পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রাখাইন অধ্যুষিত একটি গ্রাম ছ-আনিপাড়ার । বর্তমানে এখানে আটটি পরিবারে ২৮ সদস্যের বাস। পায়রা তৃতীয় সমুদ্রবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়ায় আড়াইশ বছরের প্রাচীন পাড়াটি থেকে রাখাইন পরিবারকে উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, এসএ রেকর্ডে রাখাইনরা ওই জমির মালিক না হওয়ায় তারা ক্ষতিপূরণও পাচ্ছিল না। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ না দিয়ে রাখাইনদের ভিটেমাটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এতে ছ-আনিপাড়ার আটটি রাখাইন পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোস দেখা দিয়েছে। তারা অবিলম্বে তাদের অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের দাবি জানিয়েছে। এ নিয়ে রোববার বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাদের পৃথক বৈঠক হয়।
এদিকে, এসএ রেকর্ডে এ জমির প্রকৃত মালিক ছিলেন ফ্লুয়ান রাখাইন নামের এক নারী। ফ্লুয়ানের মৃত্যুর পর তার স্বামী সেলাফ্রু রাখাইন ও ছেলে সেউ রাখাইন প্রায় ৪০ বছর আগে স্থানীয় গাজী পরিবারের কাছে ভিটে-কৃষিজমিসহ সব বিক্রি করে যান বলে গাজী পরিবার থেকে দাবি করা হচ্ছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান।
এ প্রসঙ্গে রাখাইনপলীøর বাসিন্দা চিংদামো রাখাইন জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ ছ আনা পাড়াবাসীকে বন্দরের জন্য নির্মিত গুচ্ছগ্রামে স্থানান্তরিত করতে চাইছে। সেই গুচ্ছগ্রাম বাঙালী অধ্যুষিত ধানখালী’তে। যেখানে তারা থাকতে চাইছেন না। কেননা, আদিবাসীরা একটু নিরিবিলি নিজেদের মতো করে থাকেন।এবং শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য, বটগাছ, বৌদ্ধ মন্দির এবং সাংস্কৃতিক নানা উপাদান ছেড়ে বাঙালি অধ্যুষিত সেই গুচ্ছগ্রামে থাকতে চান না। আমাদের দাবি, নিরিবিলি স্থানে যাতে পুনর্বাসন করা হয়। কারণ, রাখাইনদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও ধর্মীয়-সংস্কৃতি রয়েছে, যা পালন করতে গিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের সমস্যার কারণ না হয়। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে বলে জানিয়েছে।
এব্যাপারে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মেইনথেইন প্রমিলা বলেন, যে গ্রামে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে সেই রাখাইন গ্রামের পত্তন ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। একটি প্রভাবশালী মহল অনেক আগে থেকেই এই গ্রামের রাখাইনদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা করে আসছে। এখন সেই প্রভাবশালী মহল এবং পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ মিলে এই উচ্ছেদ পরিকল্পনা করছে। জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রের ১০ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে আদিবাসী অধ্যুষিত জায়গায় কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহনের পূর্বে স্থানীয়দের মতামত নিতে হবে, সেটাও করা হয়নি। যদি জোর পূর্বক উচ্ছেদ করে তবে জনগোষ্ঠীর উপর অবিচার করা হবে বলেও মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল বলেন, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করবে অধিগ্রহণ শাখা। এখানে বন্দরের কোনো বিষয় নেই। তারপরও বন্দর কর্তৃপক্ষ মানবিক দিক বিবেচনায় রাখাইনপল্লিতে কাজ শুরু করেনি বা তাদের উচ্ছেদও করা হয়নি।
জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, ১৫ জুলাই শুনানির পর রাখাইনদের অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করে দেওয়া হবে। জমির মালিকানা না থাকলে পুনর্বাসনের বিধান নেই। তারপরও বিশেষ বিবেচনায় রাখাইনদের পুনর্বাসনের জন্য এবং পুনর্বাসনের আগ পর্যন্ত অন্য কোথাও থাকার ভাড়াও পরিশোধ করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্মত হয়েছে।