শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
নোটিশঃ
দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি আবশ্যক। নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ এস সি/ সমমান পাস। যোগাযোগঃ 01715247336

“মাকে নিয়ে মধুর স্মৃতি”

আনোয়ারুল ইসলাম, রাজবাড়ি জেলা প্রতিনিধি / ৭৫০
নিউজ আপঃ শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ৪:১৩ অপরাহ্ন

সবুজ শ্যামল চায়াঘেরা চরিপাশ বটেন ছায়াতলে দাঁড়িয়ে আছি আমি। সামনে দুচোখ জুরানো বিশাল সবুজ ধানের ক্ষেত এবং দিগন্তজোরা সবুজ ফসলের মাঠ ।

এ যেন হাওয়ায় দোলায়িত এক বিশাল সবুজের সমারাহ শৈশব আর কৈশরের স্মৃতি বিজরিত  সেই জায়গাটিতে কতদিন পর এসে দাড়ালাম তা ‍ঠিক মনে নাই ।

শুধু জানি অনেক অনেক দিন পর এখন আমি আমার সেই প্রিয় গ্রামটিতে, আমার সেই চেনা মানুষগুলোর মাঝে । আর প্রিয় মাকে দেখবো বলে ছুটে এসেছি হাঁজার হাঁজার মাইল পথ অতিক্রম করে, মাকে দেখবো বলে। মাকে দেখার প্রথম অনুভূতি কেমন হবে সেটা ভেবেই বুকটা ধড়পড় করছে। মনটা আনছান করছে,মায়ের মুখের মধুর হাঁসিটা দেখার জন্য বুকে বহূদিনের এক প্রতিক্ষার পাহাড় জমে আছে। সেই গুলোই এলো মেলো ভাবছি একা এই নির্জন ছায়াতলে দাড়িয়ে। আমি আবার একা হলেই সবচেয়ে বেশী কথা বলি।

একা হলেই বুকের গোপন রেকর্ড গুলো সব বেজে উঠে হুরহুর করে।আমার প্রিয় গ্রামটি আজ আর নেই সে আগের মতন। সারাদিনের ক্লান্তি মুছে ফেলার জন্য কেউ হেটে বেড়ায় না বিকেলের গৌধুলী আকাশটার নিছে। পাকা ধানের উপর উপচে পড়া অপরূপ সোনালী রোদের জলসানী তাদের অনুভূতি গুলোকে নাড়া দেয়না। যান্ত্রিক জীবন যাত্রা কেড়ে নিয়েছে তাদের অনুভুতি গোলোকে। ঐ যে দূরে বাঁকা কালো গাঁও। বৈদ্যতিক বাতি এসে সেও আজ আলোকিত হয়ে গেছে। আকাশে নেই পাখিদের কিছির মিছির ডাকা ডাকি। নদীতে মাছ নেই;তাই পাশের নদীতে আজ আর হয়না খেয়া। যান্ত্রিক বাহন আসাতে মানুষ গুলোকে অলসতা চেপে বসেছে। তাই আকাঁ বাকাঁ পথে নেই আজ হাটুরে লোকের মিছিল।তবুও সবুজ প্রান্তঘেরা ছোট্ট এই গ্রাম হ্যাঁ,এটিই আমার প্রিয় গ্রাম। যে খানে এক সময় ছুটে বেড়াতো সবুজ ক্ষেতের পাশ দিয়ে একটি বালক।

আজ আর নেই সেই বটবৃক্ষের গাছটি সেখানে জন্মেছে অন্য একটি গাছ। তার ছায়াতলে ও দাড়ালাম কিছুটা সময়। এই গ্রামের ছোট্ট একটি ঘরে আমার জন্ম।ছোট্ট এই ঘরটি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অট্রালিকার চেয়েও মহা মূল্যবান। কারন,সেই ছোট্ট ঘরটিতে আমার প্রিয় মা থাকেন। যে মা তার বুকের সমস্ত উম উজার করে আমাকে বড় করেছেন। কাছে দূরে কিংবা বহুদুরে কেমন আছেন আমার সেই আদিরিনী মা? আজ বহুদিন পরে মাকে দেখতে যাচ্ছি। তাই মনে পড়ে মায়ের মুখ;মনে পড়ে মায়ের কথা। তখনি দু’চোখে অশ্রুতে ভিজে যায়। কিছু দুঃখ কিছু ব্যাথা কিছু আকুলতা। যে ঘরে কত মহা আনন্দে কেটেছে আমার শৈশব,কৈশরের দিন গুলো। আজ ও চোখে ভেসে উঠে একটি বালকের স্মৃতি।আনন্দের কিছু শব্দ আজও শুনতে পাই।মা ও মা আমি গেলাম; কোথায়? কোথায় যাচ্ছিস বাবা আমার? আরে দেখছনা বন্ধুরা সবাই আমার জন্য খেলার মাঠে অপেক্ষা করছে? ঠিক আছে যা; তবে তাড়া তাড়ি ঘরে ফিরিস। তোর জন্য মা পিঠা বানাচ্ছি দেরি করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে যে।

