June 6, 2025, 10:26 am
Logo
নোটিশঃ
দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি আবশ্যক। নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ এস সি/ সমমান পাস। যোগাযোগঃ 01715247336

ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা

মুজাহিদ খাঁন কাওছার : বিশেষ প্রতিনিধি 18
নিউজ আপঃ Monday, June 2, 2025

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দেশের গ্রামীণ ও শহর এলাকায় বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি তৈরির ধুম। ঈদের এক মাস আগেই যেসব কামারপট্টিতে আগুন নিভে যেত, এখন সেখানে নতুন করে জ্বলছে চুল্লি, বাড়ছে শ্রমিকদের কাজের চাপ।
এক কামারের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘‘এই সময়টাই আমাদের আসল মৌসুম। বছরের অনেক মাস তেমন কাজ থাকে না। কোরবানির ঈদের আগে দা-বঁটি-ছুরি তৈরির কাজ করে যে আয় হয়, তা দিয়ে বাকিটা বছর কোনোভাবে চালিয়ে নেই।’’

সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন কামারপট্টি সাভার নামা বাজার, গেন্ডা বাজার, হেমায়েতপুর বাস স্ট্যান্ড, আমিনবাজার, পল্লী বিদ্যুৎ, পলাশবাড়ী, জামগড়া, জিরাবো, নরসিংহপুর, বলিভদ্র বাজার, কলমা, দোসাইদ, ঘোষবাগ ও নলাম ঘোড়া পীর মাজার, এসব এলাকায় সরে জমিনে কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই ছুরি বা বঁটি নিয়ে আসছেন ধার করাতে। কেউ কেউ নতুন দা বটি চাপাতি বানাতে অর্ডার দিচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০টি নতুন অর্ডার নিচ্ছেন এখানকার এক এক জন কামার।

আলম নামে এক অভিজ্ঞ কামার, বলেন, ‘‘ঈদের ঠিক দুই সপ্তাহ আগে থেকে চাপ বেড়ে যায়। এখন দিনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা কাজ করি। চুল্লির তাপ আর লোহা ঠুকাঠুকি সব সামলে নিতে হয়।’’

তবে ব্যস্ততার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে কিছু অসুবিধাও। কামাররা বলছেন, গত কয়েক বছরে লোহার দাম বেড়ে গেছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়লা ও অন্যান্য কাঁচামালের সংকট। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কিন্তু বিক্রির দাম বাড়ানো যাচ্ছে না অনেকটা প্রতিযোগিতার কারণে।

আশুলিয়া বাজারের এক কামার হাফিজুর রহমান জানান, ‘‘গ্রাহকরা পুরোনো দামেই দা-বঁটি কিনতে চান। কিন্তু এখন এক কেজি লোহার দামই অনেক বেশি। আমরা লাভে না গিয়েও অনেক সময় কাজ করি, শুধু সম্পর্কটা ধরে রাখার জন্য।’’

কোরবানির মৌসুমে অনেকেই আবার ভ্যানে করে গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়ান ধারালো অস্ত্র নিয়ে। তারা হাঁট-বাজারে বসিয়ে দেন অস্থায়ী দোকান। দাম কিছুটা বেশি হলেও হাতের কাছে পেয়ে গ্রামের মানুষরা কিনে নেন।
একজন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা বলেন, ‘‘মাঠে মাঠে ঘুরে বিক্রি করি। দিনে গড়ে ৪-৫ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি হয়। ঈদের আগে দুই সপ্তাহে ভালো আয় হয়।’’

যদিও কোরবানির সময় কামারদের কিছুটা স্বস্তি এনে দেয়, তবে সারা বছরের আয় নিয়ে তারা শঙ্কিত। যান্ত্রিক ধারালো যন্ত্রপাতি, আমদানিকৃত পণ্য ও প্লাস্টিক বডির ছুরি চাপাতি এখন বাজারে সহজলভ্য। ফলে দেশীয় কামারশিল্প আগের মতো প্রাণ পাচ্ছে না।

আশুলিয়া চারাবাগ বাজারের তরুণ কামার শিপন বলেন, ‘‘আমাদের কাজটা কষ্টের, কিন্তু তেমন মর্যাদা বা মজুরি নেই। নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আসতে চায় না। সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ একটু সহায়তা করলে হয়তো কামারশিল্প আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারত।’’

ঈদুল আজহার এই মৌসুমে দেশজুড়ে কামাররা আবারো নতুন আশায় বুক বাঁধেন। কিছুদিনের এই ব্যস্ততা তাদের মুখে হাসি ফোটায়, কিন্তু বছরজুড়ে টিকে থাকার সংগ্রাম যেন থেমে নেই। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প হয়তো হারিয়ে যাবে স্মৃতির পাতায়।


এই বিভাগের আরও খবর....
ThemeCreated By bdit.Com
Share