বর্ষায় পানি নিষ্কাশন কিংবা মৌসুমী সব ধরনের কৃষি সেচে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করা হতো হাক্কার খালের পানি। কিন্তু সেই খালেই একাধিক বাঁধ দিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। ফলে অতি প্রয়োজনীয় প্রবাহমান খাল প্রতিবন্ধকতায় পানির অভাবে পুড়ে যাচ্ছে কৃষকের তরমুজ ক্ষেতের চারা। পানি সঙ্কটে বিনষ্ট হচ্ছে প্রভৃতি ক্ষেতের ফসল।
ভুক্তভোগী কৃষকরা বলছেন, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরসহ জন প্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও মিলছে না প্রতিকার। তাই রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে খাল উন্মুক্ত রাখার দাবী জানিয়েছেন তারা। কলাপাড়া উপজেলার বালীয়াতলী ইউপির একাধিক গ্রামের সিংহভাগ মানুষ ক্ষেত কৃষিতে নির্ভরশীল। ওই ইউপিতে তরমুজ, বাঙ্গিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফসল উৎপাদন করে বেশ লাভের মুখ দেখছেন প্রান্তিক চাষিরা। তবে বড় বালীয়াতলী গ্রামে ৪৫ নং মৌজার হাক্কার খাল নামে পরিচিত সরকারী খালটিতে বন্দোবস্ত নিয়ে বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষ করে আসছে প্রভাবশালীরা। আর এতেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সৃজনশীল চাষিরা। বিশেষ করে চিন্তার ভাজ পড়েছে তরমুজ চাষীদের কপালে। চলতি মৌসুমে ওই গ্রামের চাষিরা ১শ’ হেক্টর জমিতে ক্ষেত তৈরি করে তরমুজের বীজ বপন করলেও প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে মরে যাচ্ছে চারা । প্রখর রোদের তীব্রতায় পুড়ে যাচ্ছে কৃষকের ¯^প্ন। ফলে ওই গ্রামের অনেক চাষিরাই এখন আগ্রহ হারাচ্ছে তরমুজ চাষে। চাষি হাবিবুল্লাহ জানান, প্রায় তিন একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন তিনি। এখন গাছে ফল আসার সময়। কিন্তু পানির অভাবে তার ক্ষেতের অধিকাংশ চারা রোদে পুড়ে শুকিয়ে গেছে। সেচের জন্য অতি প্রয়োজনীয় হাক্কার খালটিতে বাঁধ দেয়ায় এমন পানি সঙ্কটে পড়েছেন তিনি। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এখন তার নিদ্রা উধাউ হয়েছে।
একই অবস্থা বোরো ধান চাষিদের। কৃষক জলিল হাওলাদার বলেন, ১ একর ৩০ জমিতে হাইব্রীড ধান চাষ করে এখন সর্বনাশের হাতছানি দেখছেন তিনি। তার অভিযোগ, সেচ ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম খালটিতে বাঁধ দেয়ায় পানির অভাবে তার ফসলী মাঠে এখন ফাটল ধরেছে। শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের চারা। একই অভিযোগ স্থানীয় চাষি জলিল মোল্লা, সোহাগ, মাসুম, আনোয় প্যাদাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকের। তারা বলছেন, প্রভাবশালী নাসীর, নকু মেম্বর, কাশেম ও পায়রা বন্দরে কর্মরত আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্য আবুবক্কর খালটিতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। তাদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না তারা। এবিষয়ে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহে গেলে মোবাই ফোনে সংযোগ রেখে আবুবক্করের পরিচয় দিয়ে সংবাদকর্মীদের উপর চড়াউ হন দুই যুবক। জানতে চাইলে বলেন, তারা বন্দর পুলিশ আবুবক্করের নিকটাত্বীয়। তবে সরকারী খাল বন্দোবস্ত নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাসীর হাওলাদার বলেন, সরকার তাদের এই খাল লিজ দিয়েছে। এমনকি বিএস জরিপও রয়েছে তাদের নামে। তবে প্রবাহমান সরকারী খাল কিভাবে বন্দোবস্ত পেলেন জানতে চাইলে তার ভাষ্য, সরকার কেন দেছে তারাই ভালো জানে।
তবে কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ বলেন, খালে বাঁধ দিয়ে কৃষিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সুযোগ নেই। যদি তারা লিজ পেয়েও থাকে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। ওই খালটি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে এবং তাদের নামে রেকর্ডও হয়ে গেছে। কিন্তু এটা রেকর্ড কিভাবে হলো সেটাই বুঝে পাচ্ছিনা। তারপরও যারা খাল বন্দোবস্ত পেয়েছে তাদের মাছ ধরে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং কৃষকরা যাতে সেচ দিতে যারে সে ব্যবস্থা করে দিতে বলেছি।
এবিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম জানান, খাল বন্দোবস্ত নেয়ার সুযোগ নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।