রাজশাহীর তানোরে নীতিমালা লঙ্ঘন, পুকুর ভরাট ও গভীর নলকুপের স্কীমভুক্ত চারফসলি জমিতে হিমাগার নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, এক সময়ের বিএনপির দাপুটে নেতা রাজশাহীর আলোচিত ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান ও ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন মেসার্স রহমান গ্রুপ এই হিমাগার নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। ইতমধ্যে আড়াদীঘি ও দেবীপুর গভীর নলকুপ স্কীমের প্রায় ৫০ বিঘা চারফসলি কৃষি জমি ধ্বংস করে তারা দুটি কোল্ডস্টোর (হিমাগার) নির্মাণ করেছেন। এবার পুকুর ভরাট ও কৃষি জমি ধ্বংস করে হিমাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় সুত্র জানায়, তারা তথ্য গোপণ করে হিমাগার নির্মাণের অনুমতি নিয়েছেন, তদন্ত করলে তার সত্যতা পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, তানোর-রাজশাহী আঞ্চলিক সড়কের মাসিন্দা প্রায় তিন একর আয়তনের পুকুর ভরাট, পুকুর পাড়ের গভীর নলকুপের স্কীমভুক্ত কৃষি জমি ও বিভিন্ন প্রজাতির তাজা গাছ ধ্বংস এবং মাসিন্দা মহল্লায় প্রবেশের রাস্তার কিছু অংশ দখল করে হিমাগার নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিএনপি নেতার এমন অদৃশ্যে ক্ষমতার জোর সবাইকে হতবাক করেছে। অন্যদিকে কারা পুকুর ভরাট করে হিমাগার নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন সেটিও তদন্তের দাবি করেছেন সচেতন মহল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাসিন্দা হালদারপাড়া মহল্লার একাধিক বাসিন্দা বলেন, তাদের মহল্লার মানুষ এই পুকুরে গবাদিপশু গোসল করানো ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করতো, পুকুর ভরাট করা হলে তারা চরম বিপাকে পড়বেন।এছাড়াও আবাসিক এলাকায় হিমাগার হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
অথচ একফসলি জমিতে পুকুর খননের অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জেল-জরিমানা করা হয়। কিন্ত্ত পুকুর ভরাট ও গভীর নলকুপ স্কীমের চারফসলি জমি নস্ট করে একের পর এক হিমাগার নির্মাণ করা হলেও এবিষয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে সাধারণের মনে প্রশ্ন উঠেছে, আসলে কি ? একদেশে ভিন্ন আইন ? না কি ? আইন এসব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, খাল ও লেক ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও (২০১০ সালে সংশোধিত) যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে তাদের দেখাদেখি অন্যরাও সরকারি পুকুর ভরাটে উৎসাহী হবে। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) তানোর উপজেলা শাখার সভাপতি মফিজ উদ্দিন বলেন, মুক্ত জলাশয় উদ্ধার করা না গেলে পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটবে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এলাকায় শিল্পায়ন হোক সেটা তারাও চাই, তাই বলে শিল্পায়নের নামে (ভাতের থালায় লাথি)
চারফসলি জমি নস্ট বা পুকুর ভরাটের করে নয়। প্রয়োজনে পতিত বা একফসলি জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হোক।
তারা আরো বলেন, এখনই এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামিতে এই এলাকায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আবার যেসব জমিতে চারটি ফসল উৎপাদনের জন্য বিএমডিএ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গভীর নলকুপ স্থাপন করেছেন, এখন সেসব জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে কার স্বার্থে।
বিশিষ্টজনেরা বলছে, দেশের প্রধান মন্ত্রী এবং উচ্চ আদালতের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে পুকুর-জলাশয় ভরাট বা কোনো কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে সেখানে কোনো স্থাপনা বা কল-কারখানা নির্মাণ করা যাবে না। অথচ প্রধান মন্ত্রী ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার ব্যত্তয় ঘটিয়ে এমন কাজ অবশ্যই অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে।
এসব ঘটনায় কৃষকেরা গুমরে কাঁদলেও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হিমাগারের জিএম আব্দুল হালিম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা শিল্প প্রতিষ্ঠান করার জন মাসিন্দা ২৬ বিঘা জমি কিনেছেন। তিনি বলেন, সকল নিয়মনীতি অনুসরণ করে হিমাগার নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পুকুর ভরাট বা কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে সেখানে কারখানা নির্মাণ করা যাবে না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা রয়েছে, তাহলে তারা কি ভাবে ফসলি জমি নস্ট করে সেখানে হিমাগার নির্মাণ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষি জমিতে কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এখানে সমস্যা কি।এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন বা পুকুর ভরাট করে সেখানে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না এমন আইন আছে।
এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও মুঠোফোনে কল গ্রহণ না করায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও (চলতি দায়িত্ব) আবিদা সিফাতের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে বিএমডিএ’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন,গভীর নলকুপের স্কীমভুক্ত ফসলি ধ্বংস করে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা অত্যন্ত দুঃখজনক, এর ফলে অদুর ভবিষ্যতে এলাকায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
এই বিভাগের আরও খবর....