বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
ফেনীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা ফলোআপ গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে শীতার্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ বাঘা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফকরুল হাসান বাবলুর বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ সাভার ডিজিটাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এর শুভ উদ্বোধন ব্যাচমেটস্ 0305 ক্রিকেট র্টুনামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে ‘টিম অদম্য সাভার’ এস এল এ মানবাধিকার সংস্থার মানবাধিকার দিবস পালিত রাজশাহীতে জমি সংক্রান্তের জেরে মিথ‍্যা সংবাদ প্রকাশে প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বাঘায় দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের দাবিতে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন বাঘায় সমাজসেবার সানোয়ারের জাদুর কাঠিতে সুস্থ-সবল শত মানুষ এখন প্রতিবন্ধি সাভারের গান্ধারিয়ায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
নোটিশঃ
দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি আবশ্যক। নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ এস সি/ সমমান পাস। যোগাযোগঃ 01715247336

হরিপুরে বিরল রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের তিন শিশু, সহযোগীতার প্রার্থনা দিনমজুর বাবার

এ বি এম কাইয়ুম স্টাফ রিপোর্টার ঠাকুরগাঁও জেলা৷ / ৩৫৬
নিউজ আপঃ মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১, ৩:১০ অপরাহ্ন

শিশু গুলো অজ্ঞাত বিরল রোগে আক্রান্ত। অন্যান্য শিশুর মত স্বাভাবিক জীবন ছিল তাদের। স্কুলে যেত, দুরন্তপনা করে বেড়াত, আবার বাবার কাজেও সহযোগীতা করতো। কিন্তু হঠাৎ এক বিরল রোগে চিকিৎসার অভাবে আজ প্রতিবন্ধী তিন ভাই।
প্রথম বড় ভাই রমাকান্ত (১৪) দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছাত্র থাকা অবস্থায় এই রোগে আক্রান্ত হয়। তার পরে দ্বিতীয় ভাই জয়েন্ত (১২) বড় ভাইয়ের বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হয়। আর তৃতীয় ভাই হরিদ্র (৮) সেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পথে। তিন ছেলেকে নিয়ে পরিবারটি এখন পথে বসেছে।
এই তিন শিশু ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলা ৩নং বকুয়া ইউনিয়নের বলিহন্ড গ্রামের শ্রী বাদুল সিংহ এর সন্তান। শেষ সম্বল বিক্রয় করে দিনমজুর বাবা এখন সকলের কাছে সহযোগীতা প্রার্থনা করছেন শিশুগুলোকে বাচিঁয়ে রাখার জন্য।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বলিহন্ড গ্রামের শ্রী বাদুল সিংহের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় তিন শিশু বসে রয়েছে। মা বাড়ির কাজে ব্যাস্ত। বাবা মানুষের জমিতে দিনমজুরের কাজে গিয়েছে। মা বাসার কাজের পাশাপাশি সন্তানদের নিয়ে ব্যাস্ত থাকছে সবসময়। সন্তানেরা নিজেরা চলাফেরা করতে পারে না। তাদের সব কাজেই মা কে সহযোগীতা করতে হচ্ছে।
তিন সন্তানকে নিয়ে এক প্রকার সমস্যায় রয়েছে তাদের মা। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে গোসল, পায়খানা প্রসাব সব কিছুতেই মা ছাড়া বাচ্চাগুলো অচল। দিনমজুরের কাজ করে বাবা যা পায় তাই দিয়ে সন্তানের খাওয়াদাওয়া ও পরিবারের খরচ চালায়। বাচ্চাগুলোর চিকিৎসা করার কোন টাকা নেই বাবার কাছে। কোন প্রকার সরকারী সহযোগীতাও পায় না জানালেন বাবা। একপ্রকার ক্ষোভ নিয়েই দিনমজুর পিতা জানালেন কি হবে এসব ছবি তুলে। কেও তো আমাদের দিকে তাকায় না। বাচ্চাগুলাকে নিয়ে আছি মহা সমস্যায়।
এলাকাবাসি জানায়, জন্মের পরেই বাচ্চাগুলো ভালো ছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই হাত পা শুকিয়ে যাচ্ছে বাচ্চাগুলোর। বড় ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের বাবা সর্বশান্ত হয়ে যায়। শেষে ডাক্তার জানায় এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। তাই পরের দুই বাচ্চার আর কোন চিকিৎসা করায় নাই তাদের বাবা। আর চিকিৎসা করানোর মত টাকা নেই অসহায় দিনমজুর পিতার। তাই এভাবেই কষ্ট করে দিন চলতেছে তাদের। কারো কোন সহযোগীতাও পায় নাই পরিবারটি।
শিশুগুলোর মা কাজলী রানী জানায়, তিনটাই ছেলে সন্তান আমার। জন্মের পরে স্বপ্ন ছিল এই তিন সন্তান পরিবারের অভাব দুর করবে। পড়ালেখা করে বড় হয়ে বাবা, মা কে দেখবে। কিন্তু কি এক অসুখে আমার তিন সন্তান এখন পঙ্গু। চলাফেরা করতে পারে না। তাদের সব কাজ আমাকেই করতে হয়। সন্তান আমার তাই কষ্ট হলেও তাদের দেখভাল করতে হবে আমাকেই।
শ্রী বাদুল সিংহ ক্ষোভের সাথে বলেন, কত লোক এলো, ছবি তুললো, কেউ তো সহযোগীতা করলো না। অসুস্থ সন্তানদের ভালোমন্দ খাওয়াতে পারি না। তিন বেলা খাওয়ার জুটাই কষ্ট আমার জন্য আর চিকিৎসা করাবো কিভাবে। আমি দিনমজুরের কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনরকম দিন চলে। আমার নিজের কোন জমি নেই। মানুষের জমিতে কাজ করি। এই তিন ছেলে ছিল আমার স্বপ্ন। বড় হয়ে তারা আমাদের অভাব দুর করবে। কিন্তু গরিবের স্বপ্ন তো আর পূরণ হল না। এখন সন্তানগুলোকে বাচিঁয়ে রাখতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতা চাই। আমাকে একটু সহযোগীতা করলে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারি।
হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এটি একটি বিরল জেনেটিক রোগ। রোগের নাম হচ্ছে Duchenne Muscular Dystrophy। এই রোগের এখন পর্যন্ত কোন চিকিৎসা আবিস্কার হয় নাই। এই রোগ সাধারন্ত ছেলেদের হয়ে থাকে। তবে তার তৃতীয় ছেলেটি এখনো সেভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয় নাই। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা করা গেলে তার তৃতীয় সন্তানটি সুস্থ ভাবে বেচেঁ থাকতে পারবে।
হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনিরুল হক খান উপস্থিত হয়ে একটি হুইল চেয়ার উপহার দেন পরিবারটিকে। এসময় তিনি বলেন, এটি একটি বিরল রোগ। তাই চিকিৎসার জন্য পরিবারটিকে সহযোগীতা করা হবে। এছাড়াও সরকারী যে সকল সুযোগ সুবিধা আছে সেগুলো পাইয়ে দিতেও পরিবারটিকে সহযোগীতা করা হবে। পরিবারের তৃতীয় বাচ্চাটি এখনো সেভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয় নাই। তাই শিশুটিকে সুস্থ রাখতে যেসকল চিকিৎসা আছে সেগুলো দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হবে।


এই বিভাগের আরও খবর....
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Share
Share