পেশী ও গিঁটে তীব্র ব্যথা করোনার নতুন উপসর্গ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে চরম দুর্ভোগে পৃথিবীবাসী। শুরুতে বিশেষজ্ঞরা এই রোগের লক্ষণ কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট চিহ্নিত করে করোনার উপসর্গ নির্ণয় করেন। বর্তমানে সাধারণ এসব লক্ষণের পাশাপাশি নিত্যনতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।
ভাইরাসটি প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তন করায় উপসর্গেও পরিবর্তন ঘটছে। এবার আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন’ জানাচ্ছে করোনায় নতুন দুই উপসর্গ তালিকায় ঢুকে গেছে। তা হলো পেশী ও গিঁটে গিঁটে ব্যথা। সকলেরই যে সমস্যাটি হয়, এমন নয়। তবে ১৪.৮ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই এটা ঘটতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
করোনার উপসর্গ এই ব্যথাকে এত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় বলেই ভাবা হয়েছিল প্রথমে। সম্প্রতি ভুল প্রমাণিত হল সেই ধারণা। বিভিন্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেলেন, কিছু ক্ষেত্রে অন্তত রোগীর অবস্থা কতটা জটিল হবে তা নির্ধারণ করে দেয় এই উপসর্গটি। যত মারাত্মক হয় ব্যথার প্রকোপ, তত আশঙ্কা বাড়ে ফুসফুসের জটিলতম সমস্যা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম বা এআরডিএসের।
এই উপসর্গ দেখা দিলে শরীরে জ্বর থাকে ৮৭.৯ শতাংশ রোগীর। শুকনো কাশি থাকে ৬৭.৭ শতাংশের, ক্লান্তি ৩৮.১ শতাংশের, শ্বাসকষ্ট ১৮.৬ শতাংশের, পেশী ও গিঁটে ব্যথা (মায়ালজিয়া ও আর্থ্রালজিয়া) থাকে ১৪.৮ শতাংশের।
চীনের ৫৫ হাজার ৯২৪ জন রোগীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে উপসর্গের এই ক্রম তৈরি করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তালিকার আরও নীচে আছে গলা ব্যথা ১৩.৯ শতাংশ, মাথা ব্যথা ১৩.৬ শতাংশ, কাঁপুনি ১১.৪ শতাংশ ইত্যাদি।
কিছু কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে পূর্বাভাস বয়ে আনলেও, পেশী ও গিঁটে গিঁটে ব্যথা মানেই কিন্তু কভিড-১৯ নয়। বিশেষ করে এই ঋতু পরিবর্তনের সময়, যখন সাধারণ জ্বর-সর্দি, ফ্লু হচ্ছে বহু মানুষের। সেসময় কমবেশি সবারই ব্যথা থাকে। তবে কোভিডের সঙ্গেও এই ব্যথা কমবেশি থাকছে।
কখন বিপদ?
ভারতের ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পান্ডা জানিয়েছেন, যদি দেখেন ব্যায়াম অথবা অন্যকোনো শক্তির কাজ না করার পরও এই ব্যথা অনুভব হয় তবে ভয়ের বিষয়। এই ব্যথা যদি একদিন দুই দিন অতিবাহিত হয় কিংবা করোনার অন্য উপসর্গ না হয় তাহলেও ভয়ের বিষয়। কোনো কারণ নেই যে করোনার অন্য উপসর্গ না হলে করোনা হবে না। এ অবস্থায় তিন দিনের বেশি ব্যথা অনুভব হলে চিকিৎসকের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করুন।
গিঁটে গিঁটে ব্যথা কেন হয়?
ভাইরাস সংক্রমণ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে যখন ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই শুরু করে, তখন সারা শরীর জুড়ে বাড়ে প্রদাহের প্রবণতা। পেশীতে প্রদাহ হলে পেশীতে ব্যথা হয়, লিভারে হলে লিভার এনজাইম এসজিপিটি বাড়ে। ফুসফুসে হলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেনের ঘাটতি হতে শুরু করে। লাল রক্তকণা বা হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমেই যেহেতু কোষে কোষে অক্সিজেন যায়, তার সংখ্যা বেড়ে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা হয়। অর্থাৎ এই তিনটি উপসর্গ থাকা মানে শরীরে বড়সড় ক্ষতি হতে চলেছে বা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে।
সারা রাত সরাসরি ফ্যানের নীচে বা এসি-তে শুয়ে থাকলেও অনেক সময় হয় এমন সমস্যা হতে পারে। সঙ্গে হালকা জ্বরও আসতে পারে। তাতে ভাবার কিছু নেই। বিপদ আসলে তখন, যখন ব্যথার চোটে অস্থির হয়ে যাবেন।
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, যত মারাত্মক পেশীর ব্যথা হবে, তত বেশি আশঙ্কা ফুসফুসের ক্ষতির।
সূত্র- আনন্দবাজার।