রাজবাড়ীর সোনাপুর পেঁয়াজ হাঁটে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ন! কৃষি পণ্য পরিবহনেও দিতে হয় চাঁদা। ট্রাক প্রতি ১হতে ৩হাজার টাকা চাঁদাবাজদের হাতে দিলে তবেই ট্রাকে পেঁয়াজ লোড করার অনুমতি মিলে , অন্যথায় নয়। হাঁট ইজারাদার ও ট্রাক চালকরা জানান- অবৈধভাবে এ চাঁদা উঠায় ০২ ট্রাক শ্রমিক সমিতি’র নামে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বারের নেতৃত্বাধীন কমিটির সদস্যরা।
রাজবাড়ী জেলার বৃহত্তম পেঁয়াজের হাঁট বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের সোনাপুর বাঁজার। এ বাজার থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয় পেঁয়াজ।
এখান থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসেন দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজ পরিবহনের জন্য আমদানি হয় শত শত ট্রাক। এ পেঁয়াজ পরিবহণকারী প্রত্যেক ট্রাক চালককে চাঁদা দিতে হয় ১ থেকে ৩ হাজার টাকা। যে ট্রাক চালক চাঁদার টাকা দেয় কেবল তাঁরাই পেঁয়াজ পরিবহণ করার সুযোগ পায়। এ ধরনে চাঁদাবাজির ঘটনায় ট্রাক ড্রাইভার, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাক চালকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার (২৬শে মে) দুপুরে সরেজমিনে সোনাপুরের পেঁয়াজ হাটে গিয়ে যায়; বাজারের মধ্যে অনেকগুলো ট্রাক, কয়েকটি ট্রাকে পেঁয়াজ লোড হচ্ছিল। সেই ট্রাক থেকে টাকা থেকে টাকা নিচ্ছিল কয়েকজন লোক। তখন এ প্রতিবেদক তাদেরকে প্রশ্ন করার সাথেই সটকে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বারের নেতৃত্বেই চাঁতার টাকা উঠানো হয়।
সোনাপুর থেকে ভৈরভগামী (ঢাকা মেট্রো -ভ) ট্রাক চালক মুন্নাফ জানান, পাঁচ বছর ধরে এই সোনাপুর বাজার থেকে ট্রাকে পেঁয়াজ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাই। আজকে যাচ্ছি ভৈরভ। দুঃখের বিষয় হলো, ট্রাক সমিতির নামে চাঁদার টাকা দিয়ে টিপ মারতে হয়, টাকা নেয় কিন্তু কোন রশিদ দেয় না।
ট্রাক চালক খন্দকার সুজন জানান, ৮শত থেকে ১২শত টাকা দিতে হয় ট্রাক প্রতি। আমরা গরীব মানুষ ট্রাক চালায়ে খাই বলে আমাদের উপর এটা জুলুম করা হচ্ছে, এই টাকা যদি না দেওয়া লাগতো আমাদের অনেক উপকার হতো।
ট্রাক চালক আরিফুল ইসলাম ও শাকিল বলেন, ট্রাক প্রতি ১ থেকে ২হাজার টাকা অফিসে না দিলে গাড়িতে পেঁয়াজ-ই উঠবেনা।
স্থানীয় ট্রাক চালক মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস মধু জানান, আমার নিজস্ব একটা ট্রাক আছে। আমি আগে এখান থেকে পেঁয়াজ বহণ করতাম। আমার কাছে ৩ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়, না দেওয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বার, আকশ, হিরু আমাকে মারধর করে। এ নিয়ে ১০ই মার্চ ২৪ তারিখে আমি কালুখালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। বছর দুয়েক হলো ওরা আমাকে এখান থেকে পেঁয়াজ নিতে দেয়না।
স্থানীয় আক্তার ড্রাইভার বলেন, আমার নিজস্ব ২টা ট্রাক আছে। এ বাজারে আসলে ভাড়া পাই আর না পাই, আগে ওদের টাকা দিতে হবে। এ নিয়ে কোন কথা বললে আমাদের উপর তারা চড়াও হয়, এর পর থেকে আমি বাইরের মালামাল পরিবহণ করি। কারা এ টাকা উঠায়? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে আক্তার ড্রাইভার বলেন, ০২ট্রাক সমিতি নামে স্থানীয়রা চাঁদাবাজি করছে।
