আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাজশাহী সীমান্ত এলাকার চোরা কারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীরা। রাজশাহীর সীমান্ত পথ দিয়ে আসছে মাদকের বড় চালান। ঈদকে সামনে রেখে মজুদ বাড়াতে সক্রিয় মাদক ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন ভারত থেকে কয়েক কোটি টাকার হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাঁজা ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ আসার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা সরবরাহ হচ্ছে।
বর্তমানে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার মাদক ব্যবসায়ী মাদক পাচারে সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, মাদক পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে গোদাগাড়ী, সাহেবনগর, মানিকচক, কোদালকাটি, আলাতুলি বগচর, হাকিমপুর, সুইজগেট, কামারপাড়া, সুলতানগঞ্জ, সারাংপুর, ভগবন্তপুর, হাটপাড়া, বারুইপাড়া, রেলবাজার, মাদারপুর, মাটিকাটা, সিএন্ডবি আঁচুয়া, গড়ের মাঠ, রেলগেট বাইপাস, বিদিরপুর, প্রেমতলী, ফরাদপুর, রাজাবাড়ী, খরচাকা, নির্মলচর, পবার সোনাইকান্দি, গহমাবোনা, জাহাজঘাটি, হরিপুর, হাড়পুর, চারঘাটের ইউসুপপুর, মুক্তারপুর, গোপালপুর, টাংগন, পিরোজপুর, রওথা এবং বাঘার মীরগঞ্জ, হরিরামপুর ওআলাইপুর সীমান্ত ব্যবহৃত হচ্ছে।
এসব সীমান্ত এলাকা দিয়ে ফেন্সিডিল, মদ ও গাঁজা আসলেও গোদাগাড়ী সীমান্ত পথগুলো দিয়ে হেরোইন প্রবেশ করে বেশি। হেরোইনের বড় চালান নিয়ে আসার পর সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে ভাগবাটোয়ারা হয়ে নতুন নতুন কৌশলে পাচার করা হয়। হেরোইন বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে নারী ও শিশুদের।
গোদাগাড়ী সীমান্তে শুধু হেরোইন পাচারের সঙ্গে ৫ শতাধিক চোরাচালানি জড়িত রয়েছে। এরা অল্প সময়ের ব্যবধানে কোটিপতি হয়েছে।
হেরোইনের খনি হিসেবে পরিচিত গোদাগাড়ীতে পাইকারি ছাড়াও খুচরাভাবে হেরোইন বিক্রি হয়। হেরোইন ও ফেন্সিডিলের সঙ্গে জড়িতরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা না হয় এজন্য পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে।
গোদাগাড়ী থানা পুলিশের পরোক্ষ মদতে মাদক কারবারিরা বেশি সক্রিয় বলে জানা গেছে। মাসিক মাসোহারা নেওয়ার কারণে মুলহোতারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে। মাঝে মাঝে চুনোপুঁটিসহ কিছু মাদক কারবারিকে আটক করেন থানা পুলিশ তবে তা আইওয়াশ মাত্র। এই গোদাগাড়ী সীমান্তের মাদকের বড় চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে আটক হয়। অথচ গোদাগাড়ী থানা সেই চালান ধরতে ব্যর্থ।
মাদক ব্যবসায়ীদের সূত্রটি আরো জানায়, ঈদে নিয়মিত মাদকসেবী ছাড়াও নতুন করে তরুণরা মাদকসেবন করে থাকে। ঈদ উপলক্ষে তরুণদের হাতে টাকা আসার পর অধিকাংশ তরুণ এই টাকা মাদকের পেছনে ব্যয় করে। এই কারণেই ঈদে মাদকের চাহিদা বেড়ে যায়। আর এই সুযোগেই মাদকের মজুদ বাড়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা। ঈদে চড়া দামে মাদক বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় নতুন করে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বেকার যুবকরা। বিশেষ করে ফেন্সিডিল ও গাঁজার চাহিদা বেশি থাকে তরুণদের কাছে। তাই বাঘা, চারঘাট, পবার সীমান্ত পথগুলো দিয়ে ফেন্সিডিল আসে বেশি।
প্রত্যক্ষদর্শী মতে, ১৮ মার্চ ভোরের গোদাগাড়ী কেল্লাবাড়িপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন এস আই সাহেদ আলী। অভিযানে দুই ব্যাগে ১৫০ বোতল ফেন্সিডিলসহ মারুফ নামে এক মাদক কারবারিকে আটক করেন। আটক মারুফ মহিশালবাড়ি এলাকার ফারুকের ছেলে। মারুফের সঙ্গে থাকা অন্য মাদক কারবারি পালসার মোটরসাইকেল চালক সাদ্দাম পালিয়ে যায়। তবে মাদক ও মোটরসাইকেল জব্দ করেন পুলিশ। এই মারুফ মুলত মাদক কারবারি মাদারপুর রেলবাজার এলাকার মৃত আজিজুল হকের ছেলে তোফায়েল সহযোগী। তোফায়েল হচ্ছে মুলহোতা। এই তোফায়েলের সহযোগী সাহু, সাদ্দাম, ইকো, মিঠুন, দিবস।
উক্ত বিষয়ে গোদাগাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ৮০ বোতল ফেন্সিডিলসহ মারুফ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় একটি পালসার মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। একজন পালিয়ে গেছে তার বিরুদ্ধে ঐ মামলায় পলাতক দেখানো হবে। মুলহোতা তোফায়েলকে আসামী করা হয়েছে।
উক্ত ঘটনায় পুলিশ ও স্থায়ীদের মতভেদ রয়েছে। পুলিশ বলছে ১ ব্যাগে ৮০ বোতল ফেন্সিডিলসহ মারুফকে আটক করেছেন। আর মোটর সাইকেল ফেলে পালিয়েছে নাহিদ। স্থানীয় প্রত্যক্ষদোশীরা বলছেন দুই ব্যাগে ১৫০ বোতল ফেন্সিডিলসহ মারুফকে আটক করেছেন পুলিশ। আর পালিয়ে গেছে সাদ্দাম।
একটি বিশ্বাস্ত সুত্র নিশ্চিত করেন, গোদাগাড়ী থানার সেকেন্ড অফিসার তোফায়েল মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে উক্ত ঘটনার হেরফের করছেন। এখানে কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম উক্ত ঘটনা দেন দরবার করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কথা বললে সেকেন্ড অফিসার তোফায়েল বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। আপনারা মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।
গোদাগাড়ী থানার সক্রিয় মাদক ব্যবসায়ীরা ও মাদকে ছড়াছড়ি এবং ধরাছোয়ার বাহিরে কেন মুলহোতারা জানতে চেয়ে ফোন দেওয়া হয় জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলমকে। ওভার ফোনে তিনি বলেন, মাদক কারবারিদের ধরতে আমাদের বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে। সক্রিয় ব্যবসায়ীদের ধরতে পুলিশ তৎপর আছেন। ইতিমধ্যে অনেক মাদক কারবারিকে আটক করা হয়েছে।
এই বিভাগের আরও খবর....