শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
রাজশাহীতে জমি সংক্রান্তের জেরে মিথ‍্যা সংবাদ প্রকাশে প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বাঘায় দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের দাবিতে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন বাঘায় সমাজসেবার সানোয়ারের জাদুর কাঠিতে সুস্থ-সবল শত মানুষ এখন প্রতিবন্ধি সাভারের গান্ধারিয়ায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন বাঘায় নবাগত ইউএনও’র সাথে প্রধান শিক্ষকদের মতবিনিময় সভা ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ শিমুলতলা জোনাল অফিসে গ্রাহক হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগ বাঘায় সাংবাদিক পরিবারের উপর হামলা,থানায় মামলা ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামী কাউন্সিলর সাহেব আলীর শাস্তি চায় এলাকাবাসি মানবিক বাংলাদেশ চায় জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান সাভারে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত
নোটিশঃ
দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি আবশ্যক। নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ এস সি/ সমমান পাস। যোগাযোগঃ 01715247336

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা

প্রতিবেদকের নাম / ৪১৯
নিউজ আপঃ শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:২৩ অপরাহ্ন

নজরুল ইসলাম তোফা:: হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় আনন্দ আয়োজন শারদীয় দূর্গোৎসব। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশাল জনগোষ্ঠীর অনেক আনন্দ, উল্লাস এবং বিনোদনের আনুষ্ঠানিকতা লক্ষ করা যায় এমন উৎসবে। আবারও সাজো সাজো রব পড়ে গেছে গোটা বাংলায়। এসে গেল বাঙালির সেরা উত্‍‌সব। এক বছর পেরিয়ে বাপের বাড়ি আসছেন দেবী দুর্গা। ‘মা আসছেন’ শব্দটিতেই বাঙালির সমস্ত আবেগ যেন পরতে পরতে সাজানো রয়েছে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠস্বরে স্তোত্র পাঠের অপেক্ষার পরই যেন যাবতীয় অপেক্ষা শেষ হয়, ঢাকেল বোলে ২০১৯ সালের দুর্গা পুজোয় মাতবে বাঙালি। এবার পুজো বেশ কিছুটা আগেই। পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে দেবীপক্ষের আয়োজন শুরু হবে ২৮ সেপ্টেম্বর। সেই দিনটাই মহালয়া।

শুভ মহালয়া থেকে চণ্ডীপাঠ, মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানায় ভক্তকুল। অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা করবার লক্ষ্যে মর্ত্যে আসে দেবী দুর্গা। পঞ্চমীর মধ্যেই সমস্ত প্যান্ডেলে ঠাকুর এসে যায়। শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় পুজো কমিটি গুলিতে ততদিনে হিড়িক পড়ে যাবে উদ্বোধনের। ২০১৯ সালের মহাপঞ্চমী তিন অক্টোবর, বৃহস্পতিবার। শাস্ত্র মতে মহাষষ্ঠী পড়ে যায় ৪ অক্টোবর, শুক্রবার। আর মহাসপ্তমী শুরু হয় ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর, শনিবার । সে দিনই নবপত্রিকা স্নানের মাধ্যমে অর্থাৎ তাদের শাস্ত্র মতেই ঢাকে কাঠি পড়ে যায় পুজোয়। ২০১৯ সালের মহাঅষ্টমী ছয় অক্টোবর, অর্থাৎ রবিবার দিন। এই অষ্টমীর কাজ গুলো দুপুর থেকেই যেন হয়, আর তা শেষ হয় সন্ধিপুজো সময় পর্যন্ত। জানা দরকার নবমী ও দশমী ২০১৯ সালের মহানবমী পড়েছে ৭ অক্টোবর, অর্থাৎ সোমবার। মহাদশমী পড়েছে মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হতে চলেছে ২০১৯ সালের দুর্গাপুজোর পর্ব। সচরাচর বিকেল বেলায় সূর্যাস্তে সময় সিঁদুর খেলার আনন্দে যেন গা ভাসিয়ে এবং ঢাক-ঢোল বাজিয়েই দুর্গাপুজোর বিদায় জানাবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীর মানুষ।

