সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
রুয়েট কর্মকর্তার প্রাণনাশের হুমকি রাজাকারের শ্যালকের পক্ষ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সেভ দ্য রোডের ১৫ দিনব্যাপী সচেতনতা ক্যাম্পেইন সমাপ্ত অবৈধ গ্যাস সংযোগে ‘আকাশ” সিন্ডিকেট রাজশাহীতে জালিয়াতি করে জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা দিবসে নতুনধারার দিনব্যাপী কর্মসূচি অনুষ্ঠিত বাঘায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন পাইকোর (paicoo) ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হাজারো যুবক হাজার কোটি টাকা উধাও মিরপুর ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ ফের ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের দাবি দুর্নীতির কারণে নির্মমভাবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে : মোমিন মেহেদী
নোটিশঃ
দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি আবশ্যক। নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ এস সি/ সমমান পাস। যোগাযোগঃ 01715247336

করোনার টিকার খরচে ২৩ হাজার কোটি টাকার ফারাক !

প্রতিবেদকের নাম / ১১৯
নিউজ আপঃ বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ৭:২৪ পূর্বাহ্ন

ডেস্ক রিপোর্ট: হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ২২ শতাংশ রোগী অনিয়ম-দুর্নীতির মুখে পড়েন। সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের কাছে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৪০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালে সেবা সম্পর্কিত তথ্য না দেওয়া, দুর্ব্যবহার ও সেবা গ্রহণে প্ররোচিত করার মতো অনিয়মের অভিযোগও মিলেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন :অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে গত মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত ওই গবেষণায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪৪ জেলার করোনা সেবাগ্রহীতাদের টেলিফোন জরিপ এবং ৪৩ জেলার ১০৫ কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতাদের অভিজ্ঞতা শোনা হয়।

এদিকে, করোনার টিকা কেনা ও বিতরণে খরচের ক্ষেত্রে সরকারি ও টিআইবির হিসাবে দেখা দিয়েছে গরমিল। টাকার হিসাবে এই ফারাক প্রায় ২৩ হাজার কোটি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত মার্চে বলেছিলেন, টিকা কেনা ও বিতরণে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে টিআইবির গবেষণা বলছে, এই খরচ সর্বোচ্চ ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি নয়।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় মোটাদাগে বাংলাদেশ সফল হলেও সুশাসনের আঙ্গিকে বিশেষত অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। দুর্গম স্থানে বসবাসরত জনগোষ্ঠী, বয়স্ক নাগরিক, সুবিধাবঞ্চিত ও ভাসমান মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবে এ লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম দেখা যায়নি। করোনা মোকাবিলায় খরচের ব্যাপারে কিছু তথ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোটাদাগে উল্লেখ করলেও সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।’

গবেষণার তথ্য তুলে ধরে রিসার্চ ফেলো জুলকারনাইন বলেন, হাসপাতাল থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার ২২.২ শতাংশ সেবাগ্রহীতার মধ্যে ৬১ শতাংশের সেবা পেতে দেরি হয়েছে। একই সঙ্গে ৩৪.১ শতাংশ রোগী হাসপাতালের করোনা ইউনিটে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতি ও দায়িত্ব পালনে অবহেলা, দুর্ব্যবহার ও অসহযোগিতার শিকার হয়েছেন। সেবা সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া হয়নি ২৪.৪ শতাংশ রোগীকে। অতিরিক্ত ফি আদায় ও দালালের কাছে হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২.২ শতাংশ রোগী। নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতা অনিয়ম ও দুর্নীতির মুখে পড়েন। এ ছাড়া ২৬.১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা নমুনা দিতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬৮.৬ শতাংশ নমুনা পরীক্ষাগারে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। নমুনা পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ফিরে এসেছেন ১৭.৩ শতাংশ মানুষ। পরীক্ষাগারে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন ১৬.৭ শতাংশ এবং নমুনা দিতে একাধিকবার কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছেন ১০.৩ শতাংশ মানুষ। নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে গড়ে আড়াই দিন করে সময় লেগেছে। সর্বোচ্চ সময় লেগেছে ৯ দিন। পরীক্ষাগারের স্বল্পতা, অতিরিক্ত ভিড়, নমুনা দিতে জটিলতা, অতিরিক্ত খরচ, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নমুনা পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করেছে।

