শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
জামাল হত্যা মামলার বাদী ইমরানের বসত বাড়ি, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায় হরিলোট প্রতিবাদে মানববন্ধন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ মতবিনিময় সভা মাদ্রাসার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন কলাপাড়া প্রকল্পে চাকুরি, লভ্যাংশ প্রদান সহ ৭ দফা দাবিতে পায়রা  তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্থদের মানব বন্ধন গণতন্ত্রকে পরিবারতন্ত্র ধ্বংস করছে : নতুনধারা   রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি-দুর্নীতি-সীমান্ত হত্যা বন্ধে ব্যর্থ সকল সরকার : মোমিন মেহেদী ফেনী ও নোয়াখালীতে বন্যাদুর্গতদের পাশে এসএলএ ২২ দিন পর লাশ উত্তোলন ৩ আসামি কারাগারে  ত্রান প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট, এবার পর্নোগ্রাফী আইনে মামলা দায়ের
নোটিশঃ
দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি আবশ্যক। নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ এস সি/ সমমান পাস। যোগাযোগঃ 01715247336

শনি দেবতার কৃপায়:যে গ্রামে প্রতিটা বাড়িই দরজাহীন, ব্যাংকে নেই তালা!

প্রতিবেদকের নাম / ৪০৯
নিউজ আপঃ বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৬:১১ পূর্বাহ্ন

সোনাইডেস্ক :: আমরা সব সময় চোর-ডাকাত থেকে নিজেদের মূল্যবান সম্পত্তি রক্ষা করতে ঘুমানোর আগে ঘরের দরজা লাগিয়ে থাকি। আবার কোথাও বেড়াতে গেলে দরজায় তালা বা কলাপসিবল গেট লাগিয়ে থাকি। বাড়িতে দরজা লাগানো হয় না এমন কথা শোনা যায় না।

তবে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে বাড়ির কোনো দরজা নেই আর ওই গ্রামে থাকা ব্যাংকটির দরজায় কোনো তালা নেই। সেখানে চোর-ডাকাতের কোনো ভয় নেই। গ্রামের নাম শনি-শিঙ্গাপুর। গ্রামটির অবস্থান ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের আহমেদনগর জেলায়।

এখানটায় নির্ভয়ে জীবন কাটান মানুষেরা। এই গ্রামের কোনো বাড়িতেই দরজা লাগানো নেই। তবুও ঘরের ভেতরে রাখা টাকা-পয়সা, গয়না, দামি জিনিসপত্র চুরি যায় না।

এ গ্রামে শুধু বাড়ি নয় এলাকার দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, সরকারি বিল্ডিং, ব্যাঙ্ক— কোথাও কোনো দরজা নেই।

এখানকার মানুষের বিশ্বাস, শনি দেবতা তাদের রক্ষা করবেন। গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, আজ পর্যন্ত কোনো দিন চুরি হয়নি এই গ্রামে। গ্রামবাসীর বিশ্বাস, কেউ যদি চুরি বা অপরাধ করার সাহস দেখায় তার জন্য তাকে পস্তাতে হবে। সারা জীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারাবেন তিনি।

গ্রামবাসী শনি দেবতাকে এতটাই মানেন যে, গ্রামের পাবলিক টয়লেটেও গোপনীয়তা বজায় রাখতে কোনো দরজা লাগাননি। কোনো ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য কাপড়ের পর্দা লাগানো থাকে। যাদের পর্দা দেয়া দেখে অন্যেরা বুঝতে পারেন ভেতরে কেউ রয়েছেন।

এ বিশ্বাস রাতারাতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল গ্রামবাসীর মনে। মিথ রয়েছে, ৩০০ বছর আগে গ্রামের প্রান্তে পানাস্নালা নদীতে একটি কালো পাথর ভেসে এসেছিল। এক গ্রামবাসী তাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করার পরই পাথর থেকে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করেছিল।

