ফরিদপুরের সালথায় প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালী আঁশ পাট চাষিদের মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ দেখা গেছে। মাঠের পর মাঠ পাটের সবুজ পাতাগুলোতে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। সালথায় সমাদৃত সোনালী আঁশ পাটের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসলই হচ্ছে পাট। প্রতিবছর এই উপজেলায় ১২ থেকে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়। যা মোট আবাদি জমির ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ।
শতবছর ধরেই বাণিজ্যকভাবে পাট আবাদ করে স্বাবলম্ভী এখানকার প্রান্তিক চাষিরা। তাই এবারও কৃষকের যত স্বপ্ন পাটকে ঘিরে। ইতিমধ্যে পাটের চারাগুলো বড় হতে শুরু করেছে। কৃষকরাও তীব্র গরম আর ঝড়-বৃষ্টি অপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন সোনালী আঁশ পাটের চারা পরিচর্যা কাজে। আশা করা হচ্ছে আবহাওয়া ভালো থাকলে পাটেন বাম্পার ফলন হবে।
উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের রঘুয়াকান্দী গ্রামের কৃষক হাফেজ মোল্যা বলেন- পাট চাষে বরাবরই আমরা বাম্পার ফলের স্বপ্ন দেখে থাকি। আবহাওয়া ভাল থাকলে আশা পূরণ হয় আর যদি খারাপ থাকে তাহলে স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যায়। তবে এবার যা দেখছি তাতে আল্লাহর রহমতে আশা করি ভাল ফলনই হবে। প্রতি বছর পাট সৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে কিছু সময় ভয় লাগলেও মাঝে মাঝে সেই বৃষ্টি আমাদের জন্য আশির্বাদ হয়ে আসে। বৃষ্টিতে পাট ক্ষেতে পানির চাহিদা মিটায়। ফলে পাটের গাছগুলোও দ্রুত বেড়ে উঠে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি পাটের চারার জন্যও বেশ উপকারী।
ভাওয়াল ইউনিয়নের সালথা খালপাড়া এলাকার কৃষক মো. নাসির খলিফা বলেন- আমাদের এলাকার প্রধান সফল হচ্ছে পাট। তারপরে পেঁয়াজ। তবে বাণিজ্যকভাবে পাট চাষ করেই আমরা স্বাবলম্ভী। আমাদের ভাল থাকা নির্ভর করে পাট চাষের উপর। তাই আমরা সর্বোচ্চ শ্রমও দেই পাট ক্ষেতে। তীব্র গরম অপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে পড়ে থাকতে হয়। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে আমরা বিপাকে আছি। দিন প্রতি হাজার টাকার বিনিময়ও শ্রমিক পাওয়া যায় না এখানে। বাহির থেকে শ্রমিক কিনে এনে কাজ করতে হয়। আবার অনেক সময় আমাদের স্কুল-কলেজে পড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে পাট পরিচর্য়া কাজে নামতে হয়। তিনি আরও বলেন- উপজেলা কৃষি ও পাট অধিদপ্তর সব সময় আমাদের সহযোতিা করে থাকেন।
সোনাপুর ইউনিয়নের চান্দাখেলা গ্রামের কৃষক রানা শেখ বলেন- এবারও কয়েক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। আবহাওয়া ভাল থাকলে পাটের ভাল ফলন হবে বলে আশা করছি। পাট ঘরে তোলার পর দামটা ভাল পেলেই আমরা খুশি।
উপজেলা সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন- ৩ হাজার চাষিকে ১ কেজি করে বিজেআরআই-৮ পাটের বীজ ও ১২ কেজি করে সার দেয়া হয়েছে। পাট চাষিদের সব সময় আমরা খোজ-খবর রাখছি। আশা করি এবার পাটের ভাল ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন- সালথায় এবার ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হচ্ছে। যা মোট আবাদি জমির ৯২ শতাংশ। লক্ষমাত্রার চেয়েও আবাদ বেশি হচ্ছে অর্থকরী ফসলটির। মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। রোগ ও পোকা-মাড়ক দমন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য আন্ত:পরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে মাঠ পর্যায় কাজ করছেন উপ-সহকারী কর্মকর্তাবৃন্দ। আশা করছি আশানুরূপ ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটবে।