গোপন কক্ষের বাইরে ইভিএম মেশিন নৌকার এজেন্টদের হাতে। যিনিই ভোট দিতে ওই বুথে ঢুকছেন তাকেই তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
সাভার পৌরসভা নির্বাচনে এলাকার তিন নং ওয়ার্ডের স্বর্ণকলি আদর্শ বিদ্যালয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
অভিযুক্ত ওই এজেন্টদের দাবি, ভোট দিতে ‘সহযোগিতা’ করতেই তারা এই গোপন ব্যালট কক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
ইভিএম মেশিনে কিভাবে ভোট দিতে হয় তা বেশিরভাগ ভোটারই জানেন না। কীভাবে ভোট দিতে হবে? কীভাবে কি করতে হবে? এমন নানা প্রশ্ন আর প্রজল্পনা-কল্পনা নিয়ে ভোটের লাইনে দাড়িয়েছেন ভোটাররা।
লাইনে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক ভোটার একে অপরের সঙ্গে এই একটা বিষয় নিয়েই কথা বলতে দেখা গেছে সাভার পৌর এলাকার বেশির ভাগ কেন্দ্রে। তবে ভোটারদের সকল প্রশ্নের উত্তর মিলেছে কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশ করা মাত্রই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদেরকে ‘সহযোগিতা’ নাম করে নৌকার এজেন্টরা গোপন বুথে অবস্থান নিয়ে ভোটারদের নৌকা মার্কা প্রতীকে ভোট দিয়ে দিয়েছেন এজেন্টরা। ভোটকেন্দ্র থেকে ভোট দিয়ে বাহিরে আসা প্রায় ভোটাররা এমন তথ্য জানান।
ভোটারদের কথার সত্যতা খুঁজতে এ প্রতিবেদক সাভার পৌর এলাকার প্রায় ২০ থেকে ২৫টি কেন্দ্রে প্রবেশ করে এবং নির্বাচনী এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে যায়।
‘স্বর্ণকলী আদর্শ বিদ্যালয়’ গিয়ে দেখা যায়, ইভিএম মেশিন গোপন কক্ষের বাহিরে নিয়ে বসে আছেন নৌকার এজেন্ট। সেখানে কয়েক মিনিট অবস্থান করে দেখা যায়, একজন মহিলা ভোটারের ভোট দিয়ে দিচ্ছেন সেই এজেন্ট। সামনে এগিয়ে গিয়ে নাম জানতে চাইলে সেই এজেন্ট দ্রুত কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়।
পরে কথা হয় ভুক্তভোগী মহিলা ভোটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেশিনে কীভাবে ভোট দিতে হয় তা আমি জানি না। ওই লোকটি শিখিয়ে দেওয়ার কথা বলে, মেয়রের ভোটটি দিয়ে দিয়েছেন। পরে কাউন্সিলর ভোটগুলো আমি নিজেই দিয়েছি।
বেলা ১১টার পর ৪নং ওয়ার্ডের ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, গোপন কক্ষে একজন ভোটারের সাথে ভিতর দাড়িয়ে আছেন চারজন ব্যক্তি। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে জানা যায় তারা সকলেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
তাদের কাছে গোপন কক্ষে এক সাথে অবস্থানের কারনে জানতে চাইলে তারা রাগান্বিত কণ্ঠে বলেন, ভাই আপনার কাজ আপনি করেন, আমাদের কাজ আমরা করছি।
দুপুর ১২টার দিকে সাভার সরকারি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও গোপন কক্ষে ভোটারসহ দুইজনকে অবস্থান করতে দেখা যায়। পরে সাংবাদিক কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশের বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত সেখানে পৌছান প্রিজাইডিং অফিসার ইমরান হোসেন। তিনি ঘটনাস্থলে এসে বলেন, গোপন কক্ষে সাংবাদিকরা ঢুকতে পারবেন না। আপনারা যা করার বাইরে থেকে করেন।
স্বর্ণকলি আদর্শ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার গৌতম কুমার দেব জানান, ভোটারদের কাছে ইভিএমের ধারণা নতুন। সেই জন্য বিড়ম্বনাও বেশি হচ্ছে। আর তাই ভোটাররা ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পর তাদের সহযোগিতার করতে এজেন্টরা গোপন কক্ষে যাচ্ছেন।
গোপন কক্ষে এজেন্টদের অবাধ প্রবেশের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেডিও কলোনী মডেল স্কুল কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার খোরশেদ আলী ভূইয়া জানান, ইভিএমে ভোট দেয়ার বিষয়ে নানাভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে। তারপরও কোনো ভোটার কিছু না বুঝলে সহকারী প্রজাইডিং ও পোলিং অফিসারের সহায়তা নিতে পারেন। তবে কোন প্রার্থীর এজেন্ট গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মুনীর হোসাইন খান বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো আছে।
দু একটি কেন্দ্রে ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি।