রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে গরুর হাট ইজারায় সরকারী নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনিয়মের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে ইজারা প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডলের বিরুদ্ধে।
কাঙ্খিত মূল্যের চেয়েও কম মূল্যে অসদ উপায়ে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে হাট ইজারা প্রদান করায় সর্বোচ্চ দরদাতা ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারে নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার ( ৫ জুন ) সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছেন রাজবাড়ীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান রিপন।
অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে গত ১ ফেব্রুয়ারী বাংলা ১৪৩০ সনের জন্য রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার গরুর হাট ইজারার জন্য দরপত্র আহব্বান করা হয়। দরপত্রে গরুর হাটের সরকারি কাঙ্খিত মূল্য দেয়া হয় ২৭ লক্ষ ৪ হাজার টাকা। গরুর হাট ইজারার জন্য মোট তিনটি দরপত্র জমা পড়ে। তিনটি দরপত্রের মধ্যে মন্ডল ট্রেডার্স সর্বোচ্চ দরদাতা ডাকমূল্য ২৯ লক্ষ টাকা, মৌ এন্টার প্রাইজ ২৭ লক্ষ ১৫ হাজার ৩শ ৭৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন দরদাতা জাকির হোসেন ২৬ লক্ষ এক হাজার টাকা হিসেবে দরপত্র জমা দেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা মন্ডল ট্রেডার্স ডাক মূল্য ২৯ লক্ষ এবং আয়কর ও ভ্যাট ৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকাসহ ৩৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে গোয়ালন্দ পৌর মেয়রের অনুকুলে জমা প্রদান করেন।
কিন্তু পৌরসভা সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাট ইজারা প্রদান না করে সর্বনিম্ন দরদাতা জাকির হোসেনকে গরুর হাট ইজারা প্রদান করা হয়। জাকির হোসেন কাঙ্খিত সরকারী মূল্যের চেয়ে ১ লক্ষ ৩ হাজার টাকা কমে দরপত্র জমা দেন। কাঙ্খিত মূল্য না পেলে পূনরায় দরপত্র আহব্বান করার নীতিমালা রয়েছে।
সর্বোচ্চ দরদাতা মন্ডল ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী নাসিম মাহমুদ ইভান বলেন, মন্ডল ট্রেডার্স সরকারী নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি মূল্যে পে-অর্ডার করা সত্বেও হাট প্রদান না করে পরিকল্পিত ও অসদ উপায়ে গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডল সর্বনি¤œ দরদাতা জাকির হোসেনকে হাট ইজারা প্রদান করেন। এতে হাট বাজার ব্যবস্থাপনা নীতিমালার পরিপন্থি ও সরকারী রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াসহ সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করার সামিল। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষে কাজ না করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য সরকারি কাঙ্খিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে গরু হাট ইজারা প্রদান করেছেন। এ কারণে সর্বোচ্চ দরদাতা মন্ডল ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী নাসিম মাহমুদ ইভান গত ২৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে গত ১৫ মে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আতিকুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলা প্রশাসককে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে অবহিত করার জন্য পত্র প্রেরণ করেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। সোমবার সরেজমিন গোয়ালন্দ পৌরসভায় তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম মন্ডলের সাথে কথা বলতে সোমবার পৌরসভায় গেলেও তিনি চীন সফরে যাওয়ায় তাকে পাওয়া যায়নি।
এ সময় প্যানেল মেয়র মোঃ ফজলুল হক বলেন, সর্বোচ্চ দরদাতা এবং তার পরের জন নিয়ম অনুযায়ী ক্রুটিপূর্ণ দরপত্র জমা দেন। এজন্য পৌরপরিষদ সভা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জাকির হোসেনকে ইজারা প্রদান করা হয়। সরকারি কাঙ্খিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে কেন দিলেন আর পূনরায় কেন দরপত্র আহব্বান করলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই নিয়ম আমি জানি না। পৌর সভার মেয়র এ ব্যপারে ভালো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তে এসেছেন রাজবাড়ীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান রিপন।