নাটোরের বড়াইগ্রামের জোয়াড়ি ও মাঝগাঁও ইউনিয়ন সীমান্তের জোয়াড়ি বাজার সংলগ্ন বড়াল নদীতে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সেতুর একপাশে কাঁচা রাস্তা থাকলেও অপরপাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬ বিঘা আমের বাগান রয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ‘ভূ-উপরোক্ত পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওয়তায় এই অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণে হতবাক ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।
বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতু নির্মাণের জন্য একপাশে ইট, বালু, পাথর, রড, সিমেন্ট মজুদ করা হয়েছে। সেতুর উত্তর পাশে পায়ে হাঁটার সরু কাঁচা রাস্তা থাকলেও অপর পাশে (দক্ষিন অংশে) রাস্তা বা বাড়ি-ঘরের কোন অস্তিত্ব নেই। ওই অংশে রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৫০-৬০ বছরের অর্ধশত পুরানো আমের গাছ।
ওই আম বাগানের মালিক রহমত আলী ও রাশিদুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর ৫ লক্ষ টাকার আম বিক্রি করা হয় এই বাগান থেকে। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের এই সেতু নির্মাণ পরবর্তীতে আম বাগান ধ্বংস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখলের আশংকা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া রাস্তাবিহীন ‘শতভাগ অপ্রয়োজনীয়’ এই সেতু নির্মাণ সরকারি অর্থের ‘শতভাগ অপচয়’ হিসেবে মনে করছেন স্থানীয় সুধী মহল।
স্থানীয় কৃষক সিরাজ প্রামাণিক জানান, নির্মাণাধীন ওই সেতুর পাশাপাশি মাত্র আড়াই’শ মিটার দূরে রয়েছে আরও দুইটি সেতু। তদুপরি রাস্তাবিহীন আরেকটি সেতু নির্মাণের হেতু কি তা তাদের জানা নেই। এই সেতু জনগণের কোনই কাজে আসবে না। রীতিমতো সরকারী টাকা পানিতে ফেলে দেয়ার সামিল। তিনি আরও জানান, এই অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।
জানা যায়, সেতুটি নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে স্থানীয় কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প পরিচালকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালক সুমন্ত কুমার সরকার সরেজমিনে সেতু নির্মাণের স্থান পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এ ব্যাপারে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, ৪২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নওগাঁর ঠিকাদার মোসলেম উদ্দিন সেতুটি নির্মাণ করছেন। কেন এই ’অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ’ জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং ওই কর্মকর্তার সাথে কথা শেষ হওয়ার দুই মিনিট পরেই মোবাইল ফোনে কল করে সেতুটি নিয়ে নেগেটিভ সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য সাংবাদিকদের জোর সুপারিশ করেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।