এ বিষয়ে, সোনাপুর বাজারের ইজারাদার ও নবাবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, প্রতিটি ট্রাক থেকে ২-৩ হাজার টাকা নিয়ে চালকদের হয়রানী করা হয়, স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বারসহ কয়েকজন এখানে ট্রাক চালকদের জিম্মি করে টাকা নেয়। আমি বাজারের ইজারাদার ওরা আমাকেও বিষয়টি জানায়নি। তাদের একটা সংগঠন ছিলো ০২ ট্রাক সমিতি যা গত বৈশাখ মাসে মেয়াদ শেষ। ওরা কিসের ভিত্তিতে টাকা নিচ্ছে জানিনা। ট্রাক চালকদের থেকে এভাবে চাঁদাবাজি ফলে সোনাপুর বাজারের ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। আমি চাই এ সকল চাঁদাবাজি বন্ধ করা হোক।
এ ব্যপারে মাঝবাড়ীর খায়রুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি ট্রাক থেকে ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বার তার লোকজন দিয়ে ২-৩ হাজার টাকা আদায় করে। এর আগে টাকা না দেওয়ায় কয়েকজন ট্রাক চালককে মারধর করেছে। এ নিয়ে স্থানীয় আতিয়ারের দোকানে শালিস হয়েছে। এরপর থেকে এই ট্রাক চালকেরা এ বাজারে আর আসেন না। এরকম চাঁদাবাজি হলে সোনাপুর বাজারের ঐতিহ্য হারাবে। তিনি আরও বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে প্রশাসনকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আমরা চাই এই চাঁদাবাজি বন্ধ
করা হোক।
এদিকে, চাঁদার টাকা উত্তোলনকারী হিরু বিশ্বাস জানান, ০২ ট্রাক সমিতির নামে টাকা উত্তোলন করা হয়। ট্রাক প্রতি ৫শত থেকে ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়, এর বেশি নেওয়া হয় না । যারা বেশি টাকা নেওয়ার কথা বলছে তারা মিথ্যা বলছে।
যার নেতৃত্বে এই চাঁদা কাদা আদায় হয়, সেই ইউপি সদস্য হাবিল মেম্বারে সাথে তার অফিসে বসে কথা হলে, তিনি তার মোবাইল থেকে ০২ ট্রাক শ্রমিক সমিতির একটি কমিটির তালিকা দেখান। যেখানে উপদেষ্টা রয়েছেন হাবিল মেম্বারসহ ১৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নামের তালিকা।
এ চাঁদাবাজির ব্যাপারে কথা হয় রাজবাড়ী জেলা ০২ ট্রাক শ্রমিক সমিতির সহ-সভাপতি হাশেমের সাথে তিনি বলেন, সোনাপুরে ট্রাক সমিতি’র নামে যে চাঁদা উঠানো হচ্ছে তা অবৈধ। কারন দাদা উঠানোর জন্য আমরা কোন অনুমতি দেইনি, তাছাড়া তাদের কমিটি বছর খানেক আগেই মেয়াদ উত্তীর্ন হয়ে গেছে।
স্থানীয়সূত্রে জানাগেছে, রাজবাড়ীর এ সোনাপুর বাজারে সপ্তাহে ৩ দিন (রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার) বসে পেঁয়াজের হাট। পেঁয়াজের আড়ৎদার রয়েছেন ৭০/৮০ জন। প্রতি হাটে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হয় ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পেঁয়াজ। গড়ে ১০০ ট্রাক থেকে নিম্নে ১ হাজার টাকা করে আদায় হলে পরিমান দাঁড়ায় ১লক্ষ টাকা। সাপ্তাহে ৩ হাটে চাঁদা উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়ায় সর্বনিম্ন ৩ লক্ষ টাকা।
এই বিভাগের আরও খবর....