সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার ৬ উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট, জনপদ, হাট-বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। টানা বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষরা বিপাকে পড়েছেন। ঢল ও বর্ষণে জেলার অন্তত ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। আরো শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা।
এদিকে জেলার সবগুলো প্রধান নদ-নদীসহ সীমান্ত নদীগুলোর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ৪ দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার রিডিং অনুযায়ী সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৮৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত ও ঢল অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে জেলা সদরের বিভিন্ন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর ডুবন্ত সড়ক গত ৪দিন ধরে ডুবে আছে। ফলে চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট-তাহিরপুর সড়কও নিমজ্জিত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে সদর উপজেলা, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শতাধিক পুকুরের মাছ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্যচাষিরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে জেলার ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। ধর্মপাশা উপজেলায় ৫টি, তাহিরপুরে ২টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ২টি এবং সদর উপজেলায় ১টি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। জেলার প্রায় শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তা ও আঙিনায় পানি প্রবেশ করায় অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তাছাড়া বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। গতকাল বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করে মাঠ প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানা গেছে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলায় ৩ লক্ষ টাকা, ২০০ মে.টন চাল এবং ৩ হাজার ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, ঢল ও বর্ষণে নদ নদীর পানি বাড়ছে। সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমার পানি সন্ধ্যায় বিপদসীমার ৮৪ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৮ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঢল ও বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে বলে জানান তিনি।