সাব্বির হাসান আকাশ।। আধুনিক শিল্পের ছোঁয়ায় হবিগঞ্জের মাধবপুরে মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প ধীরে ধীরে স্মৃতির খাতায় নাম লেখতে শুরু করেছে। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক, স্টিল, মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদির জিনিস বাজারে ছেয়ে গেছে। প্রতিযোগিতামূলক এ বাজারে মাটির টেকসই, সামাজিকতা সবমিলিয়ে গ্রাহকরা ব্যবহারে মৃৎশিল্পে অনুৎসাহিত হচ্ছে।
উপজেলার হরিশ্যামা, বেঙ্গাডোবা, হরষপুরসহ আরও অনেক গ্রামে শত শত পরিবার এ পেশার ওপর নির্ভরশীল। নদী পাড়ে গ্রাম ও পাল বংশের লোকরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে এ ব্যবসার বিরূপ প্রভাবে কুমোররা বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য। শুকনো মৌসুমে ওইসব এলাকার কুমোররা এটেল মাটি ও খড় লাকড়ি সংগ্রহ করে সারা বছরের জন্য। পরিবারের নারী-পুরুষ সব সদস্য এ পেশার সঙ্গে জড়িত।
প্রথম ধাপে মাটি কেটে কাদা বানানোর পর তারা পাকা হাতের ছোঁয়ায় সুণিপুণভাবে নরম মাটির দলা চাকার ওপর রেখে চাক ঘুরিয়ে যাবতীয় মৃৎশিল্প তৈরি করে। এরপর তা রোদে শুকিয়ে এবং রং মাখিয়ে নেওয়া হয় জ্বলন্ত চুল্লিতে পোড়ানোর জন্য। কুমোরদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। বাপ-দাদার কাছ থেকেই হাতেখড়ি।
হরিশ্যামা গ্রামের পরান পাল ও দিলীপ পাল জানান, এটেল মাটি ও লাকড়ির দাম বর্তমানে তাদের তৈরির জিনিসপত্রের দাম ও চাহিদা সবমিলিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
তারা আক্ষেপ করে বলেন, আগে এ শিল্পের জন্য এটেল মাটি বিনে পয়সায় পাওয়া যেত। আর বর্তমানে মাটি পাওয়া গেলেও অনেক দামে তা কিনতে হচ্ছে। বর্তমান বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃৎশিল্পের দাম তেমনভাবে বাড়ছে না।
তা ছাড়া আধুনিক প্লাস্টিক মেলামাইন, স্টিল, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রী পছন্দসই ও টেকসই। তাই এর প্রসারও দিন দিন বাড়ছে। তাদের প্রতিনিয়ত লোকসানের কারণে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।