সোনাই নিউজ:সঙ্গীতে অবদানের জন্য হবিগঞ্জের বাসিন্দা কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী চলতি বছর (২০১৯) একুশে পদক পাচ্ছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২১ বিশিষ্টজন চলতি বছর (২০১৯) একুশে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী হবিগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। তিনি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার নন্দী পাড়া মহল্লার সম্ভ্রান্ত সঙ্গীত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার মামা বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাদেআলিশা গ্রামে। পিতা সুধাংশু নন্দী ছিলেন একজন চিকিৎসক ও সঙ্গীতপ্রেমী। মা পুতুল রাণী চমৎকার গান গাইতেন, কিন্তু রেডিও বা পেশাদারিত্বে আসেননি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে। তবে সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশবকাল মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানেই কেটেছে। পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত বাগানেই ছিলেন। চা বাগানে খ্রিস্টান মিশনারিদের একটি স্কুল ছিল, সেখানেই পড়াশোনা করেন। তবে পড়াশোনার অধিকাংশ সময়ই তার কেটেছে হবিগঞ্জ শহরে। হবিগঞ্জ শহরে তাদের একটি বাড়ি ছিল, সেখানে ছিলেন। পড়েছেন হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। তারপর হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সুবীর নন্দী সেকেন্ড ইয়ারে পড়তেন।
১৯৬৩ সালে তৃতীয় শ্রেণী থেকেই তিনি গান করতেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি সিলেট বেতারে গান করেন। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। লোকগানে ছিলেন বিদিত লাল দাশ। সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে। প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয় -এর গীত রচনা করেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম। ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত সূর্যগ্রহণ চলচ্চিত্রে। ১৯৮১ সালে তার একক অ্যালবাম সুবীর নন্দীর গান ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তিনি গানের পাশাপাশি দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন ব্যাংকে।
এ ছাড়াও তিনি ১৯৭৮ সালে অশিক্ষিত, ১৯৭৯ সালে দিন যায় কথা থাকে, ১৯৮৪ সালে মহানায়ক, ১৯৮৪ সালে চন্দ্রনাথ, ১৯৮৬ সালে শুভদা, ১৯৮৭ সালে রাজলক্ষী শ্রীকান্ত, ১৯৮৯ সালে রাঙা ভাবী, ১৯৯১ সালে পদ্মা মেঘনা যমুনা, ১৯৯৯ সালে শ্রাবণ মেঘের দিন, ২০০৩ সালে চন্দ্রকথা, ২০০৪ সালে, মেঘের পরে মেঘ, ২০০৪ সালে শ্যামল ছায়া, ২০০৮ সালে আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা, ২০১০ সালে অবুঝ বউ চলচ্চিত্রে গান করেন।
সঙ্গীতের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (মহানায়ক-১৯৮৪, শুভদা- ১৯৮৬, শ্রাবণ মেঘের দিন- ১৯৯৯, মেঘের পরে মে – ২০০৪) লাভ করেন। এ ছাড়াও তিনি বাচসাস পুরস্কার – ১৯৭৭, ১৯৮৪, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে লাভ করেন।