সে পাথরটা কী তখনও জানতেন না গ্রামের কেউ। তবে ওই রাতেই গ্রামের প্রধানকে স্বপ্ন দিয়েছিলেন স্বয়ং শনি দেবতা। তিনি বলেছিলেন, ভেসে আসা ওই পাথর তারই মূর্তি। পাথরটাকে যেন গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

স্বপ্নে তাকে আদেশ দিয়েছিলেন, এ পাথরের মূর্তি এতটাই শক্তিধর যে তাতে কোনো ছাদের তলায় রাখা যাবে না। চারপাশে কোনো দেয়াল যেন না থাকে যাতে তিনি সারা গ্রামকে বিনা বাধায় চোখের সামনে দেখতে পান। গ্রামকে সমস্তরকম বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।

স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর গ্রাম প্রধানের মনে এতটাই ভক্তির উদ্রেক হয় যে, গ্রামবাসীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেন দরজা বয়কট করার। নিজেদের রক্ষার ভার তারা পুরোপুরি ওই ভেসে আসা পাথরের উপরই ছেড়ে দেন।

এখনও যা কিছু তৈরি হোক না কেন তার কোনো দরজা থাকে না। ২০১১ সালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এ গ্রামে তাদের শাখা খোলে। এ ব্যাংক দরজা লাগিয়েছে যদিও, তবে দরজায় কোনো তালা লাগানো হয় না। এটাই ভারতের প্রথম এবং এখনও একমাত্র লকলেস ব্যাংক।

গ্রামবাসীর বিশ্বাস, যদি কোনো ব্যক্তি চুরি করেন বা কোনো অসৎ কাজ করেন তাহলে পরবর্তী সাড়ে সাত বছর ধরে তিনি এবং তার পরিবার দুর্ভাগ্য ভোগ করবেন। মামলা মোকদ্দমা ফাঁসা, পথ দুর্ঘটনা, মৃত্যু বা ব্যবসায় ক্ষতি— এরকম যে কোনো দুর্ভাগ্য তার পরিবারে নেমে আসবে।

মিথ চালু রয়েছে, একবার এক গ্রামবাসী তার ঘরের সামনে কাঠের দরজা লাগিয়েছিলেন, পরদিনই তার গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৫ সালে প্রথম পুলিশ স্টেশন তৈরি হয় এই গ্রামে। তারও কোনো দরজা নেই। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়েনি। যে কয়টা অভিযোগ হয়েছে প্রতিটাই পাশের গ্রাম থেকে এসেছে। এ গ্রামগুলো পুলিশ স্টেশনের আওতায় পড়ে।

এ গ্রামে কি কোনো অপরাধ হয় না? শনি দেবতা সত্যিই তাদের রক্ষা করে চলেছে? এ বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এককালে গ্রামবাসীর মধ্যে এ বিশ্বাসটা এতটাই গাঢ় ছিল যে, ভয় থেকেই হয়তো কেউ অপরাধ করতেন না। কিন্তু বর্তমানে এটা একটা পর্যটনের জায়গা।

প্রচুর পর্যটক এ গ্রামে আসেন। পর্যটন শিল্পই প্রত্যন্ত এ গ্রামের অন্যতম উপার্জনের রাস্তা হয়ে উঠেছে। বিশ্বাসে আঘাত করে সেই পর্যটন শিল্পের কোনো ক্ষতি গ্রামবাসী করতে চান না। তাই এমনটা হতেই পারে যে, চুরি-ডাকাতি বা অন্যান্য অপরাধ তারা নিজেদের মধ্যেই চেপে যান। পুলিশে আর অভিযোগ জানান না।

ইউনাইটেড কমর্শিয়াল (ইউকো) ব্যাংক গ্রামের রীতি মেনে দরজা লাগায়নি ঠিকই, তবে প্রতিদিন ব্যাংক বন্ধ হওয়ার আগে সমস্ত নগদ টাকা তারা পাশের গ্রামের শাখায় স্থানান্তরিত করে দেয়।-যুগান্তর


এই বিভাগের আরও খবর....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Share
Share