খুলনার পাইকগাছায় কিশোর গ্যাং এর দাপটে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কিশোর গ্যাং শব্দটি এখন বহুল আলোচিত। সারা দেশের ন্যায় উপজেলায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পৌরসদর, কপিলমুনি, বাঁকা, চাঁদখালী, গদাইপুর এলাকায় এদের দৌরত্ব বেড়েই চলেছে।
কিশোর গ্যাং উপজেলার সদর ইউনিয়ান গদাইপুরের ফুটবল খেলার মাঠ হতে বোয়ালিয়া মোড় এর মধ্যে কয়েক দিন পরপর তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মারামারি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করে মহাউৎসাবে তাদের পেশীশক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছে। এই কিশোরেরা শুধু নিজেদের বলে বলীয়ান হয়ে কু-কর্মগুলো সংঘটিত করছে না। এরা কারও না কারও ছত্রছায়ায় পালিত হচ্ছে। নইলে হঠাৎ করে কোনো মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কেটে পড়ার সুযোগ পায় কী করে? বেশির ভাগ ঘটনা আইনের আওতায় আসছে না।
এ নিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে দু-চিন্তা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। উপজেলার বোয়ালিয়ার মোড়ের পাশে শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ভোলানাথ সুখদা সুন্দরী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও গদাইপুর টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ শুরু ও ছুটির শেষে বিনা প্রয়োজনে এলাকার কিছু উশৃঙ্খল ছেলে স্কুল ছাত্রীদের পিছু নেওয়া ও পরোক্ষ ভাবে ইভটিজিং এর মতো আচারণ ও মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও ধারন করায় ছাত্রীরা চরম বিব্রতবোধের পাশাপাশি নিরাপত্তহীনতায় স্কুলে আসাযাওয়া করছে।
সম্প্রতি ভোলানাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে দুপুর বেলায় কাঠের গুড়ির উপরে কেক কেটে এক কিশোর গ্যাং এর সদস্যের জন্মদিন পালন করা নিয়ে তান্ডব সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের মধ্যে রং ছিটানো ও পথচারীদের রং মাখানো ঘটনা দেখা গিয়েছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার এ কিশোর গ্যাং তাদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শহীদ জিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অঞ্জলী রানী শীল বলেন, কয়েক দিন আগে আমাদের স্কুলের মেয়েদের ক্লাস রুমের টিনের চালে ঢিল ছুড়ে মারে ও প্রাচীরের উপরে উঠে উকিঝুকি মারতে থাকে কিছু উশৃঙ্খল ছেলেরা। এ সময় বিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারীরা এগিয়ে গেলে তারা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। স্কুল চলাকালিন সময়ে স্কুল গেটের পাশে বিনাপ্রয়োজনে কিছু ছেলেদেরকে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
ভোলানাথ সুখদা সুন্দরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামান সরদার জানান, সম্প্রতি এলাকার কিছু ছেলের আচারন এতোটা খারাপ হয়েছে যে, তারা শিক্ষককে কটাক্ষ করে কথা বলছে। স্কুলের আশেপাশে তারা বিনাপ্রয়োজনে আড্ডা জমাচ্ছে। সম্প্রতি এদের একটি জন্মদিন পালন নিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে উশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে থানা পুলিশকে জানানো হয়।
পুলিশ তাদের আটক করে বিদ্যালয়ের অফিসে আনার পর তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন কর্মকান্ড করবে না মর্মে তাদের অভিভাবকদের মুচলেকা নিয়ে প্রথম বারের মত ছেড়ে দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষায় শিক্ষক ও অভিভাবক সদস্য সম্মিলিত চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেন, বর্তমানে কিশোর অপরাধ দিন যত যাচ্ছে তাদের অপরাধগুলো ক্রমেই হিংস্র, নৃশংস ও বিভীষিকাময়রূপে দেখা দিচ্ছে। মাদক, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো হিংস্র ধরনের অপরাধ করার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। কিশোর অপরাধ আগেও ছিলো তবে এখনো বেড়েই চলেছে। সংঘবদ্ধভাবে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে। এখনই এর লাগাম টেনে ধরা দরকার। তা-না হলে পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষার লক্ষ্যে ভবিষ্যতে এটি খূব ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
পাইকগাছা থানার ওসি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, কিশোর গ্যাং এর অপরাধ কর্মকান্ড প্রতিরোধে থানা পুলিশ তৎপর রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে বিনাপ্রয়োজনে কোন ছেলে ঘোরাফেরা করলে তাদেরকে আটক করা হবে এবং পুলিশের নজদারী বাড়ানো হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা নির্ভিঘ্নে স্কুল আসাযাওয়ার করতে পারে তার জন্য পুলিশের টহল বাড়ানোর জন্য দাবী করেছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা।