অসহায় আলেকজান বিবি (৬৫) বয়সের কারণে এখন আর ঠিকঠাক চলাচল করতে পারেন না । স্বামী সামছুল মৃধা দীর্ঘ ৩০ বছর আগেই মারা গেছে।একমাত্র সন্তান ফজর মৃধা সেও দেড় বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। তার ও কোন সন্তান নেই। এখন ছেলের বউ কে নিয়ে মানুষের বাড়ি কাজ করেই জীবন কাটাচ্ছে।
স্বামীর মৃত্যুর পর মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে একটু একটু করে মাথা গুজার জন্য রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের ইলিশকোল এলাকায় কিনেছিলেন ২২ শতাংশ জমি। সেখানে তিল তিল করে জমানো টাকা দিয়ে একটা ঘর ও করেছেন।
ছেলের মৃত্যুর পর বোনের মেয়ে জামিরন বেগম তার ভাতা করে দেওয়ার কথা বলে জমিটা লিখে নিয়েছে। জানা যায় আলেকজান বিবির একটু একটু করে জমানো ৭০ হাজার টাকা ও জানিরন বেগম নিয়ে নিছে। তবে এই টাকা ও জমি লিখে নেওয়ার পর জামিরন বেগম তার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
আলেকজান বিবির সাথে কথা হলে তিনি সব সময় অশ্রু চোখে বলেন, আমার জমি ও নিয়ে নিছে। কত কষ্ট করে জমি কিনেছিলাম! তুমরা আমার জমি ফিরিয়ে দাও। না হলে আমি মরে যাবো।
তিনি আরও বলেন আমার ভাগ্নী কয়েক জন লোক এনে মেহগনি বাগানে নিয়ে গিয়ে কি যেনো কাগজে আমার টিপসই নিয়ে নেয়।
প্রতিবেশীরা বলেন, দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলে ফজর মৃত্যুর পর আলেকজান বিবি কে নিয়ে যায় ভাগ্নী জামিরন বেগম জামালপুরের তার বাড়িতে। কিছু দিন পর ফিরে আসে আলেকজান বিবি। এর পর থেকে আর কোন খোঁজ খবর নেন না ভাগ্নী তার। এরি মধ্যে জানতে পারি আলেকজান বিবির জমি লিখে নিয়েছে জামিরন বেগম। সময়ে অসময়ে আলেকজান বিবি মাটিতে গড়াগড়ি করে আর বলে আমার জমি ফিরিয়ে দাও।
রবিবার (৩১ জুলাই) দুপুর ২ টায় বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানার কাছে আলেকজান বিবি এলাকাবাসীর সহযোগিতা লিখিত আবেদন করে জমি ফিরে পেতে।
এ সময় অসহায় আলেকজান বিবি কে বুকে জড়িয়ে ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা। তিনি অসহায় আলেকজান বিবি কে শান্তনা দিয়ে বলেন যে বা যারা অসহায়ের জমি নিয়ে নিছে তারা হীন মনের মানুষ।
এ সময় দৈনিক বাংলা ৭১ ও বিবার্তা২৪ ডট নেট এর জেলা প্রতিনিধি মিঠুন গোস্বামী, গণকণ্ঠ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি জয়নাল আবেদিন, দৈনিক এই আমার দেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি লালন রুবেল চিশতী, দৈনিক আলোচিত কন্ঠ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলামের উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে জামিরন বেগম এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয় নাই।
জানা যায় বালিয়াকান্দি এস আর অফিসের দলিল লেখক মোঃ ইকরাম (লাইসেন্স নং- ১৯/২০১৫) এর যোগসাজশে এই জমি সম্পাদন হয়।
দলিল লেখক মোঃ ইকরাম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ওই জমিটা কমিশন দলিল হয়েছিল। সেই সময়ের সাব-রেজিস্টার লুতফুর নাহারের উপস্তিতিতে সম্পাদক হয়েছিল। ওই মহিলা নিজের ইচ্ছায় জমি লিখে দিছে।
সে সময়ের সাব-রেজিস্টার লুতফুর নাহার বলেন, অনেক দিন আগের কথা আমার ভালো মনে নাই। তবে এমন যদি হয় তবে অফিসের পিয়ন পাঠিয়েছিলাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা বলেন, আমি অভিযোগ এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য নোটিশ এর মাধ্যমে জামিরন বেগম কে অবহিত করবো। সেই সাথে দলিল লেখক মোঃ ইকরাম কেও।
এই বিভাগের আরও খবর....