শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন
নোটিশঃ
দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি আবশ্যক। নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ এস সি/ সমমান পাস। যোগাযোগঃ 01715247336

গ্রামের লেস ফিতার দিন শেষ আধুনিকতার বাংলাদেশ

মনোহরদী( নরসিংদী) প্রতিনিধি / ২৫৪
নিউজ আপঃ শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

গ্রাম জনপদের বহির্বাড়ীর আঙ্গিনায় বিশেষ সুরেলা ডাক… .অ্যাই লেস ফিতা…চাই লেস ফিতা.. এখন আর কানে বাজে না তেমন। রঙ বেরঙের চুরি ফিতা আলতা লিপষ্টিক কানের দুলের মতো সস্তা সাজ প্রসাধনীর ফেরীওয়ালার ডাক এখন গ্রামে গন্জে খুবই বিরল।আবহমান গ্রাম বাংলার সেই চির পুরাতন মন্ত্রমুগ্ধ আহবান কচিৎ কদাচিত কানে বাজে এখন।

গ্রামবালা বঁধূরাই শুধু নন শৈশব উত্তীর্ণ-অনুত্তীর্ন কিশোরীদের সাজ সজ্জার উপকরনের জুগান দিতে লেস ফিতার ফেরিওয়ালার জুড়ি মেলা ভার ছিলো আগে।গ্রামীন জনপদের কুলবালা বঁধূদের আপাদমস্তক সাজিয়ে দেয়ার দায়িত্ব ছিলো যেন এ লেস ফিতাওয়ালাদের। গ্রাম গঞ্জের হাটেবাজারে কসমেটিকস এখনকার মতো সুলভ ছিলো না আগে।সে সময় সীমিত সামর্থ্যের গেরস্থ বালা বঁধূদের সাজসজ্জার অন্যতম নির্ভরশীলতা ছিলো ফেরীওয়ালার লেস ফিতায়।ওদের কল্যানে গেরস্থ বাড়ীর একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতো তখন গ্রামবালা বঁধূদেরদের রুপ সজ্জার এসব নানা উপকরন। লেস ফিতাওয়ালার কাঁচ বসানো ডালার বাক্সে লেস ফিতা আলতা স্নো পাউডার চুলের ব্যান্ড কানের দুল আয়না চিরুনী কি ছিলো না তখন তাতে ? তার ডাকে মেয়ে শিশু থেকে শুরু করে মধ্য বয়সীনি গ্রামবালা বঁধূদেরও চিত্তে চাঞ্চল্য শুরু হতো তখন।

ফেরীওয়ালারা এক বিশেষ ব্যক্তি ছিলেন তখন গ্রাম জনপদে। দিন পাল্টেছে এখন।ফেরীওয়ালারা আগের মতো আর আকর্ষন করে না এখন গ্রামীন কুলবালা বঁধূদের।তাদের সে স্থান দখলে নিয়েছে এখন আলো ঝলমলে সুসজ্জিত দেশী বিদেশী কসমেটিকসের দোকান মার্কেট।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বালাদের চাহীদায় ও রুচিতেও এসেছে পরিবর্তন। শৈশব কৈশোরের সেই লেস ফিতা আলতা কানের দুল অনেকের কাছেই এখন শুধুই অতীত স্মৃতি।লেস ফিতার সেই দুর্নিবার আকর্ষনেের শৈশব স্মৃতি তাদের এখন রীতিমতো হাস্য রসেরও খোরাক জুগিয়ে থাকে।এ কালের কুলবালা বঁধূদের পক্ষে সেই সময়ের কুলবালা বঁধূদের লেস ফিতার আকর্ষন কল্পনায় আনাও এখন কঠিন।কালে ভদ্রে এখন যে দু’ একজন লেস ফিতাওয়ালা চোখে পড়ে তাদের ফেরীর পসরায়ও এসেছে অনেক পরিবর্তন।তাতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে রীতিমতো।

যুগের চাহীদা অনুযায়ী তাদের ফেরীতে এসেছে অনেক বদল। তাদের উপস্থাপনার ঢঙেও এসেছে বেশ নতুনত্ব। তাদের কেউ এখন সুরেলা মধুর কন্ঠে হাঁক দিয়ে দিয়ে গ্রাম জনপদের গেরস্থ বাড়ীর আনাচ কানাচকে আর মুখর করে তুলেন না।তারা এখন ভ্যান গাড়ীতে পসরা সাজিয়ে মাইক বাজিয়ে ক্রেতা আকর্ষন করেন। তথাপি আগের মতো গ্রাম জনপদের কুলবালা বঁধূরা আর তার ডাক পেয়ে ব্যস্ত হয়ে ছুটে আসেন না তেমন করে। মনোহরদী পৌর এলাকার বাসিন্দা আইরিন খান (৩৮) একজন স্কুল শিক্ষিকা।তার পৈত্রিক বাড়ী কিশোরগঞ্জের এক গ্রামে।

শৈশব স্মৃতি রোমন্থন করে জানান তিনি,তার শৈশবের পিত্রালয়ে লেস ফিতার ডাক আকর্ষন ছিলো তাদের কানে মধু বর্ষন করার মতো। একই এলাকার আরেক গৃহীনি শামীমা(৪৫) জানান,তিনি বিয়ের পরও মনোহরদীর স্বামীর বাড়ী থেকে এ লেস ফিতার সামগ্রী কিনেছেন অনেক।গাজীপুরের বাবলী (৪০)। তার শৈশবেরও ব্যাপক অংশ লেস ফিতার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে বলে জানান তিনি।

কালের এ বিবর্তন ও পরিবর্তন সেকালের অনেক গ্রামবালা বঁধূদের অনেকেরই মর্মপীড়ার কারন এখন।তবু বাস্তবতা মেনেই নিতে হচ্ছে তাদের।এ যে যুগের দাবী কালের চাহিদা ।


এই বিভাগের আরও খবর....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর