পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অপরিকল্পিত ভাবে খাল খনন করায় রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা গ্রামের খালের ওপর নির্মিত ব্রিজের মাঝের অংশ দেবে গেছে। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। যদিও নভেম্বর থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে বলে প্রশাসন। তবে জড়াজীর্ণ এ ব্রিজের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধের স্থায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্বাভাবিক ভাবেই চলাচল করছে ।এতে যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজবাড়ী জেলা কার্যালয় জানায়, ৬৪জেলার খাল খনন প্রকল্পের আওতায় গোয়ালন্দ-রাজবাড়ী-ফরিদপুরের ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘের খাল খনন প্রকল্পের কাজ ২০১৮-২০১৯ থেকে শুরু করে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে শেষ হয়। প্রায় ২৫ ফুট চওড়া এবং ৪ ফুট গভীর খাল খনন কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পাউবো রাজবাড়ীর তত্বাবধানে তেনাপচা পদ্মা নদী হতে ছোটভাকলা ইউপির কেউটিল হয়ে ফরিদপুর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘের কাজটি করে ঢাকার মতিঝিল টিটিএসএল-এসআর নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকায় ছিল প্রায় ১১ কিলোমিটার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০২-২০০৩ অর্থ বছরে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে তেনাপচা খালের ওপর প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যায়ে ১২ মিটার দৈর্ঘের ২ ভেন্ট বক্স কালভার্ট বা ছোট ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। তেনাপচা আশ্রয়ন ইউজেড-আরএইচডি (পিয়ার আলী মোড়) এলজিইডি সড়কের ৫২৩ মিটার চেইনেজে অবস্থিত এ ব্রিজটি।
স্থানীয় মো. কাশেম শেখ বলেন, খালের পাড় ভেঙে যাওয়ায় আমাদের ঘর-বাড়ি এখানে থাকছেনা। কয়েক মাস ধরে খাল পাড়ে কাজ শুরু হলেও তেমন কোন গতি দেখছিনা। কিছুদিনের মধ্যে আবার এই খালে পানি আসবে। তার আগে কাজ শেষ না করলে ঘর-বাড়ি আর কিছুই থাকবেনা।
দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে প্রচন্ড বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পাশের মাটি ধ্বসে ব্রিজটি দেবে গেছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই ভারী যানবাহন চলাচল সম্পর্ণ বন্ধ রয়েছে। হালকা যান ও পথচারী চলাচল অব্যাহত থাকায় যে কোন মুহুর্তে ব্রিজটি সম্পূর্ণ ভেঙে নিচে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অপরিকল্পিত খাল খননে ছোটভাকলা ইউপির আজিজ মাষ্টারের বাড়ি থেকে তেনাপচা পর্যন্ত ৩কিলোমিটার খালের দুই পাড় ধ্বসে গেছে। খাল পাড়ে যাদের বাড়ি রয়েছে তাঁরা ঝুঁকিতে আছে। পাউবো’র জরুরি সংস্কার হিসেবে খালের দুই পাশে প্যালাসাইডিং করছেন। প্যালাসাইডিং হলেও বর্ষার পানি প্রবেশ করলে জড়াজীর্ণ ব্রিজটি থাকবেনা। ব্রিজ ধ্বসে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
পাউবো দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী ইকবাল সরদার বলেন, খালের উভয় পাশে বাড়িসহ স্থাপনা থাকায় সিডিউল অনুযায়ী খনন সম্ভব হয়নি। খাল অনুযায়ী ব্রিজটি সঠিকমাপে করা হয়নি বলে পানি প্রবাহের চাপে ব্রিজের কয়েকটি স্থান ধ্বসে গেছে। স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার্থে দুটি গ্রুপের প্যালাইসাডিং কাজ চলছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু সাঈদ মন্ডল বলেন, ব্রিজটি ৫০ বছরেও কিছু হতোনা। অপরিকল্পিত খাল খননে মাটি ধ্বসে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমরা ১২ মিটারের বেশি ব্রিজ করতে পারিনা। খালটি অনেক প্রসস্থ্য হওয়ায় আমাদের কালভার্ট বা ব্রিজ করার বাস্তবতা নেই। এখন এলজিইডি থেকেই ব্রিজ করতে হবে।
উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, ব্রিজটি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের। উভয় পাশে এলজিইডির কার্পেটিং পাকা সড়ক রয়েছে। খাল খননের কারনে সড়কের অনেক স্থানে ধ্বসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। খালে প্রায় সাড়ে ৫মিটার চওড়া এবং ৩০ মিটার দৈর্ঘের একটি ব্রিজ নির্মাণ করা দরকার।
এই বিভাগের আরও খবর....