আজ কতদিন সে মায়ের হাঁসি দেখিনা। কখনো মা রাগ করতেন অভিমান করতেন। আবার নরম এই গালে মায়ের আদরে লাল হয়ে যেত। বাবার আদর যখন অতিমাত্রায় হত তখন কাঁধে চরে বসতাম। বাবার মোছ গুলো কাঁটার মত লাগতো। মাঝে মাঝে সে গুলো এত জোরে টান দিতাম বাবা উহ করে উঠতেন। কখনো রাগ করতেন না বুকে জড়িয়ে বাবা আবারো আদর করতেন। বাবাকে নিয়ে আমার তেমন কোনো স্মৃতি নেই। জন্মের পর থেকেই দেখেছি জীবিকার জন্য;আমাদের সুখের জন্য; সারাক্ষণ ব্যস্ত জীবন যাপন করতে হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় ত্যাগ গুলো মনে হয় বাবা মায়ের দ্ধারাই সম্ভব। তাই আমিও আমার বাবার জন্য গর্বীত। আমার হৃদয়ের গভীরে বাবার জন্য রয়েছে অসংখ্য শ্রদ্ধা।

আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে করি মোনাজাত; বাবা মাকে দিও তোমার শ্রেষ্ঠ জান্নাত। কিন্তু মাকে নিয়ে রয়েছে আমার অসংখ্য মধূর স্মৃতি। শৈশব,কৈশরের এক একটি দিন আজ সে গুলোকে মনে হয় আমার জীবনের এক একটি সোনালী অধ্যায়।

সংক্ষেপে, একটি অধ্যায়ের কথা না বললেই নয়। যে স্মৃতির কথা স্মরন করে আমি অনেক কিছু শিখতে পাই। ভাল কাজে  আমাকে উৎসাহিত করে। মায়ের প্রতি ভালবাসা অধিক হারে বৃদ্ধি করে দেয়।’মনে পড়ে একবার মায়ের অবাধ্য হয়ে মাকে কষ্ট দিয়েছিলাম। মা রাগ করে সারাদিন আমার সাথে কোনো কথা বলেন নি। আমি ও রাগ করে সারাদিন কোনো কথা বলিনি। ঘর থেকে বেরিয়ে এই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম। মনে বিন্দুমাত্রও শান্তি পাইনি। সন্ধায় ঘরে ফিরে দেখি মা নামাজের জন্য ওযু করছেন। আমিও নামাজের উদ্দেশ্য মসজিদে রওয়ানা হলাম। হঠাৎ ক্ষুদ্র মস্তিস্কে এক গভীর চিন্তার উদগ্রীব হল।ভাবনার দারগুলো খুলে গিয়ে আমি যেনো চেতনা ফিরে ফেলাম।

এ আমি কি করছি?আল্লাহ সন্তানের জন্য মায়ের পায়ের নিছে যে জান্নাত রেখেছেন সে জান্নাতকে উপেক্ষা করে আমি কোন জান্নাতের পিছনে ছুটছি। মাকে কষ্ট দিয়ে কথা না বলে আল্লাহর কাছে আমি কি চাইবো। আল্লাহ কি আমার কথা শুনবেন তিনি কি আমার দোয়া কবুল করবেন। আমার এ নামাজ তার কাছে কতোটা গ্রহন যোগ্য। বুকের ভিতর চিন করে উঠলো;কষ্ট গুলো সব দলা দলা গলায় ঠেকে গেল। আমি যেনো আর ঢোক গিলতে পারছিলাম না। দৌড়ে গিয়ে মায়ের পা চেপে ধরলাম আর ছিৎকার করে বললাম; মা আমাকে ক্ষমা কর। তুমি ক্ষমা না করলে আমার আল্লাহ যে আমাকে ক্ষমা করবেন না। মা,আমাকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন। বুকের ভিতর এক প্রশান্তি অনুভব করলাম। কষ্টের ঢোক গুলো সব নিমেষেই তলিয়ে গেলো। অঝরে ঝরা বৃষ্টির মত আমার মায়ের চোঁখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি বাধা দিলাম না। কারন আমি জানতাম এ কাঁন্না কতোটা সুখের; এর এক এক ফোঁটা জল মনি মুক্তার চেয়েও অধিক মূল্যবান। সন্তানের জন্য পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ।

