দুই বছর পর পবিত্র হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। আগামী ৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে হজ। ১১ মে ঘোষণা করা হয়েছে হজ প্যাকেজ। হজ ফ্লাইট শুরু হতে পারে ৫ জুন। হজ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিন ধাপে মোট ৭৮০টি এজেন্সিকে অনুমতি দিয়েছে সরকার। চলতি বছর সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যারা হজে যেতে চান, তাদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার থেকে। চলবে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত।
এই তিন দিনের মধ্যে হজ প্যাকেজ অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করে নিবন্ধিত হতে হবে। হজ এজেন্সিগুলো প্রতি বছর প্রস্তুতির জন্য ছয়-সাত মাস সময় পেলেও এ বছর তারা সময় পাচ্ছেন মাত্র এক মাস। ফলে সময় অপ্রতুলতায় অনিশ্চয়তার আবর্তে পড়েছেন হজযাত্রী এবং এজেন্টরা।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ইত্তেফাককে বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজযাত্রার সব কার্যক্রম শেষ করা কঠিন। এর আগের বছরগুলোতে হজ কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনায় এজেন্সিগুলো সাত-আট মাস সময় পেত। দেরিতে হজ প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে। ফ্লাইট শুরুর দিন ঘনিয়ে আসছে। বাড়িভাড়া, মোয়াল্লেম চুক্তি, ভিসা, খাবার-দাবার, যানবাহন ঠিক করা, কোরবানিসহ অনেক কাজ বাকি। বিশেষ করে ভিসা নিয়ে সমস্যা হতে পারে বেশি। অল্প সময়ে এত হজযাত্রীর ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজে যেতে পারবেন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এ বছর প্রতিটি এজেন্সি সর্বোচ্চ ৩০০ জন এবং সর্বনিম্ন ১০০ জন হজযাত্রী পাঠাতে পারবে। এজেন্সিগুলোকে মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক হজকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীর সঙ্গে হজ অনুমোদন পাওয়া এজেন্সিগুলোর লিখিত চুক্তি করতে হবে। অনিবন্ধিত কোনো ব্যক্তিকে হজযাত্রী হিসেবে হজে নেওয়া যাবে না। কোনো এজেন্সি এ ধরনের উদ্যোগ নিলে কারণ দর্শানো ছাড়াই তার লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পুর্বঘোষণা অনুযায়ী ৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে না। নতুন টার্গেট ৫ জুন। যদিও শুক্রবার বৈঠক করেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ধর্ম মন্ত্রণালয় ও বিমান মন্ত্রণালয়। তবে ৫ জুন ফ্লাইট শুরুর জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কারণ আগামী ৫ জুন হজ ফ্লাইট শুরু করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছে জেনারেল অ্যাভিয়েশন অব সৌদি। এ প্রসঙ্গে হাব সভাপতি শাহাদত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আগামী ৫ জুন চালু হলে হাজি পাব কোথায়? আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সৌদি আরবে গিয়ে বাড়ি, হোটেল ভাড়া করা, হজ যাত্রীর কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করার মতো কঠিন কাজগুলো কি করা সম্ভব? সবচেয়ে বড় কথা মোনাজ্জেম নিয়োগ দেওয়া, সেই মোনাজ্জেম সৌদি অনুমোদন পাওয়ার পর ঢাকা থেকে ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে গিয়ে কাজ করবে। এছাড়া এজেন্সির সমন্বয়ে লিড এজেন্সি নির্ধারণ, মোয়াল্লেম ফি এবং অন্যান্য খরচের অর্থ প্রেরণ, সৌদি মোয়াল্লেম নির্ধারণ, ক্যাটারিং সার্ভিস ইত্যাদি কাজ শেষে ভিসা ইস্যু করে হজ ফ্লাইট দিতে হয়। এত অল্প সময়ে এতগুলো কাজ কীভাবে করা সম্ভব? আমরা সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে চাচ্ছি। আমাদের কমপক্ষে ১০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক।’
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী জানান, হজযাত্রীর ৫০ শতাংশ বিমান বাংলাদেশ ও বাকি ৫০ শতাংশ পরিবহন করবে সৌদি এয়ারলাইনস। আমাদের প্রস্তুতি আছে। ৫ জুন ফ্লাইট শুরু করতে চাইলেও সম্ভব। এখন হাবের সঙ্গে বৈঠক করে যত দ্রুত সম্ভব হজযাত্রী সংগ্রহের ব্যবস্হা করতে হবে। হাব বলছে, সৌদি আরবে তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা বাড়িভাড়া নেওয়া। সেটাই নাকি তারা করতে পারছে না। সময় লাগবে। তবে ব্যালটি হজযাত্রী দিয়ে হলেও আমরা হজ ফ্লাইট শুরু করব ৫ জুন।