পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা শোচনীয় অবস্থায় বিরাজ করছে। বাজার টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। তাছাড়া নির্বাচনী মুহুর্তে বাজারের এ পরিস্থিতি বিরাজ করায় অনেক বিনিয়োগকারী লোকসান শেয়ার বিক্রি করে সাইডলাইনে চলে যাচ্ছেন। তাই পুঁজিবাজার ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও নমনীয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
কারন বর্তমান পুঁজিবাজার ক্রান্তিকাল পার করছে। বাজার অনেকটাই গতিহীন। কিন্তু দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এতে প্রাণ সঞ্চার ও বাজারের গভীরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। কারণ শিল্পায়নের অর্থ যোগানে পুঁজিবাজারই সবচেয়ে সাশ্রয়ী উৎস। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এ বাজারের পাশে দাঁড়ানো।
এছাড়া পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট মুখ্য বিষয় নয়, বাংলাদেশের ব্যাংকের আন্তরিকতার কারনে বাজারের হযবরল অবস্থার সৃষ্টি বলে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগের সুরে বলেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরন করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে নমনীয় হতে হবে। পুঁজিবাজার ইস্যুতে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে বিএসইসি ডিএসইসির সহযোহিতা নিয়ে নিতে হবে। তাহলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবো বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল ডিএসই কয়েকটি শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা এসব কথা বলেন। এছাড়া পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের কারণ হচ্ছে তারল্য সংকট। এ বাজারে তারল্য সংকটের জন্য একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তবে আমাদের পুঁজিবাজারে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে আরও অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তার জন্য পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। বাজারের প্রতি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। পুঁজিবাজারের গতি ও আস্থা বাড়াতে দুটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক তার অধীন ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের পদ্ধতি নমনীয় করতে পারে।
বাজার বিশ্লেষকদের ধারনা, সরকার যদি বাজারের সব স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বসে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারে তাইলেই শুধুমাত্র বাজারের উন্নতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তাৎক্ষনিকভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত মানবে এমন পরিস্থিতি অবশ্যই সৃষ্টি করতে হবে। বাজারের এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এগিয়ে না আসে তাহলে এ বাজারের আরো পতন ঠেকানো সম্ভব হবেনা বলেও তারা মত প্রকাশ করেন।
ইস্ট কোস্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজিল চৌধুরী বলেন, নানা কারণে পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট চলছে। বাজারে লেনেদন অনেক কমে গেছে। সূচকও কমছে। একে শুধু সেকেন্ডারি মার্কেটের সমস্যা মনে করলে খুব বেশি যৌক্তিক হবে না। সেকেন্ডারি মার্কেট দীর্ঘদিন খারাপ থাকলে, প্রাইমারি মার্কেট তথা আইপিও’র ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু শিল্প-বাণিজ্য ভাল প্রবৃদ্ধি চাইলে প্রাইমারি মার্কেটকে প্রাণবন্ত রাখতেই হবে। আর একই কারণে মনোযোগ দিতে হবে সেকেন্ডারি মার্কেটের দিকেও।
মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়শনের সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজারে ফান্ডের সংকট রয়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা চেষ্টা করলেও বাজারে পজেটিভ ট্রেন ফিরিয়ে আনতে পারছে না। এমনকি পুঁজিরবাজারে সবচেয়ে বেশি পজেটিভ অবস্থানে রাখা প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারকে টেনে থুলতে পারছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক জেগে ঘুমাচ্ছে। দেশের অর্থমন্ত্রী নিজেও বাংলাদেশ ব্যাংককে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সহযোগিতায় করার জন্য বলেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা করছে না।
নাসির উদ্দিন আরো বলেন, দেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। তারা তাদের সাবসিডিয়ারির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে তাহলে পুঁজিবাজার অনেকটাই ইতিবাচক অবস্থায় উঠে আসবে। সরকারী ব্যাংকগুলো ফান্ডের মাধ্যমে যাতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ায় এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের এগিয়ে আশার জন্য আহবান জানান তিনি।
এম সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আজম বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা নমনীয় হলে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরিতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি।