সোনাই নিউজ:সনাতন ধর্মে নারীর স্থান কেমন ? এ বিষয়ে মার্কণ্ড পুরানের অন্তর্গত শ্রীশ্রীচণ্ডীতে দেবীর স্তবে বলা হয়- “হে দেবী, জগৎের সকল নারী তোমারই অংশা।” নারীকে সৃষ্টির জননী রূপে সনাতন হিন্দু ধর্মে চিহ্নিত করা হয়। সেজন্য শাস্ত্র বলে- “যেখানে নারী প্রীতা থাকেন, সেখানেই সকল দেবতারা বাস করেন- আর যে স্থানে নারী প্রীতা না হন সেখান হতে দেবতারা প্রস্থান করেন।” যদি দেখা যায় দেখা যাবে নারী সৃষ্টি করেন, গর্ভে সন্তান ধারন করেন, সন্তান প্রসব করেন, সন্তান কে স্তন্যদান করে লালন পালন করে বড় করেন। নারী হল মাতৃরূপা। সনাতন ধর্মে নারীর স্থান অনেক উচুতে দেবীস্থানে রাখা হয় ।
- এখন সনাতন হিন্দু বিদ্বেষীরা অনেক সময় খোঁচা দিয়ে আমাদের বলেন আমাদের ধর্মে সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ আছে। বস্তুত এগুলো কালের নিয়মে সৃষ্টি হয়েছে আবার তা চলেও গেছে । হিন্দু মহামানব রাজা রামমোহন রায় বেদান্তের অনুসরণে “ব্রাহ্ম সমাজ” গঠন করে সতীদাহ প্রথা দূরীকরণ করেছিলেন – একথা আমাদের স্মরণীয় । “ব্রাহ্ম সমাজ” বেদান্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি হিন্দু মঠ। অপরদিকে হিন্দু আচার্য পণ্ডিত বিদ্যাসাগর মহাশয় “বিধবাবিবাহ” প্রবর্তন তথা “বাল্যবিবাহ” রোধ ও “বহুবিবাহ” রোধে যে আপ্রান চেষ্টা করেছিলেন – তা আমাদের স্মরণীয় । সুতরাং সেই কুপ্রথা এখন আর নেই । এখন যদি কেউ এগুলো নিয়ে হিন্দু ধর্ম কে আক্রমণ করে তাহলে সেটা তাদের মূর্খ বুদ্ধির পরিচায়ক হবে ।
নারীকে সর্বদা সম্মান করা সনাতন ধর্ম শেখায়। নারীর মর্যাদা হরণকারীর যে কি পরিণাম হয়- তা রামায়ন, মহাভারত প্রমান । সনাতন ধর্মে কোনোদিন নারীকে ভোগ্যা রমণী বা সন্তান উৎপাদনকারী
রূপে দেখা হয় না । কেউ কেউ আবার খোঁচা দিয়ে বলেন- শ্রীকৃষ্ণের এত সন্তান কেন? তাহলে বলা যায় সেগুলি তত্ত্ব কথাকে নানান গল্প আকার দেওয়া হয়েছে। আর যদি মহাভারত পড়ি, তদেখি সেই যদু বংশ ধ্বংস হয়েছিলো । সুতরাং নারীকে কখনোই হিন্দু ধর্ম ভোগ্যা বা সন্তান উৎপাদনকারী রূপে দেখে না । হিন্দু ধর্মে গৃহস্থ নারী এমনকি গণিকাদের পর্যন্ত সম্মান করা হয় ।- ঐ যে পূর্বেই বলেছি চণ্ডীর সেই শ্লোক। সর্ব নারীতে দেবী দুর্গা তুমি বিরাজিতা। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের নির্মাতা রানী রাসমণির জামাতা মথুরানাথ বাবু একদা শ্রীরামকৃষ্ণের পরীক্ষা নেবার জন্য কিছু গণিকাকে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে প্রেরন করেছিলেন । ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব গণিকা দের মধ্যে ভগবতী মা কালীকে দেখে প্রনাম করলেন । এমনই হিন্দু ধর্মের দৃষ্টি। তবুও কি আপনাদের “হিন্দু” বলে পরিচয় দিতে এত লজ্জা ? এমন মানবপ্রেমিক ধর্মকে মাথায় তুলে নিন ।সনাতন ধর্মের নিন্দুক গণ বলেন সনাতন হিন্দু ধর্মে নারীদের পড়াশোনা করতে দেওয়া হয় না । এটা আর একটা ভুল কথা । গার্গী, মৈত্রেয়ী, অপালা ইত্যাদি বিদূষী নারীর নাম শুনেছেন । এঁনারা শাস্ত্র জ্ঞানী ছিলেন। এটা সত্য যে কিছু কালের জন্য নারীদের বিদ্যার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু বিদ্যার দেবী মা সরস্বতী নিজেও একজন নারী । এবিষয়ে আমরা হিন্দু মহামানবী জগৎমাতা মা সারদার জীবনি লক্ষ্য করলে বুঝবো। তিনি নারী শিক্ষাকে খুব গুরুত্ব দিতেন। নিজে পড়তে পারেননি বলে আক্ষেপ করেছিলেন । আবার নিবেদিতা প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে তিনি প্রান ভরে আশীর্বাদ দিয়েছিলেন । সাত-আট বছর হতেই মেয়েকে বিয়ে দেওয়া, মা সারদা এমন নিয়মকে মানেন নি। তিনি দক্ষিণ ভারত ঘুরে এসে বলেছিলেন – “ঐ দেশে দেখলাম ২০-২২ বছরে মেয়েকে বিয়ে দেয়, পড়াশোনা শেখায়, এই পোড়ার দেশে ৭-৮ বছর হতে না হতেই বলে পর গোত্র করে দাও।” মা সারদা নিজে নারীর শিক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছিলেন । সুতরাং হিন্দু ধর্ম নারীর শিক্ষা অধিকারকে সমর্থন করে। তাই তো হিন্দু নারীরা আজ প্রোফেসর, পুলীশ, সেনাবাহিনী, ডাক্তার, বিজ্ঞানী কত উচ্চ পদে আসীনা । আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সকল নারীকে শ্রদ্ধা করুন । হিন্দু ধর্ম বলে কেবল একটি নারীকে বিয়ে করুন । শাস্ত্র বিধান মেনে সুখী দাম্পত্য জীবন পালন করুন । নারীকে সম্মান করুন। কন্যা সন্তান ফেলনা নয়- সে তো মা লক্ষ্মী । -দৈনিক সনাতন
এই বিভাগের আরও খবর....