রাজশাহীর বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্যসেবায় দেশের মডেল। চিকিৎসার মান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার চিকিৎসা খাতকে গুরুত্ব দেওয়ায় এর সুফল পাচ্ছে উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি ইতিমধ্যেই স্থানীয় এলাকাবাসীর আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।বাঘায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৩-৪ লক্ষ মানুষের বসবাস।সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন প্রায় ৬০০-৭০০ মানুষ এখানে সেবা নিতে আসে। জরুরী বিভাগেও রোগীর সংখ্যা ২০০জনের মত।এই অতিরিক্ত রোগীর চাপ ও নানাবিধ প্রতিকূলতা কাটিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে হাসপাতালটির সেবার চিত্র বদলে দেয়ার নেপথ্য রয়েছে হাসপাতালটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আশাদুজ্জামান আসাদ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা নিয়ে অতীতে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন থাকলেও সেই অবস্থার এখন অনেকটা পরিবর্তন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আসাদুজ্জামান এখানে যোগদানের পর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে সবাই যাতে ভালো পরিবেশ পান,সেই ব্যাপারে তিনি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে থাকেন।যোগদানের পর প্রথমেই তিনি হাসপাতালের ভিতর-বাহিরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতালের কর্মকর্তা/কর্মচারী যাতে সুশৃঙ্খল পরিবেশে নিজ নিজ কর্ম সঠিকভাবে পালন করেন সেব্যাপারে সচেষ্ট হন। চিকিৎসা সেবার মান ভালো করার লক্ষ্যে হাসপাতালে রোগীর সেবায় নিয়োজিতরা ও অন্যান্য কর্মকর্তা/কর্মচারী তাদের কাজকর্মে ফাঁকি না দিতে পারেন তার জন্য তিনি নিবিড় মনিটরিং করেন এবং নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকুলতার মধ্যেও অল্প সময়ের মধ্যে এখানে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে তিনি ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। তিনি জরুরী বিভাগে চালু করেছেন ইসিজি ও আরবিএস পরীক্ষা। দীঘ ২৯ বছর পর তিনি চালু করেছেন অপারেশন থিয়েটার,এখানে নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন সহ ছোট খাটো অপারেশন হয়ে থাকে।কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রামে করোনা টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গণটিকা প্রদান কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পে প্রথম ও ২য় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে ৭০ শতাংশ। ৩য় ও চতুর্থ ডোজে টিকা দেওয়া হযেছে ৫০ শতাংশ। মাধ্যমিকের সকল ও প্রাথমিক স্কুল শাখার (৫-১১) বছরের শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে সম্পর্ণ করা হয়েছে।
বৃহষ্প্রতিবার (৯ নভেম্বর)সকালে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতেই চোখে পড়ল পরিষ্কার পরিছন্ন পরিবেশ। ড্রেনগুলোও পরিষ্কার। ময়লার ভাগাড় এখন ফুলের বাগান। ভবনের সামনে এমন বাগান করা হয়েছে।উৎকট গন্ধের বদলে বাতাসে ভেসে আসে ফুলের সুবাস। মূল ফটক থেকে ভবনের সামনের চত্বর পর্যন্ত সারি সারি পাতা বাহারের গাছ।ভবনে ঢুকতেই টিকিট কাউন্টার।সামনে সেবাপ্রত্যাশী মানুষের ভিড়। টিকিট বিক্রেতার দম ফেলার ফুরসত নেই।
বেশ কিছু রোগীরা জানান, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ডিজিটাল এক্স-রে হাসপাতালেই করাতে পেরেছেন।ওষুধপত্র ও হাসপাতাল থেকে পেয়েছেন। শৌচাগারও পরিচ্ছন্ন। সেবার প্রশংসা করলেন ভ্যান চালক জসিম উদ্দিন, তিনি বলেন,চিকিৎসক ও নার্সরা নিয়মিত আমার খোঁজখবর নিচ্ছেন। সবচেয়ে ভালো লেগেছে হাসপাতালের দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশ।’ এখানে বেসরকারি হাসপাতালের মতোই সেবা পেয়ে প্রশংসা করলেন আরও অনেকে। হাসপাতালে দালালদের দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। নেই ওষুধ কোম্পানির লোকজনের অবাধ উপস্থিতিও। গোটা হাসপাতাল এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যসেবা ও তাদের সার্বক্ষনিক খোজ-খবর নেওয়ার ক্ষেত্রেও এই হাসপাতাল থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অনেক আন্তরিক। এখানে প্রতি মাসে গড়ে ৫০-৬০ টা নরমাল ডেলিভারী ও ১৫-২০ টা সিজার করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আশাদুজ্জামান বলেন,গত এক বছর আগে এখানে যোগদানের পর নিজ উদ্যোগে আইপিএস ব্যবস্থা করেছি। অপারেশন থিয়েটার চালু হয়েছে এবং অপারেশন থিয়েটারে এসি দেওয়া হয়েছে।
মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (সংসদ সদস্য, বাঘা-চারঘাট) আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলমের অনুপ্রেরণা,সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনায় পুরো কার্যক্রমটি আরও বেগবান হয়েছে। সার্বিক দিক-নির্দেশনায় নেপথ্যে রয়েছেন সুযোগ্য সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আবু সাঈদ ফারুক।
ডাঃ আসাদুজ্জামান আরো বলেন,বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমরা স্বাস্থ্যকর্মীরা বদ্ধ পরিকর।