বাগেরহাটের মোংলায় সরকারি রাস্তা কেটে নিষিদ্ধ আত্মঘাতী ড্রেজার দিয়ে রমরমা বালুর ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে।
স্থানীয় চাঁদপাই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর মল্লিক প্রশাসনের কারো অনুমতি না নিয়েই অবৈধ ড্রেজার দিয়ে এ বালুর ব্যবসা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর মল্লিকের বিরুদ্ধে স্বামী পরিত্যাক্তা নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ১০ জানুয়ারি ২০২২ ইং মোংলা থানায় ধর্ষণের মামলা রুজু হয়।
গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ইং সকাল ১০ টায় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় জাহাঙ্গীর মল্লিককে সালাম না দেওয়ায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নারী গৃহবধূ ও কলেজ ছাত্রসহ ৫ জনকে মারধর করায় মোংলা থানায় মামলা হয়।
এছাড়াও ডজনখানেকের বেশি অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীর মল্লিকের বিরুদ্ধে। স্থানীয়ভাবে মালগাজী এলাকার বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত তিনি। যা বারবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও জাহাঙ্গীরের ক্ষমতার দাপটে অসহায় এলাকাবাসী।
চাঁদপাই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের একটি রাস্তায় গিয়ে দেখা যায় স্থানীয়দের একমাত্র চলাচলের রাস্তাটি কেটে তার নিচ থেকে পাইপ ঢুকিয়ে বালু নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন ঘের থেকে এ বালু নেওয়ার ফলে অনেক রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষিজমি, সরকারি খাল থেকে শুরু করে মৎস্য ঘের কোনটিই বাদ পড়ছে না এই বালু বালুখোকোরদের হাত থেকে। আবার জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা খুড়ে নেওয়া হচ্ছে অবৈধ ড্রেজিং পাইপ।
যার ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার। তবুও নীরব কান্না এলাকাবাসীর, প্রতিবাদ করার কেউ নেই এদের সম্মুখে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর তথ্যমতে সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর মল্লিকের ভাগ্নে (বোনের ছেলে) হায়াতসহ স্বজনরা গোলযোগের সৃষ্টি করে।
হায়াত বলে, আমি প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই এই পাঁচ ইঞ্চি পাইপ বসিয়েছি। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলররা সবাই জানে এ পাইপ আমার।
আমার এখানে ঢুকতে গেলে আমার অনুমতি লাগে। আমার অনুমতি ছাড়া এলাকার কোন ছবি তোলা যাবে না। যা তুলছেন সব ডিলেট দিতে হবে। তা না হলে আপনাদের বড় সমস্যা হবে বলে হুমকি দেয় হায়াত।
পরে এ বিষয়টি জানতে পেরে পার্শ্ববর্তী ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তিনি বলেন, আমার ৪ নং ওয়ার্ডের মধ্যে পার্শ্ববর্তী ৫ নং ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর মল্লিক এই অবৈধ বালুর ব্যবসা পরিচালনা করেন তা আমার জানা ছিল না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কামাল (ছদ্দনাম) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করে মেম্বার জাহাঙ্গীর মল্লিক কোটিপতি বনে গেছেন।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে এ অবৈধ বালুর ব্যবসা করছে জাহাঙ্গীর মল্লিক। রাস্তা কেটে বালুর ব্যবসা করায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্চে বলেও দাবি করেন তিনি। বালুর পাইপ মেম্বারের হওয়ায় বাধা দিলেও তারা শোনেননি বলেও তিনি অভিযোগ করেন তিনি। তার ভাগ্নে হায়াত সন্ত্রাসী পদের। তার নামে থানায় মামলাও আছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, আমি নির্বাচনি একটা ওয়াদা করেছিলাম, তাই ড্রেজার দিয়ে কিছু জায়গা ভরাট করছি।
আমি ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন নিয়েই রাস্তা কেটে পাইপ নিছি। সরকার কিছু ইট দিছে খালি, সব রাস্তা আমি করেছি। কিছুদিন আগে আমার ভাগ্নে হায়াত সাংবাদিকদের সাথে তর্ক করে। পরে হায়াতকে আমি শাসন করি।
এ বিষয়ে চাঁদপাই ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা, তবে সরকারি রাস্তা কেটে কোন ব্যক্তি বালুর ব্যবসা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, অনেকদিন ধরেই বালুর ব্যবসা করে আসছে জাহাঙ্গীর মল্লিক।
মেম্বারের ভাগ্নে হায়াত বেয়াদব ও মাস্তান পদের। ওর নামে থানায় মামলাও আছে। যেখানে ঝগড়া-ফ্যাসাদ সেখানেই হায়াত আছে। ওকে মানা করলেও শোনেনা।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) মোংলা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, আমরা কোন অবৈধ বালুর ড্রেজারের অনুমতি দেইনা।
অনুমতি ছাড়া সরকারি রাস্তা খুড়ে বালুর পাইপ নেওয়া অপরাধ। আমরা সরেজমিনে লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিবো। তবে এগুলো যারা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।