নিজস্ব প্রতিবেদক, সোহেল রানা,সাভার থেকে : কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের নামে রোগীদের ভুয়া তালিকা করে খাবারের বিল তৈরির অভিযোগ উঠেছে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি স্বয়ং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদার নামও। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে আবাসিক রোগী খুব একটা না থাকলেও গত কয়েকদিনের খাদ্য তালিকায় ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ৫০ জনই রোগী ভর্তি দেখানো হয়।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে মহামারী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের ভর্তির হার অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কমে যেতে শুরু করে। তবে আবাসিক বিভাগের রোগীদের খাবার সরবরাহের তালিকায় গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহের কয়েকদিনে প্রতিদিন ৫০ জন করে রোগী ভর্তি দেখানো হয়েছে।
অপরদিকে একই তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি রোগীদের বিষয়ে খোজ নিয়ে দেখা গেছে ওই সময়ের পূর্বে থেকেও ১০দিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা মাত্র ১৮জন, যাদের অধিকাংশই সাধারণ দুর্বলতা জনিত কারনে ভর্তি দেখানো হয়েছে। যার মধ্যে গড়ে প্রতিদিন তিন থেকে চারজন রোগী ভর্তি হয়েছে।
তবে আবাসিক বিভাগের খাবার সরবরাহের তালিকায় প্রতিদিন ৫০ জন রোগী ভর্তি দেখানো হয়েছে। যাদের অধিকাংশ নামই পাওয়া গেছে হাসপাতালের কর্মকর্তা, নার্স ও স্টাফের নাম।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন যাবত সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করে আসলেও কখনোই এবিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় অনিয়ম করে আসছে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। কেননা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া রোগীদের ভুয়া তালিকা তৈরি করা সম্ভব নয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। আর এভাবেই পরস্পর যোগসাজশে সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের খাবার সরবরাহ কাজের ঠিকাদার সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী। রোগীদের ভুয়া তালিকা তৈরি করে খাবারের বিল তৈরি প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন যাবত এই ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশেই রোগীদের ভুয়া তালিকা তৈরি করে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে সংশ্লিষ্টরা। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহে অনিয়মের সুযোগ নেই। যদি কোন অনিয়ম থাকে তবে তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. সায়েমুল হুদা বলেন, ”মূলত হাসপাতালের আবাসিক বিভাগে রোগীদের খাবার সরবরাহের বিষয়টি আবাসিক মেডিকেল অফিসার দেখেন। খাবারের বিলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার সাক্ষর করার পরই আমি সেই বিলে সাক্ষর করি। যদি খাবার সরবরাহে কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ নুসরাত জাহান সাথী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন কথা বলতে রাজি হননি।
ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান বলেন, “এমনটি হয়ে থাকলে সেটি অবশ্যই অনিয়ম। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”