নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর ইউনিয়নের শংকরভাগ গ্রামের একজন বৃদ্ধার জমি জোরপূর্বক দখল করে, ১২টি মেহগনি গাছ সহ ১৮ টি গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী বলছেন, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ক্রয়কৃত সম্পত্তি দাবি করে ১৩ বছর পরে সর্বমহল ম্যানেজ করেই দখল নিতে চাইছেন আমার জমি। তবে অভিযুক্ত বলছেন, এটি তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃদ্ধার দুই বোন ও দুই ভাই এর সম্পত্তির দুই ভাই ও বোনের মোট তিন জনের সম্পত্তি ক্রয়ের লিখিত স্ট্যাম্প করেন সেখানে জয়গন বেগমের সম্পত্তি বিক্রয় কথা উল্লেখ না থাকলে তার জমিও দখল করেন তিনি।
২০০৯ খ্রিস্টাব্দে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে মৃত তিন ব্যক্তির টিপসই স্বাক্ষরিত মাত্র ২০ হাজার টাকায় কেনা ওই সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
মোছা. জয়গন বেগম জানান, আমরা দুই ভাই দুই বোন। বাবা মারা যাওয়ার পরে ওয়ারিশ সূত্রে সম্পত্তি ভাগ করা হয়নি। নাটোর-বাগাতিপাড়া দয়ারামপুর অঞ্চলিক সড়কের শংকরভাগ বাজারের পাশে রাস্তা সংলগ্ন সাড়ে ৬ শতক জমি আমাদের আছে।
হঠাৎ করেই শোনা যাচ্ছে ২০০৯ সালে আমার ভাইবোনেরা আনোয়ার নামক ওই ব্যক্তির কাছে- জায়গাটি ২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করেছে মর্মে ১৫০ টাকার আমার তিন ভাইবোনের টিপসই দেওয়া একটি স্ট্যাম্প উপস্থাপন করছেন।
আমার অংশের আড়াই শতাংশ জায়গায় আমি মেহগনি গাছ রোপন করেছিলাম, সেই গাছগুলি আজ আনোয়ার সন্ত্রাসী কায়দায় পলান, কুতুবসহ প্রায় পনের বিশ জন ব্যক্তি কেটে নিয়ে যায়। গাছগুলো সংকরভাগ বাজারের স-মিলে বিক্রয় করে দেয়।
ওই মেহগনি গাছগুলো স-মিলে পাশে দেখা যায়। এ সময় আমি বাধা প্রদান করলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আমার শাড়ির আচল ছিঁড়ে যায় এবং আমি আঘাত প্রাপ্ত হই। সুবিচার পেতে আমি স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আনোয়ারের হয়ে কথা বলে।
ভুক্তভোগির ছেলে রুহুল আমিন জানান, “আমার মায়ের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ওই জমিটি বর্তমানে আমাদের দখলে আছে নিচু জায়গা ছিল আমরা মাটি ফেলে উঁচু করেছি এবং একটি ঘর তোলা আছে।
ঘরের পেছনে ১২টি মেহগনি গাছ রোপন করে ছিল আমার মা। আজ আনোয়ারসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও সহযোগীরা কেটে নিয়ে গেছে।”
অভিযুক্ত শ্রম অধিদপ্তরের কর্মচারী আনোয়ার’এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “সাংবাদিকের সাথে আমার কোনো কথা নেই, আমি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেছি।
ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শন করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের উপর স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আপনারা কেন আসছেন চলে যান আপনাদের কে খবর দিল। আমি ক্লান্ত আপনাদের সাথে দেখা করতে পারবো না। আপনারা যা পারেন করেনগা। আমি টাকা দিয়ে জমি কিনেছি আমিতো দখল করবই”।
এ ব্যাপারে বড়হরিশপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আলাউদ্দিন হোসেন জানান, মেহগনি গাছ কর্তন বা জমি দখল সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তবে ইতিপূর্বে শুনেছিলাম শ্রম অধিদপ্তরের কর্মচারী আনোয়ার ওই জায়গাটি কিনেছেন।”
বড়হরিশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুলালুর রহমান জানান, “বৃদ্ধা ‘জয়গন বেগম’ সত্য কথা বলছেন না। এ বিষয়ে মীমাংসার জন্য স্থানীয়ভাবে বহুবার চেষ্টা করা হলেও তারা সালিশে উপস্থিত হয় না।
শ্রম অধিদপ্তরের কর্মচারী আনোয়ার হোসেন ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে ওই জায়গাটি ক্রয় করেন। ক্রয়কৃত জায়গার মধ্যে তিনি নিজেই মেহগনি গাছ রোপণ করেছিলেন। স্থানীয়ভাবে মীমাংসায় ৪২ লিংক জায়গা বৃদ্ধাকে দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসিম আহমেদ বলেন, ‘যদি কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, অন্যায় ভাবে কারো জায়গার গাছ কেটে নেয়, তাহলে তার ক্ষতিপূরণসহ সম্পূর্ণ বিষয় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’