ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন ভারতীয় সীমানায় কুড়িগ্রাম জেলার ১১১বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট উপজেলা চর রাজিবপুর। রাজিবপুর সদর, কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। উপজেলা সদর থেকে মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে যোগাযোগের সংযোগ সড়ক থাকলেও কোদালকাটি ইউনিয়ন পুরোটাই সোনাভরি নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ চরের মানুষের নদীমাতৃক জনপদ যা অত্র উপজেলার মূল ভূখন্ডের ২ তৃতীয়াংশ।
চর কোদালকাটি ইউনিয়নে চরসাজাই, বদরপুর, আনন্দ বাজার, পাখিউড়া, হাতিমারাসহ ছোট বড় প্রায় ২৫টি এবং রৌমারী উপজেলা যাদুরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ প্রায় ৩০টি গ্রাম রয়েছে। রয়েছে ২৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি দাখিল মাদ্রাসা, ৪টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, কয়েকটি হাফিজিয়া মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
চইরা এলাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য ধান, পাট, গম, ভূট্টা, বাদাম, বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলসহ শাক-সবজি দ্বারা ভরপুর যা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রাজিবপুর, কর্তিমারী, রৌমারীর বিভিন্ন হাট-বাজারসহ সারা দেশে বিক্রির জন্য পার করতে হয় সোনাভরি নদী। এছাড়া জীবন চালনার তাগিদে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনে এসব নিবৃত্ত চরবাসীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুগ যুগ ধরে পার হতে হচ্ছে সোনাভরি নদী।
কোদালকাটি ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন মানুষগুলো নদী ভাঙ্গার কারণে ভিটেমাটি হারিয়ে চর থেকে চরান্তরে পাড়ি জমাতে হয় বছরে অন্তত দুইবার। একদিকে কষ্টের জীবন-যাপনসহ নানা ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগ বন্যা, খড়া, কালবৈশাখী ঝড় তাদের নিত্য সঙ্গী। অপরদিকে বাড়ীর বাহিরে বের হলেই নদী পারাপার। এ এক অসহনীয় দূর্ভোগ, চরম ভোগান্তি অত্র অঞ্চলের। একটি ব্রীজের অভাবে উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের।
উপজেলা শহরের অদুরে সোনাভরির একটি পয়েন্টে পারাপারের জন্য রয়েছে একটি খেয়াঘাট যা খাঁজার ঘাট নামে পরিচিত। মাত্র ৭০ মিটার প্রস্থের নদীটি অত্র এলাকার মানুষের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়ে আছে অনন্তকাল ধরে। একটি ব্রীজ হলেই ঘুরতে পারে চরাঞ্চলীয়দের অর্থনীতির চাকা, বদলে যেতে পারে জীবন-বৈচিত্র। তাই কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ কর্মব্যস্ত অসহায় মানুষ গুলোর প্রাণের দাবী সোনাভরি নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মাণ করা।
সারা-দেশ বর্তমান সরকারের উন্নয়নের জোওয়ারে ভাসলেও, এসব অঞ্চলে আজও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। দারিদ্র সীমার নিচে রয়েছে প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ। সবেমাত্র বিদ্যুতায়নের আওতায় আসলেও সংযোগ পায় নি এখনও। এসব অঞ্চলের রাস্তাঘাট গুলোর নেই কোন সংস্কার। অনুপযোগী এসব রাস্তাঘাটে যানবাহন চালনায় মানুষ রয়েছে চরম ভোগান্তিতে। অথচ ফি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা ও টিআর দেখিয়ে লুটে খাওয়া হচ্ছে সরকারী মালামাল।
এ বিষয়ে কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু জানান, “আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবী খাজার ঘাটে একটি ব্রীজের। সবচেয়ে বড় কষ্ট হয় কোন গর্ভবতী মা এবং মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতালে নিতে। একটি ব্রীজ হলে যাতায়াতের সমস্যা দুর হবে, আমার এলাকার মানুষ শান্তি পাবে।
রাজিবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরণ মো. ইলিয়াস জানান বীজ হওয়া আশু প্রয়োজন।
ভূক্তভোগি এলাকার আমিনুল মাষ্টার, ফজলুল হক মাষ্টারসহ অনেকেই জানান, “স্বাধীনতার প্রায় ৫০টি বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে, আমারা স্বাধীনতা ভোগ করতে পাচ্ছি না। দেশের সব স্থানেই উন্নয়নের জোয়ার বইছে কিন্তু এই এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগে নাই। নির্বাচন এলেই অত্র অঞ্চলের মানুষকে জনপ্রতিনিধিগণ উন্নয়নের নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও, নির্বাচন শেষে তাদের মাঠে দেখা যায়না। চর এলাকা নিয়ে কেউ ভাবে না মাথায়ও ঘামায় না।। দঃুখের বিষয় শুধু ব্রীজের দাবী করেই গেলাম কিন্তু বাস্থবায়ন পেলাম না।”
জনগণের দাবীর মুখে খাজার ঘাটে ব্রীজ নিমার্ণের আশ্বাস দিয়ে রাজিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো বলেন, “ওখানে একটি ব্রীজের আশু প্রয়োজন। সরকারের কাছে জরুরী ভিত্তিতে সোনাভরি নদীর উপর খাজার ঘাটে একটি ব্রীজের দাবী জানানো হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো।”