তাদের পূজা মণ্ডপে মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমীতে সকল হিন্দু সম্প্রদায় অর্থাৎ হাজার হাজার নারী-পুরুষ ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠান পালন করে। বলা দরকার, হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দুর্গা পূজার দিন ক্ষণ গণনা শুরু হয় মহালয়ার দিনে অর্থাৎ ২৬ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবে আনন্দকে কেন্দ্র করে। তাই এ দূর্গোৎসব হিন্দুদের অবশ্যই বিশুদ্ধ পঞ্জিকার আলোকেই নির্ধারণ করা হয়। শারদীয় দুর্গোৎ​সবের শুভ দশমীটাই তাদের কাছে শেষ দিন। আর এই শুভ বিজয়ার দশমীতে পূজা সমাপন করে এবং দেবী দুর্গাকে বিসর্জনে ব্যাস্ত হন সকল হিন্দু সম্প্রদায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে তারা এদেশ ও সারা বিশ্বে ৩০ সেপ্টেম্বর সনাতন ধর্মীয় জনগোষ্ঠী সকল মানবের চাহিদাকে পুরনের লক্ষে সর্ব বৃহৎ দেবী দুর্গাকে মণ্ডপে দাঁড় করানোর বাসনায় জাগ্রত হন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, তারা মহানবমী উপলক্ষে অনেক পূজা মণ্ডপেই আরতি প্রতিযোগিতা এবং প্রসাদ বিতরণ করে। দশমীতে সব মণ্ডপে থাকে বিষাদের সুর। কারণ, তাদের শুভ বিজয়া দশমীর দিনেই দূর্গাকে বিসর্জনের মধ্য দিয়েই যেন মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসের স্বামী গৃহে ফিরে যায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। সুতরাং এই দিনে বাহির হয় ভক্তদের শোভাযাত্রা, দেবী দুর্গাকে বিদায়ের মাধ্যম হিসেবে জলে নৌকা নয়তো স্হলে রংবে রংয়ের ট্রাকে সাজ সজ্জা ঘটিয়ে আনন্দ উল্লাস করে হিন্দু সম্প্রদায়। বিদায় বেলায় শত সহস্র ভক্তদের আনন্দ-উল্লাসে আর বিজয়ার অশ্রুতে আকাশ বাতাস কম্পিত হয়ে উঠে। দেবী দুর্গাকে স্বর্গালোকে এমন বিদায় দেওয়ার আয়োজন সত্যিই সনাতন বিশ্বাসীদের বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গভীর আত্তার সঙ্গে মিলিয়েই যেন শঙ্খ ধ্বনি আওয়াজ তুলে এবং ঢাকের তালে তালেই কম্পিত হয় আকাশ বাতাস। তাদের এমন দেবী দূর্গাকে বিদায়ের সুরের সাথেই সঙ্গী সাথীও করেন অসহায় গবীব দুখী মানুষদের।

জানা প্রয়োজন তাহলো এই যে, এবার কিন্তু দূর্গা দেবীর বিদায় নেবে ঘোটক কিংবা ঘোড়ায়। এই ঘোড়া কেন্দ্রিক অর্থাৎ তিনি ঘোড়ায় চড়ে স্বর্গালোকে গমন করবে। সেহেতু এমন বিদায়ের ফল শ্রুতিতে অনেক রোগ-ব্যাধি বাড়বে বৈকি এবং অনেক ফসল নাকি নষ্টও হয়ে যাবে। সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীদের এমন ধারনা এবং তাদের বিশুদ্ধ পঞ্জিকায় তার যথাযত সত্যতার প্রমাণ মিলে। তবে এ উৎসবে দেবী দূর্গা এসেছিল নৌকায় চড়ে, ধর্মের আদর্শ বার্তা নিয়ে বছর ঘোরে বারংবার দেবী দূর্গা আসে মর্ত্যলোকে অর্থাৎ পৃথিবীতে। তিনি অবশ্য এজগতে তার ভক্তকুলের মঙ্গল কামনায় আসে, তাই তো বিশ্বাসী হিন্দু সম্প্রদায় বলেন, এমন আগমনের ফলেই অতি বৃষ্টি ও শস্য বৃদ্ধি হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ধর্মীয় এমন অনন্দকে নিয়ে ঘরে ঘরে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে আপ্যায়নের উপঢৌকন তৈরী করে। যেমন, জল-তিল-অন্ন আরো কতো কি। এমন উৎসর্গে তাদের অনেক আনন্দ দান করে। তারা মনে করে, পিতৃ পক্ষে প্রয়াত আত্মারা স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আসে। মৃত আত্মীয়-পরিজন এবং তাদের পূর্ব পুরুষদের আত্মার প্রতি মঙ্গল কামনা করার একটি শুভ দিন।

সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীরা এই দেবীপক্ষকে সবচেয়ে শুভ দিন মনে করেই নতুন নতুন পোষাক ও সামর্থ্য অনুযায়ী ভাল ভাল খাবার তৈবী করে। এ সময় তারা সব ধরনের শুভ কাজ সম্পন্ন করে থাকে। পুরাণের কথায় বলা যায়, অসুর শক্তির নিকট পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিল। সে জন্য চারদিকে অশুভের প্রতাপ দেখা দিয়েছিল। তাই এ অশুভ শক্তিকে ধ্বংস বা বিনাশ করতেই একত্রিত হন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশে অনুভূত হয়েই এক মহা শক্তির আবির্ভাব হয়। সুতরাং সেই দেবতাগনের চরম মহাশক্তির তেজরশ্মি থেকেই আবির্ভূত এক বৃহৎ শক্তি তিনিই হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেছিল। বসন্তে তিনি এ পূজার আয়োজন করায় দূর্গা দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। তিনি কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগেই শ্রীরামচন্দ্র দুর্গা পূজার আয়োজন করেছিল। শরৎ কালের এ পূজাকে হিন্দুদের মতে বলা চলে, অকালবোধন। তাদের এই ধর্ম মতে, এ দিনেই দেব-দেবীকুল দুর্গা পূজার জন্য ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত করে। তাই মহালয়ার দিনে সূর্য উদয়ের আগেই শঙ্খধ্বনি এবং চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে মন্দিরে মন্দিরে নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সকল হিন্দু সম্প্রদায় দেবী দূর্গাকে আবাহন জানায় এবং উল্লসীত সুরেলা কন্ঠে জয়ধ্বনি তোলে, বলো “দূর্গা মাইকি জয়”।

লেখক:
নজরুল ইসলাম তোফা,’টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক’।


এই বিভাগের আরও খবর....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Share
Share