লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দিনে দুপুরে রবিউল ইসলাম নামে এক গ্রাম পুলিশকে (চৌকিদার) মারধর করে উদ্ধারকৃত মাদক ফেন্সিডিল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জাহেদুল ইসলাম জাহিদ গং এর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম শুক্রবার (২৭ মে) চার জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫-৭ জনের নামে হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৬মে) দুপুরে উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিন জাওরানী এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
এদিকে থানায় অভিযোগ দেওয়ার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে পুলিশ অভিযোগটি এখনো নথিভুক্ত করেননি। এমনকি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছিনিয়ে নেওয়া ভারতীয় নিষিদ্ধ মাদক ফেন্সিডিল উদ্ধার করতেও পারে নি পুলিশ।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের উত্তর জাওরানী এলাকার এহসান আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা জাহেদুল ইসলাম জাহিদ, জাহিদের ভাই মামুন, একই এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে জুয়েল ও নরুল ইসলামের ছেলে রুহুল।
এছাড়া জাহেদুল ইসলাম জাহিদ উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের মধ্যম কাদমা এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে। এছাড়া সে ভেলাগুড়ি ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশ হিসেবে কর্মরত আছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্রলীগ নেতা জাহেদুলের ভাই মামুন ও জুয়েল মোটর সাইকেলে করে বস্তা ভর্তি ফেন্সিডিল নিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা কালীগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলেন। গ্রাম পুলিশ রবিউলের উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে মামুন ও জুয়েল মোটরসাইকেলটি ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এ সময় গ্রাম পুলিশ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে রবিউল মোটরসাইকেলে থাকা ব্যাগটি খুললে তার ভিতরে ভারতীয় নিষিদ্ধ মাদক ফেন্সিডিল দেখতে পেয়ে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে ফোন করে জানান।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত মাদকগুলো ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হবে এমতাবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ তার ভাই মামুন ও অভিযুক্ত তার ক্যাডার বাহিনী গ্রাম পুলিশ রবিউলের উপর হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করে উদ্ধারকৃত ফেন্সিডিল ও মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নিয়ে ছটকে পড়ে। পরে স্থানীয়রা ওই গ্রাম পুলিশকে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে গ্রাম পুলিশ রবিউল ইসলাম বলেন, জহিদ ও তার ভাই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারি। আমি বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই এলাকায় যাচ্চিলাম এ সময় জাহিদের ভাই মামুন ও জুয়েল মোটরসাইকেল যোগে আসতেছিলো। আমাকে দেখেই তারা মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়।
আমি স্থানীয়দের উপস্থিতিতে সেই মোটরসাইকেলে থাকা ব্যাগ থেকে ফেন্সিডিল উদ্ধার করে চেয়ারম্যানকে জানাই। এর কিছুক্ষন পর জাহিদ তার ভাই মামুন ও মাদক ব্যবসায়ীরা আমাকে মারধর করে উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেল ও ফেন্সিডিলগুলো নিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আমি বাড়িতে চলে আসি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, বিষয়টি সম্পুর্ণ মিথ্যা। একথা বলেই ফোনটি কেটে দেন।
এ বিষয়ে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেন, এ ঘটনায় গ্রাম পুলিশকে থানায় লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম শাহরিয়ার খান জিহান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। অভিযোগ পেলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, ওই গ্রাম পুলিশ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষটি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।