পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সব জেলার সাথেই রেলযোগে রয়েছে রাজবাড়ীর। প্রতিদিন রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ ট্রেনযোগে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত এসে তারপর লঞ্চ ও ফেরিতে করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে পৌছান। তারপর বাস ধরে মানিকগঞ্জ এবং ঢাকা জেলায় প্রবেশ করেন।
আবার যারা ঢাকা-মানিকগঞ্জ থেকে যান, তারা ওই পাড়ে গিয়ে ট্রেন ধরেন। যদিও বর্তমানে নানা অজুহাতে কমানো হয়েছে ট্রেনের সংখ্যা।
আগের মতো ঐতিহাসিক গোয়ালন্দ বাজার স্টেশনের জৌলুস নেই কিন্তু এই স্টেশনে ট্রেনযাত্রীরও অভাব নেই। বর্তমানে গোয়ালন্দ ঘাট থেকে রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনার দিকে যথাক্রমে আন্তঃনগর মধুমতি, নকশিকাঁথা ও পোড়াদহ শাটল ট্রেন ছেড়ে যায়।
গোয়ালন্দ থানার আওতাধীন দৌলতদিয়াতে ফেরি ও লঞ্চ সার্ভিস চালু আছে। এছাড়া অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০১৩ সালের নভেম্বরের ৩ তারিখে চালু হয় কালুখালী-ভাটীয়াপাড়া রেলপথ। এরপরে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসের ২১ তারিখে চালু হয় পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর সেকশনে রেলযোগ।
এরই মধ্যে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর জন্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটকে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। যেখানে রেলসহ সড়কসেতু নির্মাণ করা হবে। যদিও আলাদাভাবে রেল মন্ত্রণালয় গঠিত হবার পরে আলাদা রেল ব্রিজ নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ঢাকা মহানগরী জনসংখ্যা বাড়তে বাড়তে এমন একটি পর্যায়ে গিয়ে পৌছেছে যে, এখন ঢাকা থেকে সরাসরি রেল লাইন টেনে নেবার কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। তবে বর্তমানে জয়দেবপুর জংশন থেকে একটা লাইন টেনে নিয়ে সাভার, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, পাটুরিয়া হয়ে দ্বিতীয় পদ্মাসেতুকে গোয়ালন্দ ঘাটের সাথে যুক্ত করা যায়। এতে করে ঢাকা-রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া-পোড়াদহ-খুলনা ও ঢাকা-রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া-পোড়াদহ জংশন হয়ে রাজশাহীর পথ অনেক কমে যাবে। পাশাপাশি অনেক সহজতর হবে।
এছাড়াও বর্তমান প্রেক্ষাপটে পার্বতীপুর জংশন-গোয়ালন্দ ঘাট,ফরিদপুর (পাঁচুরিয়া জংশন) রুটে অথবা খুলনা-গোয়ালন্দ ঘাট রুটে নতুন এক জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা একান্ত প্রয়োজন। রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া অঞ্চলে চট্টগ্রাম বা ময়মনসিংহ অঞ্চলের মতো একগাদা ট্রেন নেই। স্বল্প দূরত্বের লোকাল,মেইল ট্রেনের সংখ্যাও নগণ্য। রাজবাড়ী লোকোশেড যুগের পর যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। চালু করার কোনো উদ্যোগ নেই। রেল লাইন, স্টেশন ও জংশন এলাকা দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। ইংরেজ আমলে নির্মিত রাজবাড়ী-পাংশা বা জগতীর মতো স্টেশনগুলো সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পোড়াদহ জংশন থেকে গোয়ালন্দ ঘাট মেইন লাইনের সংস্কার করলেও রাজবাড়ী থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত রেল লাইনের অবস্থা এখনও খুবই বেহাল, যার দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ৫১১/৫১২, আন্তঃনগর তিতুমীরসহ কয়েক জোড়া ট্রেন অনেক আগেই এই সেকশন থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে যা আজ অবধি চালু হয়নি।
বর্তমানে ব্রডগেজ রেলওয়ের কোনো লোকোমোটিভ সংকট নেই। বরং অনেক লোকোমোটিভই অলস পড়ে আছে। অথচ এই রুটে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোয় ৬৫ সিরিজ তো দূরে থাক, ৬৪ সিরিজ দিয়েও চালাতে দেওয়া হয় না। কেন দেওয়া হয় না তা জানা নেই। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে, প্রতিদিন চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে মধুমতি ট্রেন তার অর্ধেকেরও কম দূরত্ব অতিক্রম করার ক্ষেত্রে (রাজশাহী-ঈশ্বরদী জংশন) ৬৫ সিরিজের লোকোমোটিভ পায় কিন্তু বাকি পথে ৬০ বা ৬১ সিরিজ দিয়ে চালানো হয়।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেসের পাশাপাশি কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া ও ফরিদপুর এক্সপ্রেস ট্রেন তিনটিতেই ৬০ অথবা ৬১ সিরিজের লোকোমোটিভ ব্যবহার করা হয় যা নিতান্তই পরিহাস ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। এর মধ্যে কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস ও ফরিদপুর এক্সপ্রেস ট্রেনদ্বয় আন্তঃনগর হিসেবে চলতো যা বিগত ১৫ আগস্ট ২০১৭ ইং তারিখ থেকে মেইল হিসেবে চলা শুরু করেছে।
আন্তঃনগর হিসেবে রেখে এই রুট দুটিতে নতুন কোনো লোকাল বা মেইল চালানো কি যেতো না? রেলের কথা অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় লোকবল, লোকোমোটিভ অথবা কোচ না থাকায় তারা এই রুটে অন্য ট্রেন দিতে পারছে না। আবার যাত্রী কম হওয়ায় রেলের লস হচ্ছে বিধায় তার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে বারংবার বলা হচ্ছে, আয়-ব্যয় মুখ্য নয়, বরং রেলের সেবাটাই মুখ্য। তাহলে এই লোকসানের অজুহাতে রেলের দ্বি-মুখী আচরণ কেন?
আমরা জানি, এক সময়ের জনপ্রিয় সেকশনটাকে কী করে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। এর জ্বলন্ত উদাহরণ পোড়াদহ জংশন-গোয়ালন্দ ঘাট সেকশন। তাই বর্তমান সময়ে রেলবান্ধব সরকার ও রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া অঞ্চলের রেলওয়ের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে এই অঞ্চলের জনসাধারণ ও সচেতন মহল।
এই বিভাগের আরও খবর....