বরগুনার আমতলী উপজেলার ৭টি ইটভাটায় করাতকল বসিয়ে কাঠ কেটে ইট পোড়াচ্ছেন ভাটার মালিকরা। এতে গ্রাম ও বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সাবাড় হয়ে যাচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে পরিবেশ। ইটভাটার কালো ধোয়ায় পরিবেশ দুষিত হয়ে গাছপালা মরে যাচ্ছে।
ইটভাটা সংলগ্ন গ্রামেগুলোতে বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পরেছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পরেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগের লোকজন ম্যানেজ করে এভাবে ইটভাটায় করাতকল বসিয়ে কাঠ কেটে ইট পোড়াচ্ছেন ভাটার মালিকরা।
তাদের আরো অভিযোগ প্রশাসনের চোখের সামনেই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে তারাতো কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? উল্টো বিভিন্ন দিবসের নামে তারা ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় সাতটি ইউনিয়নে ২২ টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে এডিবি, মৃধা, ফাইভ স্টার, এমকেএস, এইচআরটি, এসএসবি ও এমসিকে নামের ৭ টি ড্রাম চিমনী ইটভাটা। এ ইটভাটাগুলোতে কাঠ দিয়ে অবৈধভাবে ইট পুড়ে আসছে।
এ ইটভাটার মালিকরা পরিবেশ নিয়ন্ত্রন আইন অমান্য করে করাতকল বসিয়ে গ্রাম ও বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এনে করাতকলে কেটে ইটভাটায় পোড়াচ্ছেন। এতে সাবাড় হয়ে যাচ্ছে গ্রাম ও বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। বিঘিœত হচ্ছে পরিবেশ।
ইটভাটার কালো ধোয়ায় পরিবেশ দুষিত হয়ে গাছপালা মরে যাচ্ছে। ইটভাটা সংলগ্ন গ্রামগুলোতে বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পরেছে বলে দাবী করেন স্থানীয়রা। প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগের লোকজন ম্যানেজ করে এভাবে ইটভাটায় করাতকল বসিয়ে কাঠ কেটে ইট পোড়াচ্ছেন ভাটার মালিকরা।
তাদের আরো অভিযোগ, প্রশাসনের চোখের সামনেই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে তারাতো কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? উল্টো বিভিন্ন দিবসের নামে তারা ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে। এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পরেছে।
এদিকে গত ১৭ জানুয়ারী ওই ইট ভাটাগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হক পরিদর্শন শেষে প্রত্যেক ইটভাটার মালিককে দুই লক্ষ টাকা করে ১৪ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড করেন এবং একই সাথে ইটভাটাগুলো বন্ধের নির্দেশ দেন।
কিন্তু ভ্রাম্যমান আদালতের অর্থদন্ড ও বন্ধের নির্দেশনার ১ ঘন্টা পরে মালিকরা ইটভাটাগুলো পুনরায় চালু করে। এতে এলাকাবাসীর মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা দ্রুত স্থায়ীভাবে ইটভাটাগুলো বন্ধের দাবী জানিয়েছেন।
ই্ট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩ সালের ৬ ধারায় উল্লেখ আছে কোন ব্যাক্তি ই্টভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোন জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবে না। এ ধারা লংঘণ করে ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ পোড়ালে অনধিক তিন বৎসরের কারাদন্ড বা অনধিক তিন লক্ষ টাকা অর্থদন্ত ও উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইনের ৮ ধারায় আরো উল্লেখ আছে আবাসিক, সংরক্ষিত বা বানিজ্যিক এলাকা ও কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করতে পারিবে না। এ ধারা লংঘন করে ইটভাটা স্থাপন করলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
কিন্তু ইটভাটার মালিকরা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগের লোকজনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে ইটভাটা স্থাপন করে ইট পোড়াচ্ছেন। কাঠ পোড়ানোর আইন অমান্য করে ভাটায় ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে করাতকল।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রায়বালা এলাকায় এডিবি, মৃধা, ফাইভ স্টার, চন্দ্রা এলাকায় এমকেএস, এইচআরটি, এসএসবি ও মহিষডাঙ্গা গ্রামে এমসিকে নামের ৭ টি ড্রাম চিমনী ইটভাটার মালিকরা আইন ভেঙ্গে ভাটায় ভেতরে করাতকল স্থাপন করে কাঠ চেরাই করছে। ইটভাটায় কালো ধোয়ায় এলাকা গাছপালা কালচে হয়ে গেছে। গ্রামগুলোতে মানুষের বসবাসের অনুযোযোগী হয়ে পরেছে। দেদারছে করাতকলে কাঠ কেটে ই্টভাটায় পোড়াচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটার কয়েকজন শ্রমিক বলেন, প্রশাসন কি করবে? প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের লোকজন এসে টাকা নিয়ে যায়। তাদের টাকা দিলে কোন কিছুরই প্রয়োজন হয় না। তারা আরো বলেন প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ ব্যবস্থা নিলে ইটভাটাগুলোতে এভাবে কেউ কাঠ পোড়াতে পারে না।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা ও কাউনিয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ইটভাটার মধ্যে করাতকল বসিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ইটভাটায় পোড়াচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোয়ায় বাড়ীতে বসবস করতে সমস্যা হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, অবৈধভাবে এভাবে ইট পোড়ালেও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিভিন্ন দপ্তর থেকে লোকজন এসে টাকা নিয়ে চলে যায়। এ ইটভাটাগুলো বন্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোন কাজ হয় না।
রায়বালা গ্রামের ফাইভস্টার ইট ভাটার মালিক মোঃ মধু প্যাদা ইটভাটায় করাতকল বসানোর কথা স্বীকার করে বলেন, প্রশাসনের লোকজন করাতকল সরানোর নির্দেশ দিলেও ইট পোড়ানোর প্রয়োজনে সরাচ্ছি না। তাহলে প্রশাসনের চেয়ে আপনী (মধু প্যাদা) শক্তিশালী এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
আমতলী বন কর্মকর্তা ফিরোজ আলম বলেন, ইটভাটায় করাতকল বসিয়ে কাঠ চেরাই কন্যা সম্পুর্ন বে-আইনী। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, অবৈধভাবে ড্রাম চিমনি ইটভাটাতে করাতকল বসিয়ে কাঠ চেরাই করা বে-আইনী। দ্রুত ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বরগুনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিযুষ চন্দ্র দে বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।