পাঁচ বছরের শিশু কন্যা ফাইজিয়া ইশরাত মিলি বাবার অপেক্ষায় এখনও ভাত খায়নি। দুপুর ১টার দিকে মিলির মা সর্বশেষ তার বাবার সাথে কথা বলেন। বাইসাইকেলে উঠার পূর্বে কথা হলেও ৫ মিনিট পরই ৮ মাসের অন্তস্বত্ত্বা স্ত্রী খবর পান তার স্বামী সড়ক দূর্ঘটনায় পরপারে চলে গেছেন। স্বামীর জন্য আম কেটে আর ভাত বেড়ে রাখলেও আর খাওয়া হবে না সাইকেল মিস্ত্রি মনির হোসেনের। বিকেল সাড়ে ৫টা বাজে। একমাত্র মেয়ে মিলি জানেই না তার বাবা মারা গেছেন। সে এখনও অপেক্ষায় আছে বাবা আসলে ভাত খাবে।
এমন হৃদয় বিদারক ঘটনাটি চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড নাওড়া গ্রামের সফিক ভান্ডারির বাড়িতে। সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত মো. মনির হোসেন(৩৫) ওই গ্রামের মৃত সফিকুর রহমানের ছেলে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
ঘটনার বিবরণীতে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টা বাজার কয়েক মিনিট পূর্বে নিহত মনির হোসেন তার নিজের দোকান থেকে (সাইকেল মেকার) বাই সাইকেলে করে তার বাড়ির দিকে আসছিলো। তার দোকানটি কুমিল্লা-চাঁদপুর মহাসড়কের কালিয়াপাড়া বাজারের পূর্ব অংশে। বাইসাইকেলে উঠার পূর্বে স্ত্রীর সাথে মুঠোফোনে কথা হয় তার । সাইকেল মিস্ত্রীর দোকান থেকে ১ কিলোমিটার পূর্ব দিকে কুমিল্লা-চাঁদপুর মহাসড়কের নাওড়া রাস্তার মুখে মোড় দিতে গেলে পশ্চিম দিক থেকে আসা একটি তেলের ভাউচার(ট্রাক) তাকে ধাক্কা দেয়। তাৎক্ষণিক চাকার নীচে পিষ্টে যায় তার মাথার উপরের অংশ। ঘটনাস্থলে মারা যায় মনির হোসেন।
নিহত মনির হোসেনের মা কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেন না। শুধু আমার মনিরকে ফিরিয়ে দাও বলে চিৎকার করছিলেন।
নিহতের বোন জানায়, আমার ভাই একজন দরিদ্র মানুষ। তার অনাগত সন্তান ও শিশু কন্যার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। আমার অন্যান্য ভাইয়েরাও স্বাবলম্বী নয়। জানিনা আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ কি হবে?
মনির হোসেনের পাশের বাড়ির এক চাচা জানান, মনির হোসেন অত্যন্ত সৎ একজন মানুষ ছিলো। সে আর্থিকভাবে দুর্বল থাকলেও কখনো মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু নেয়নি। তার অনাগত সন্তান ও শিশু কন্যাটির ভবিষ্যৎ কি হবে এই নিয়ে আমরা চিন্তিত। আশা করছি এলাকার বিত্তশালীগণ পাশে থাকবেন।
এই বিষয়ে কথা হয় শাহরাস্তি থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল মান্নানের সাথে। তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই মনির হোসেনকে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তেলের ভাউচারটি(ট্রাক) আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে এই বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।