের চাপ কমানো হবে।