নতুন মার্কিন প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশের বেশ কিছু সুযোগ তৈরি হবে৷ তবে মানবাধিকার আর গণতন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে কাজ করে তা গুরুত্বপূর্ণ৷
শপথ নেয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মানবাধিকার আর গণতন্ত্রকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখছেন৷ ডনাল্ড ট্রাম্পের অনেক নীতিই উল্টে দিচ্ছেন তিনি৷ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ আর তাতে বাংলাদেশ লাভবান হবে৷ কারণ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি৷ মিয়ানমারের ব্যাপারেও শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে নতুন মার্কিন প্রশাসন৷ রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হয়েছেন কিনা তা আবারও খতিয়ে দেখতে চান তারা৷ আর এটা মিয়ানমারকে চাপে ফেলবে৷ যা বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে যাবে৷
জো বাইডেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছেন৷ আর এর সাথে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও সম্পর্কিত৷
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল(অব.) শহীদুল হক বলেন, ‘‘জো বাইডেন সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন যেসব দেশে মানবাধিকারের ঘাটতি আছে সেটা তারা দেখবেন৷ আমার মনে হয় এখানে আমাদের ঘাটতি আছে৷ এর সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও যুক্ত৷”
তার মতে সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মানবাধিকার রক্ষায় যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়, বাংলাদেশকেও সেদিকে নজর দেয়া উচিত৷ বিশেষ করে বাক স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বিরোধী দলকে জায়গা দেয়া, মানবাধিকারের বিষয়গুলোকে সম্মান দেখানো জরুরি৷
রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে বাংলাদেশের সামনে বড় একটি সুযোগ আসতে পারে৷ কারণ নতুন মার্কিন প্রশাসন মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হয়েছেন কিনা তা নতুন করে দেখবে৷ আগে তারা এটা দেখতে চায়নি৷ সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন মনে করেন, ‘‘এটাকে বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারবে৷ আর সার্বিকভাবে মানবাধিকারকে নতুন প্রশাসন গুরুত্ব দিচ্ছে৷ এটাও মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াবে৷”
শহীদুল হক মনে করেন, মিয়ানমারের ব্যাপারে নতুন মার্কিন প্রশাসন ঠিক কতদূর যাবে তা এখনো নিশ্চিত না হলেও এই জায়গায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা দরকার৷ যদি অ্যামেরিকার ট্রেজারি মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপ করে সেটা হবে তাদের জন্য ভয়াবহ৷ যা বাংলাদেশের সঙ্গে বসে তাদের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাধ্য করতে পারে৷
অভিবাসন নীতির কারণে এবার অনেক বাংলাদেশি যারা সেখানে রয়েছেন তাদের সুবিধা হবে৷ শিক্ষা ভিসা বাড়বে৷ আর বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যেও সুবিধা হবে৷ আগামী এক দেড়-বছর চীনের সাথে অ্যামেরিকার ব্যবসা বাণিজ্যে দূরত্ব থাকছে৷ তা থাকলে বাংলাদেশ ঠিকমত এগোতে পারলে এর সুবিধা পাবে৷
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির যে দীর্ঘদিনের অবস্থান ভারতের চোখে বাংলাদেশকে দেখা, তার পরিবর্তন এরইমধ্যে হয়েছে৷ এটা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে৷ বাংলাদেশের বাজার এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরো বাড়বে৷ তবে সেটা কতটা বাড়বে তা নির্ভর করবে চীন নীতির ওপর৷” বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু তৈরি পোশাক নয়, আইটিসহ আরো অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখন সুবিধা পাওয়া কথা৷ জিএসপি না পেলে কার্ডটি ঠিকমত খেলতে পারলে সুবিধা পাওয়া যাবে৷
তৌহিদ হোসেন বলেন, সরকারের পরিবর্তন হলেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন হয় না৷ কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা পাল্টাতে হচ্ছে জো বাইডেনকে৷ ট্রাম্পের সময় আসলে বাংলাদেশ তেমন কোনো সুবিধা পায়নি৷ জিএসপি সুবিধা বারাক ওবামার সময় থেকেই নাই৷ এখন যে হবে তার সম্ভাবনাওদেখা যাচ্ছে না৷ কারণ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা সেই পর্যায়ে এখন নাই৷
তার মতে,‘‘জলবায়ু ফোরামে ফিরে যাওয়া এবং মানবাধিকারের বিষয়টি প্রধান্য দেয়া বাংলাদেশের জন্য সুবিধার হতে পারে৷”
তবে সব কিছু নির্ভর করছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার ওপরে৷ বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারের মিয়ানমারকে আরো চাপে ফেলতে প্রয়োজনে এখন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক লবি নিয়ে কাজ করতে হবে৷ আর বাংলাদেশকেও মানবাধিকার আর গণতন্ত্র নিয়ে স্বচ্ছ থাকতে হবে বলে মনে করেন শহীদুল হক৷
আর সম্প্রতি বাংলাদেশে আল কায়েদা নিয়ে মার্কিন বক্তব্যকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না তৌহিদ হোসেন৷ তিনি মনে করেন তারা অনেক দেশ নিয়েই এটা বলে৷ বাংলাদেশ তার অবস্থান প্রতিবাদ জানিয়ে সঠিকভাবেই উপস্থাপন করেছে৷