নোয়াখালীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উৎসব। মায়ের বিদায় বেলায় দশমীর সকালে পুষ্পাঞ্জলি গ্রহণ করেছেন নোয়াখালীর হিন্দুপ্রাণ মানুষ। সকাল থেকে পুষ্পাঞ্জলি নেয়ার পাশাপাশি মায়ের প্রতিমা দর্শন করতে পূজা মন্ডপে হিন্দুপ্রাণ ভক্তবৃন্দরা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দূর্গা ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে।পরের বছর শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে, যাহা তার বাবার গৃহ। হিন্দু রীতিতে ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে এ উৎসবের সূচনা হয় এবং দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হলো।
করোনা মহামারীর পর বিগত বছরে কুমিল্লার নানুয়ার দীঘিরপাড় পূজা মন্ডপে হনুমান মুর্তির কোলের উপর মুসলমানের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফ রেখে ইসলাম ধর্ম অবমাননার জেরে পুরো দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতিবাদ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হয়।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর চৌমুহনীর ইসকন মন্দির, জিউর মন্দির সহ অন্যান্য জায়গায় হিন্দুদের চলমান পূজার মন্ডপে সাম্প্রদায়িক হামলা এবং হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষে বেশকিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নোয়াখালীর চৌমুহনীতে গত বছর ইসকন মন্দির, জিউর মন্দির সহ অন্যান্য মন্দিরে হামলার ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখে এবছর অপ্রীতিকর ঘটনা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এড়াতে নোয়াখালীর বর্তমান পুলিশ সুপার জনাব মোঃ শহিদুল ইসলাম পিপিএম এর সার্বিক নির্দেশনায় এবং বিচক্ষণ পরিচালনায় কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়ায় শান্তিপূর্নভাবে পালন করা হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার জনাব মোঃ শহিদুল ইসলাম পিপিএম এই বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে তাদের সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা সকল প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ আন্তরিকতার সহিত মাঠে আছে এবং পুলিশের একাধিক চৌকস টিম, গোয়েন্দা নজরদারী সহ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এলাকায় এবং সদর এলাকায় প্রায় ৪৯টি নতুন অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে, যাহা বেগমগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মীর জাহিদুল হক রনি এবং সুধারাম মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন করছেন। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্য’গন ও নিরলস দায়িত্ব পালন করছেন।
আজ বুধবার (০৫ অক্টোবর) বিকাল ০৩.০০ ঘটিকার সময় ১।নোয়াখালী দেবালয়, মাইজদী, ২। শ্রী শ্রী রাম ঠাকুরের জন্মোৎসব মন্দির, মাইজদী বাজার, নোয়াখালী, ৩। শ্রী শ্রী রাধামাধব জিউর মন্দির, ব্যাংক রোড, চৌমুহনী, ৪। শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর আশ্রম, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী, ৫। সংচাইল খন্ডেসরি মন্দির, হাতিয়া, ৭। শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির, কোম্পানীঞ্জ, নোয়াখালী, ৮। গৌর নিতাই সেবাশ্রম, কবিরহাট সহ অন্যান্য পূজা মন্ডপ হতে দেবীকে বিদায় জানিয়ে স্থানীয় খালপাড় এবং নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের মেঘনা নদীতে নিয়ে তাদের প্রতিমা বিসর্জন করেন।
নোয়াখালীর চৌমুহনীর দেবালয় পূজা কমিটি, শ্রী শ্রী রাধামাধব জিউর মন্দির এর সভাপতি শ্রী নিত্যনন্দ সাহা সাংবাদিকদের বলেন, “ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে আমাদের এই উৎসবের সূচনা হয়, আজ দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। আজ আমাদের আনন্দের দিন, আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সকলের মঙ্গল কামনা করি এবং সবাইকে শুভেচ্ছা জানায়”
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলা প্রশাসন নোয়াখালী সদর ও বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন জনাব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, জেলা প্রশাসক নোয়াখালী; জনাব আবু ইউসুফ, উপ পরিচালক, স্থানীয় সরকার; জনাব ইসরাত সাদমীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক); জনাব নাজিমুল হায়দার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট; জনাব শামসুন নাহার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বেগমগঞ্জ; জনাব নিজাম উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদর, নোয়াখালী; জনাব মোঃ বায়েজীদ-বিন-আখন্দ, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সদর, নোয়াখালী ; জনাব আসিফ আল জিনাত, সহকারী কমিশনার (ভূমি), বেগমগঞ্জ। জেলা প্রশাসক জনাব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান এসময় বিভিন্ন মণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং সকলের সাথে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তিনি আরো জানান এ বছর নোয়াখালীতে ছোট বড় সর্বমোট ১৮৮টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হয়েছে।