গত বছর ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ৫নং বাউসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন নূর মোহাম্মদ তুফান। তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচন কালীন সময় বিদ্রোহী প্রার্থী নূর মোহাম্মদ তুফান ছিলেন কারাগারে। এদিকে নির্বাচনের মাঠে ছিলেন তার স্ত্রী রোজিনা আক্তারী। সে সময় তুফানের পক্ষে যারা একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে রাতদিন কাজ করেছেন তারা প্রচার প্রচারনার কাজে ব্যাক্তিগত ভাবে ব্যায় করেছেন টাকা। নূর মোহাম্মদ নির্বাচিত হওয়ার ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও নির্বাচনের কাজে ব্যায় করা ব্যাক্তিগত টাকা ফেরত না পেয়ে অবশেষে বাঘা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার বাউসা হেদাতীপাড়া এলাকার মৃত আঃ রউফ মোল্লার ছেলে মকলেছুর রহমান (৩৭)। তিনি ২০২১ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর ইউপি নির্বাচনে নূর মোহাম্মদ তুফান এর কর্মী হিসাবে নির্বাচনে প্রচার প্রচারণার কাজে তার কথা মতো ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা ব্যায় করে। পাওনা টাকা চাইতে গেলে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন মকলেছুর রহমান।
একই গ্রামের গোলাম মোস্তফা (৪৯) এ নির্বাচনী খরচের মোট ২৩ হাজার টাকা পাবে মর্মে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অপরদিকে বাউসা টলটলি পাড়া এলাকার মমতাজ আলীর ছেলে মুহসিন আলী (৪৬)। তিনি নূর মোহাম্মদ তুফান এর জমি ক্রয় করার জন্য ১৮ নভেম্বর ২০২১ রুপালী ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে ৫, ৬ ও ২২ ডিসেম্বর ২০২১ইং তারিখে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। এছাড়াও ২৬ ডিসেম্বরের নির্বাচন উপলক্ষে নূর মোহাম্মদ তুফান এ-র স্ত্রী রোজিনা আক্তারীর কথা মতো ১ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা ব্যায় সহ মোট ৯ লক্ষ ১২ হাজার টাকা মুহসিন তুফানের কাছে পাবে বলে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে সুষ্ঠভাবে শান্তিপূর্ন সমাধানের লক্ষে শনিবার (০৪ জুন) সকালে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে শালিস বসে।শালিস বৈঠকে মুহসিন আলীর ব্যাংক এ্যাকাউন্টে নেওয়া টাকা দিতে স্বীকার করলেও অন্যদের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
উক্ত শালিসি সভাপতি ছিলেন, আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলী। বাউসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, এ্যাড.জহুরুল ইসলাম আলম , অধ্যক্ষ রেজাউল করিম সহ অন্যান্য ব্যাক্তিবর্গ।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মকলেছুর রহমান জানান, গত ইউনিয়ন নির্বাচনে জয়লাভ করা এতোটা সহজ ছিলোনা। মোটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে প্রার্থী তুফান ছিলেন জেলে। তার স্ত্রীর কথা মতো আমার ব্যাক্তিগত ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা খরচ করে নির্বাচন করেছি। এখন তারা অস্বীকার করছে। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরে শালিসেও সমাধান হয়নি।
মোস্তাফা জানান,আমি গরিব মানুষ তারপরও তুফান ভাই কে ভালোবেসে আামার জমানো সাড়ে ১৮ হাজার টাকা সহ সখের বাইসাইকেলটি সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে নির্বাচন কালে মোট ২৩ হাজার টাকা ব্যায় করি। এখন এ টাকা চাইতে গেলে আমাকে গালিগালাজ সহ মারধরের হুমকি দেয়।
বাউসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ তুফান বলেন, আমি সে সময় জেল হাজতে ছিলাম। এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই।
তুফানের স্ত্রী রোজিনা আক্তারী বলেন, নির্বাচনে ৩০ জন কর্মী ছিল। আমি সবাইকে যখন যে টাকা প্রয়োজন হয়েছে তা দিয়ে দিয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে মারধর সহ টাকা পাওয়ার অভিযোগ ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা।
মেয়র মুক্তার আলী বলেন, শালিসে নূর মোহাম্মদ তুফান মুহসিনের কাছ থেকে জমি বিক্রির জন্য চেকের মাধ্যমে যে টাকা নিয়েছে তার স্বীকার করেছে। আর মুকলেছ ও মোস্তফার টাকার কথা অস্বীকার করেছে। শালিস কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। জনগনের ভোটে নির্বাচীত জনপ্রতিনিধি শালিস অমান্য করে এটা খুবই লজ্জা জনক ব্যাপার।