চিকিৎসায় সক্ষমতার ঘাটতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করে বলা হয়, নিজ জেলায় আইসিইউ সুবিধা না থাকায় ১৮.৯ শতাংশ জটিল রোগীকে ভিন্ন জেলায় গিয়ে সেবা নিতে হয়েছে। অক্সিজেনের জরুরি প্রয়োজন হলেও ১৪.৯ শতাংশ তা পেয়েছেন দেরিতে। আর ১.৭ শতাংশ রোগী অক্সিজেনই পাননি। ১৫ শতাংশ রোগী প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ভেন্টিলেশন সেবা পাননি। ১৩.৮ শতাংশ রোগী প্রয়োজনে আইসিইউ সেবা পাননি এবং ৯ শতাংশ রোগী কখনোই আইসিইউ সেবা পাননি।

সেবাগ্রহীতাদের উদ্ৃব্দতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতার কারণে যথাসময়ে সেবা না পাওয়ায় হাসপাতাল থেকে সেবা নেওয়া ব্যক্তিদের ৭.৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি ১১.৮ শতাংশ সেবাগ্রহীতার রোগের জটিলতা বেড়েছে।

টিকাদানে সরকারের পদক্ষেপকে ইতিবাচক উল্লেখ করা হয়। এরপরও টিকাদানে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের উল্লেখ করে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫.৬ শতাংশ টিকাগ্রহীতা কেন্দ্রে অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছেন। ২ শতাংশ টিকাগ্রহীতা অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হন। টিকা দ্রুত পেতে ১০.১ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে গড়ে ৬৯ টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসীরা টিকার নিবন্ধনের জন্য বিএমইটি নম্বর পেতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া ৪৫টি টিকাকেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি প্রতিবন্ধীবান্ধব ছিল না।

টিকা কার্যক্রমে টাকা খরচে স্বচ্ছতার ঘাটতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জুলাইয়ে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে টিকাপ্রতি তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে গত ১০ মার্চ টিকা কার্যক্রমে মোট খরচ ৪০ হাজার কোটি টাকা বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। অথচ গবেষণায় দেখা যায়, টিকা কেনা ও টিকা কার্যক্রমের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯৯৩ কোটি থেকে ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেওয়া হিসাবের অর্ধেকেরও কম এই খরচ। আবার শুধু একটি দেশের ক্ষেত্রে টিকার কেনা দর প্রকাশ না করার শর্ত থাকলেও অন্য উৎস থেকে কেনা টিকার খরচ এবং টিকা কার্যক্রমে কোন কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।

প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নে দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রণোদনা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ২৩ শতাংশ উদ্যোক্তা অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। দু-একটি ক্ষেত্রে ব্যাংকের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন দাবির অভিযোগ ওঠে। একইসঙ্গে প্রণোদনা ঋণের আবেদন করতে গিয়েও ৬৭.৫ শতাংশ উদ্যোক্তা নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চল ও আদিবাসী এলাকাগুলোতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের তথ্য মিলেছে।

১০ সুপারিশ :করোনা মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে টিআইবি ১০টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো টিকা পাওয়ার উৎস, কেনা দর, বিতরণ খরচ, মজুত ও বিতরণ সম্পর্কিত তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। কভিড-১৯ চিকিৎসা ও টিকা সম্পর্কিত সব প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকারি ও প্রকল্পের বরাদ্দ যথাযথভাবে দ্রুততার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি জেলায় আইসিইউ শয্যা, আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগারসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন শেষ করতে হবে। বেসরকারি পর্যায়ের অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে টিকার বাইরে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে চিহ্নিত করে টিকার আওতায় আনতে হবে।


এই বিভাগের আরও খবর....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর