আগামী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে ঘিরে রাজবাড়ী পাংশার বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে চরমপন্থীদের আনাগোনা ও স্থানীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের প্রভাব বিস্তারের কার্যক্রম। এতে করে নষ্ট হচ্ছে সাধারণ জনগণের বসবাস ও চলাফেরার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। আতঙ্কে স্থানীয় জনসাধারণ। আর এই শান্তির ভারসাম্য রক্ষায় ও আতঙ্ক দূর করতে ইতোমধ্যে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ও পাংশা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেনের নির্দেশনায় কঠোর অবস্থান ও অভিযানে নেমেছে পাংশা থানা পুলিশ।
গত কয়েকদিন থেকে শোনা যাচ্ছিল স্থানীয় সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের বিচরণে বেশ উত্তাপ বিরাজ করছিল পাংশার সরিষা, পাট্টা, কলিমহর ও কসবামাজাইল ইউনিয়নের এলাকা গুলো। কিন্তু বর্তমান সময়ে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী করোনায় পুলিশের ব্যস্ততার মধ্যেও বেশ জরালো ও কঠোর ভাবে দিনে এবং রাতে পরিচালনা করা হচ্ছে অভিযান। পুলিশের এই অভিযানে ইতোমধ্যে কমে এসেছে সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের ছড়ানো উত্তাপ। বজায় রয়েছে শান্তি ও শৃঙ্খলার ভারসাম্য।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পাংশা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন জানান, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্রে রেখে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা কিংবা কোনো প্রকার সহিংসতামূলক ঘটনা যেন না ঘটে সাধারণ জনগণের মাঝে যেন কোনো প্রকার আতঙ্ক বিরাজ না করে সে লক্ষ্যে অভিযান অব্যহত রয়েছে। কোনো প্রকার হামলার ঘটনা ঘটলে সে ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গেই অভিযোগ ও মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা এক সময় চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতিদিন এসব এলাকায় ঘটতো খুন, গুম, চুরি-ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কসবা মাজাইল, কলিমহর, পাট্টা এবং সরিষা ইউনিয়ন অনেক দুর্গম হওয়ায় সন্ত্রাসীরা এসব এলাকায় তাদের অপকর্মের অভয়ারণ্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছিল। প্রতিদিন এলাকাগুলোতে কোনো না কোনো ঘটনা লেগেই থাকতো। প্রায় এক দশক আগেও অনেক ঘটনা প্রশাসনের নজরে আসতো না। আর এলেও অনেক পরে বা ঘটনার পরের দিন জানতে পারতো।
স্থানীয়রা আরো জানান, এসব এলাকায় এক সময় বাংলাদেশের বড় বড় সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের আনাগোনা এবং তাদের প্রভাব ছিল। বাংলা ভাই গ্রুপ, পরেত বাহিনী ও বিভিন্ন সংখ্যা সদস্য বিশিষ্ট নামের সংগঠনগুলো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে গিয়েছে এখানে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী তৎপরতা সবসময় অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু এলাকা অনুযায়ী নিরাপত্তা বাহিনী সঙ্কট এবং যথাযথ স্থানে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপিত না থাকায় অপরাধের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল এবং তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকতো।
কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রায় নব্বই শতাংশ কমে এসেছে অপরাধের সংখ্যা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপিত হয়েছে নিরাপত্তার চৌকি। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পাংশা থানার অফিসার ইনচার্জ সাহাদাত হোসেন যোগদানের পর এর কার্যকরী প্রভাব অনেকাংশেই বেড়েছে।
তথ্য মতে- রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার উত্তরে পাবনা জেলা, দক্ষিণে মাগুরার শ্রিপুর ও ঝিনাইদহের শৈলকূপা উজেলা, পূর্বে ফরিদপুরের মধুখালি উপজেলা এবং পশ্চিমে কুষ্টিয়া জেলার খোকশা উপজেলা।
রাজবাড়ীর এই উপজেলাতে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেশি হয় মূলত পাবনার সাতবাড়িয়া ও রায়পুর হয়ে পাংশার হাবাসপুরের পদ্মার চর এবং ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপার মিদলা থেকে বরকোলা, কলিমহরের খুলুমবাড়িয়া ট্রলার ঘাট ও মা লক্ষী বিহারী অষ্টপল্লী হয়ে। প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতে সন্ত্রাসীরা এ রুটকে নিরাপদ ভেবে চলাচল করে।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে রাজবাড়ীর মধ্যে পাংশা উপজেলাটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এই উপজেলাতেই ২০০৪ সালের ৩১ জানুয়ারী তৎকালীন পরেত বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন পাংশা থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান।
এই বিভাগের আরও খবর....