বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর গ্রামের হতদরিদ্র রহমান বেপারী বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট তৈরি করতে দিয়েছিলেন টরকি বন্দরের প্রভাবশালী পাসপোর্ট দালাল নারায়ন পোদ্দারের কাছে। এলাকায় কথিত আছে, সাপের মন্ত্র ভূল হতে পারে কিন্তু নারায়ন দালালের হাতে পাসপোর্ট মিস নাই।
কিন্তু তারপরেই বিপত্তি, সাত বছর পার করেও পাসপোর্ট করতে পারেননি হতদরিদ্র রহমান বেপারী। তার বিরুদ্ধে থানায় কোন অভিযোগও নেই।
পাসপোর্ট করে প্রবাসে গিয়ে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটানোর কথা থাকলেও সহায় সম্বল সব শেষ করে এক সময়ের টগবগে যুবক এখন মাটিকাটা শ্রমিক।
গত রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগি রহমান বেপারী জানান,২০১৬ সালে গৌরনদী উপজেলার টরকি বন্দরের প্রভাবশালী পাসপোর্ট দালাল নারায়ন পোদ্দারের কাছে প্রথমে ছয় হাজার টাকার চুক্তিতে পাসপোর্ট করতে দেই। ছয়মাসের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাবো। কিন্তু পাসপোর্ট আর আসে না।
পাসপোর্ট দালাল নারায়ন জানায় ঠিকানা ভূল থাকায় ডিএসবি রিপোর্ট খারাপ দিয়েছে। যে কারনে নতুন করে ঢাকা থেকে পাসপোর্ট করতে হবে। এবার ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে নারায়নের মাধ্যমে ঢাকায় গিয়ে পাসপোর্ট করতে দেই।
এবারও মাসের পর মাস চলে গেলে পাসপোর্ট আর আসেনা। নারায়নকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে দুই জায়গায় আবেদন করার কারনে একটু সমস্যা হয়েছে। বরিশাল অফিসে দরখাস্ত করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সে কথা অনুযায়ী বরিশালে আবেদন করা হলে বরিশাল অফিস বলেন ঢাকা যেতে হবে এখানে কিছু হবে না। আবার ঢাকা অফিসে গেলে বলে বরিশাল অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
এভাবে ঢাকা-বরিশাল অফিস যোগাযোগ করতে থাকি, অপরদিকে সৌদি আরব যাওয়ার আশায় টাকা জমা দিয়ে সে ভিসাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেখানে অনেক টাকা লস দিতে হয়েছে। জমিজমা বিক্রি, এনজিও থেকে লোন করে এর মধ্যে আমরা সর্বসান্ত হয়ে গেছি। ২০১৬ সাল থেকে এই সাত বছর নারায়নের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে আছি।
রহমান বেপারীর বাবা মকবুল বেপারী কান্না করে বলেন, ঢাকা-বরিশাল আসা যাওয়ায় আমার লাখ টাকার বেশী খরচ হয়েছে। কতবার গেছি মনে নাই করোনার মধ্যে ডাবল ভাড়া দিয়েও ঢাকায় যেতে হয়েছে। আমরা এখন রাস্তার ফকির। আমরা অশিক্ষিত মূর্খ বলেই কি আমাদের এঅবস্থা হবে। অনেক টাকা দেনা হয়েছি তা কিভাবে পরিশোধ করবো! ছেলে বিদেশ যাবে এ আসায় ধানের জমিও বিক্রি করলাম এখন আমার কি হবে। আল্লাহ ছাড়া কার কাছে বিচার দেব।
এ বিষয়ে নারায়ন পোদ্দারের কাছে জানতে চাইলে, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,আমরা অন লাইনে কাজ করে দেই অনেকে বোঝেনা এই জন্য। আমি কোন দালালী করি না।
বরিশাল জেলা পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক মাহমুদুল হাসান এ প্রতিনিধিকে বলেন,আমাদের এখানে কিছু করার নেই,তাকে (রহমানকে) ঢাকা পাসর্পোট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।