রাজশাহীর বাঘায় শিক্ষাবিদ,কবি, রবীন্দ্র গবেষক,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক নাছিম মালিথার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার(১০ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার শাহদৌলা সরকারি কলেজ মাঠে নাগরিক কমিটির আয়োজনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলুর সভাপতিত্বে এই স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
প্রয়াত শিক্ষাবিদ সর্বজনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব প্রফেসর নাছিম উদ্দীন মালিথা রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামে ১৯৪৬ সালের ১৭ফেব্রুয়ারী মালিথা পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।পিতা মরহুম নজির উদ্দিন মালিথা ও মাতা রাশিদা বেগম।নাছিম উদ্দিন মালিথার বয়স যখন দেড় বছর তখন মা রাশিদা ইন্তেকাল করেন।মালিথা পরিবার এলাকার একটি মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবার।
তার ভাই আলহাজ্ব মন্জুরুল হক মালিথা ওরফে বাবুল মালিথা জীবন বীমা কর্পোরেশনের অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা।বোন নাজমা আলম পেশায় হোমিও চিকিৎসক।
নাছিম উদ্দিন মালিথা ১৯৬১ সালে কালিদাস খালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।এরপর ১৯৬৩ সালে রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬৬ সালে বি.এ(সম্মান) এবং ১৯৬৭ সালে এম.এ বাংলা সাহিত্য ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৭ সালের শেষের দিকে জনাব আফছার উদ্দিনের বাড়ীতে লজিং থেকে বেশ কয়েক মাস বিনা বেতনে মনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে দায়িত্বের সাথে শিক্ষকতা করেছেন।পরবর্তীতে তিনি পুঠিয়া উপজেলার তাহেরপুর কলেজে বাংলার প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।স্থায়ী কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৯ সালে শাহজাদপুর কলেজে।মুরব্বিদের পরামর্শ অনুযায়ী শাহজাদপুরে ইয়াসমিন লায়লাকে বিয়ে করেন।বর্তমানে তিনি শাহজাদপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী শিক্ষক।
শাহজাদপুর কলেজ সরকারী হওয়ায় বিধি মোতাবেক দর্শনা ও যশোর এম এম সরকারী কলেজে বদলী হতে হয়েছে নাছিম উদ্দিন মালিথাকে। বগুড়া আযিজুল হক কলেজে ১৯৯৪ সালে বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে করে এবং সেখান থেকেই ২০০৩ সালে অবসর নিয়েছেন।
নাছিম উদ্দিন মালিথা শাহজাদপুরে ৫০ বছর বসবাস করেছেন।শাহজাদপুরের মানুষের কাছে শুধু শিক্ষকই নয় এক জন আদর্শ মানুষ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।শাহজাদপুরের মানুষের মধ্যে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি করেছেন।শাহজাদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গন পূনঃ প্রতিষ্ঠা করেছেন।রবীন্দ্র কাচারী বাড়ীকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি আদায় তার অবদান।শাহজাদপুর বাসী কৃতজ্ঞ চিত্তে স্বীকার করে।তিনি মরেও অমর।তার লিখা কয়েকটি বই আজ দেশে-বিদেশে সমাদ্রিত।
১।বুকের মধ্যে পোষা পাখি (কাব্য)
২।বাংলা বানান ও টুকিটাকি
৩।রবীন্দ্র – লোক
৪।সাহিত্যের নানা কথা
২০১৯ সালে ২রা নভেম্বর কলকাতায় ৯ম বাংলাদেশ বই মেলায় নাছিম উদ্দিন মালিথার “সাহিত্যের নানা কথা”বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।নাছিম উদ্দিন মালিথা কবি,লেখক,সাহিত্যিক এবং একজন গবেষক।রবীন্দ্র গবেষক হিসেবে তাঁর অর্জন প্রশংসনীয় দাবি রাখে।
শিক্ষাবিদ,কবি,রবীন্দ্র গবেষক সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর নাছিম উদ্দিন মালিথা ১০ অক্টোবর ২০২০ সালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর বিসিক বাসস্ট্যান্ড ওয়ারেছিয়া কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।
উক্ত স্মরন সভা আব্দুল হানিফ ও সুরুজ্জামানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সামাজিক,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এড. মোস্তাফিজুর রহমান ,অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ ,বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখক আজিজুল আলম, সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক,রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জুলফিকার আলী, রাজশাহী কলেজের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল হালিম মোল্লা, প্রভাষক আমিরুল ইসলাম, বাঘা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল লতিফ মিঞা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন, বীর মুক্তি যোদ্ধা শফিউর রহমান শফি , শিক্ষক বাবুল ইসলাম, বাঘা প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক নুরুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা উপস্থিত হয়ে তাঁদের প্রিয় শিক্ষকের অবদানের কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রিয় শিক্ষককে স্বরণ করেন তার ভাগিনা কলেজ শিক্ষক আকতার বানু,বোন নাজমা আলম।
আলোচনা শেষে দোয়া ও তাবারক বিতরণ করা হয়।
এই বিভাগের আরও খবর....