গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকারে গিয়ে ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে পথ হারায় বাংলাদেশের সর্বদক্ষিনের মৎস্য কেন্দ্র আলীপুর বন্দরের এফবি তানজিলা ও এফবি তাহিরা নামের দুটি মাছধরা ট্রলার । পথ ভুলে ভারতীয় জল সীমনায় প্রবেশের পর ওই দুই ট্রলারে থাকা ১৫ জেলে ও ট্রলারসহ আটক করে ভারতীয় কোষ্টগার্ড সদস্যরা। পরে ভারতীয় আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে কারাবন্দী এসব জেলেদের আজও পর্যন্ত মুক্তি মেলেনি। ফলে সংসারের উপর্জনক্ষম মানুষগুলো দেশের বাহিরে বন্দীদশায় থাকায় দেশে জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসছে দুঃখ দুর্দশার খড়গ। কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন যাপন। অনেকেই অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। তবুও চাইছেন পরিবারে প্রিয় মানুষটির মুক্তি। ভারতীয় কারাগারে বন্দী এসব জেলেরা কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউপির বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
জেলে পল্লীতে ঘুরে জানা যায়, ভারতীয় জেলে বন্দীদশায় থাকা স্বজনদের ফিরে পেতে পরিবারের সদস্যদের করুন বিলাপ। কারাবন্দী জেলে নাঈমের স্ত্রী আনিকা কান্নজড়িত কণ্ঠে জানান, বিয়ের ১৫ দিন পর আমার স্বামী সাগরে গিয়ে পথ হারিয়ে ভারতের জেলে আটকা পড়ে আছে। প্রধান মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ তাকে দেশে ফিরিয়ে আনুন। আমার স্বামী কোন অপরাধ করে নাই।
এদিকে জেলেদের ফিরিয়ে আনতে অধিকতর চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও কোন উপায় পাচ্ছেন না ট্রলার মালিকরা । তারা বলছেন সংশ্লিষ্ট হাই কমিশনের দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিদের তদারকি ছাড়া কারাবন্দী জেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় ।
এফ,বি তাহিরা ট্রলারের মালিক শাহজাহান ফকির জানান, আমাদের ট্রলার ও জেলেরা আটক হওয়ার পর থেকে আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে হাই কমিশন পর্যন্ত যোগাযোগ করেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সমাধান হয়নি। এফবি তানজিলা ট্রলারের মালিক পান্না মিয়া বলেন, আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস্য এবং সম্বল ওই ট্রলার। এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি। ওই ট্রলারে আমার ছেলে নাঈম ছিলো তাকেও আটক করে জেলে দেয়া হয়েছে। ওই সময় ভারতীয় উকিলের মাধ্যমে আমার ছেলে আমার সাথে কথা বলেছে। এরপর আর কথা বলতে পারিনি । তিনি বলেন এ পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় করেছি। তবুও কোন উপায় হয়নি বলে তিনি কান্না জুড়ে দেন।
আলীপুর মৎস্য আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ভারতের জেলে বন্দী জেলেদের ফিরিয়ে আনা জরুরী, কারণ ওই সকল জেলে পরিবার এখন নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। তাদের ভরণ পোষণ এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। অপরদিকে যাদের ট্রলার তারাও জালপালা হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. শহীদুল হক বলেন,এ বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে এখন জানার পর থেকে আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।