সেই পরম সুখের কাঁন্না আমি কখনো ভুলতে পারিনা। মা মাথা ছুঁয়ে আমার চোঁখের পানি মুছে দিলেন।নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মনে হলো। মাকে বললাম; মা জীবনে আর কখনো তোমাকে কষ্ট দেবোনা তোমার অবাধ্য হবোনা।

 আমরা যারা মাকে কষ্ট দেই আমরা কি কখনো ভেবেছি মা আমাদের জন্য কত কষ্ট করেছেন কত যন্ত্রনা সহেছেন। যে মা আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুকে একান্ত কাছ থেকে দেখেছেন। আমাকে মানুষ করতে গিয়ে জীবনের সুখ গুলোকে বিসর্জন দিয়েছেন।

বুকের সমস্ত উম উজার করে দিয়ে আমাকে লালন করেছেন। আমার ব্যাথায় যে মা ব্যাথিত হন। আমার আনন্দে যে মা হাঁসেন আমার কষ্টে যে মা কাঁদেন। আমাকে  এক নজর দেখার জন্য যে মা প্রতিক্ষায় পথের দিকে অপলক চোঁখে তাকিয়ে থাকেন। তার এই অবেলায় আমি কি আমার বুকের সমস্ত উম উজার করে দিচ্ছি। সন্তান হিসেবে আমি কি আমার দায়িত্ব যথাযত পালন করতে পেরেছি। আমি কি সে মায়ের পদসেবা করে বের করে আনতে পেরেছি তার পায়ের নিছের সেই কাঙ্খিত জান্নাত। কখনো কি ভেবেছি তার চোখে যে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তা কি আনন্দের নাকি বেদনার। যাই হোক;একটু বেশিই বলে ফেললাম আমি আগেই বলেছি একা হলেই আমি অনেক বেশী কথা বলি। একা হলেই বুকের গোপন রেকর্ড গূলো সব বেজে উঠে।অবশেষে,বকবক করতে করতে বাড়ির একান্ত কাছে এসে গেছি।

কাঙ্খিত প্রতিক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। ঐ যে একটু দূরে কে যেনো অপলক চোখে তাকিয়ে আছেন। মনে হয় উনিই আমার মা; প্রিয় গ্রামটির মত মা ও আজ অনেক খানি বদলে গেছেন। মায়ের চোঁখে আজ চশমা; চুলের অনেক খানি পেকে গেছে; বাদ্ধ্যক্যর ছোঁয়া ও মায়ের শরীরে লাগতে শুরু করেছে। অসুস্থ দেহ নিয়ে মা আমার ক্লান্ত চোঁখে তাকিয়ে আছেন। আমাকে দেখতেই মা দু’হাত বাড়িয়ে দিল। মনে হলো যেন আমার জান্নাত আমাকে দুই হাত দিয়ে ডাকছে।মনের অজান্তেই এক পলা বৃষ্টি এসে দু’চোঁখ ভিজিয়ে দিল। দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। মা অবুঝ শিশুর মত কাঁদতে লাগলেন। চোঁখ বন্ধ করে সেই দিনটির কথা স্মরন করলাম।

মায়ের ক্লান্ত চোঁখ বেয়ে বেয়ে অঝর ধারার মত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে; আজও কোনো বাধা দিলাম না। পরম মমতায় মা ছোট্ট শিশুর মত আমাকে বুকে জড়িয়ে রাখলেন। আমিও মায়ের বুকে মাথা রাখতেই এত দিনের ক্লান্তি শ্রান্তি সব ভুলে গিয়ে এক স্বর্গীও সুখ অনুভব করলাম। চোঁখ বন্ধ করে ভাবলাম যেনো  ”মাকে নিয়ে মধুর স্মৃতি”শিরোনামে তৈরি হলো জীবনের আরেকটি সোনালী অধ্যায়।


এই বিভাগের আরও খবর....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর