প্রয়াত লেখক, পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন ৫৭ বছর বয়সে৷ রেলমন্ত্রী যখন বিয়ের পিড়িতে বসলেন, তখন তাঁর বয়স ৬৭! বয়সের তারতম্য ছাড়া অন্য কারণেও আলোচিত-সমালোচিত হয় বিয়ে৷ সেরকম অনেক বিয়েই হয়েছে বাংলাদেশে৷
তারকাদের বিয়ে এমনিতেই সবার নজর কাড়ে৷ সংবাদমাধ্যম ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ তবে পাত্র বা পাত্রীর বয়স একটু বেশি হলে ড্রয়িং রুমে, পার্কে, সংবাদমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন ঝড় ওঠে৷ আলোচিত এবং ‘ট্যাবু’ ভেঙে দেয়া অনেক বিয়েই হয়েছে বাংলাদেশে৷ তালিকা করলে অনেক দীর্ঘ হবে সেই তালিকা৷ তাই এখানে শুধু নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি বিয়ের কথা৷
হুমায়ূন আহমেদ-শাওন: সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে স্মরণীয়
জননন্দিত লেখক, পরিচালক হুমায়ূন আহমদে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন ২০০৫ সালে৷ শাওনকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বরণ করার আগে প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়৷ তারপরও দীর্ঘদিন আলোচনায় ছিল হুমায়ূন-শাওনের বিয়ে৷ প্রধান আলোচ্য ছিল বয়স৷ বিয়ের সময় হুমায়ূন আহমেদের বয়স ছিল ৫৭ আর শাওনের ২৪ বছর৷ কণ্যাসম অভিনেত্রীকে বিয়ে করার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলেও, পরে এই দম্পতির কাজই বেশি আলোচিত হয়েছে৷
হুমায়ূন আহমেদ-শাওন
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে হুমায়ূন আহমেদ-শাওন নিঃসন্দেহে অন্যতম ‘সফল’ জুটি৷ ২০১২ সালে ক্যানসারে মারা যান হুমায়ূন আহমেদ৷ তাঁর জীবন আরো দীর্ঘ হলে এ দম্পতির স্মরণীয় কাজের তালিকা নিঃসন্দেহে আরো দীর্ঘ হতো৷
ষাটোর্ধ ‘তরুণ’ রেলমন্ত্রীর বিয়ে
বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বিয়ে না করে জীবনের অনেকটা সময় পার করে দেয়ায় অনেকে তাঁকে ‘চিরকুমার’ বলতে শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু দু’বছর আগে মন্ত্রী মহোদয় জানিয়ে দিলেন, বয়স ৬৭ হলেও আর তিনি ‘কুমার’ থাকবেন না৷ ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর খুব ঘটা করেই বিয়ে হয় তাঁর৷ পাত্রী হনুফা আক্তার রিক্তা ২০০০ সালে এসএসসি পাশ করেছেন৷ পাত্র-পাত্রীর বয়সের পার্থক্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রসিকতা করেছেন অনেকে৷ তবে রেলমন্ত্রী সেসবে কোনো মনোযোগ না দিয়ে সামাজিক এবং ধর্মীয় সব আনুষ্ঠানিকতা মেনেই বিয়ে করেছেন৷ সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে সেই বিয়ে৷
স্ত্রী রিক্তার সঙ্গে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক
বিয়ের আসরে স্ত্রী হনুফা আক্তার রিক্তার সঙ্গে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক
৬৭ বছর বয়সে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ জানাতে গিয়ে বিয়ের আগে মুজিবুল হক বলেছিলেন, ‘‘দেখলাম মানুষের জীবনের শেষ বয়সে একজন সঙ্গী দরকার, যাতে পরবর্তী জীবনে নিঃসঙ্গ না থাকতে হয়৷” একাকীত্ব ঘুচেছে৷ বিয়ের এক বছর সাত মাস পর বাবাও হয়েছেন তিনি৷ জানা গেছে, রেলমন্ত্রীর এই বিয়ে নিয়ে নাকি চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে৷
সুবর্না মুস্তাফা-সৌদ: আরেক সফল জুটি
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আরেক আলোচিত জুটি সুবর্ণা মুস্তাফা-বদরুল আনাম সৌদ৷ প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার মেয়ে সুবর্ণার এটি দ্বিতীয় বিয়ে৷ প্রথম বিয়ে হয়েছিল কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদীর সঙ্গে৷ ২০০৮ সালে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁদের৷ সে বছরই সুবর্ণা বিয়ে করেন পরিচালক বদরুল আনাম সৌদকে৷ সুবর্ণার চেয়ে সৌদ বয়সে বেশ ছোট বলেই বিয়েটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নানাভাবে আলোচিত হয়৷ নাট্যাঙ্গনের সফল এই জুটিও তাঁদের কাজের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন৷
সুবর্ণা মুস্তাফা
অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা
মাহির সঙ্গে অপুর সংসার
সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’-এর পর আর কোনো অপুর সংসার নিয়ে সংবাদমাধ্যমে এত আলোচনা হয়েছে কিনা সন্দেহ৷ পাত্রের নাম অপু হলেও বিয়েটি অবশ্য বেশি আলোচিত হয়েছে পাত্রী মাহির কারণে৷ চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি৷ এ বছরই বিয়ে করে চমকে দিয়েছেন তিনি৷ উঠতি এবং অনেকের মতে সম্ভাবনাময় এই অভিনেত্রী রূপালি জগতের কাউকে বিয়ে করেননি, পাত্র হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন সিলেটের ব্যাবসায়ী পারভেজ মাহমুদ অপুকে৷
মাহি চলচ্চিত্র অঙ্গনে পা রাখেন ২০১২ সালে৷ অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই তাঁর এই বিয়েকে চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ হিসেবে দেখছেন৷ অতীতে বিয়ের পর অনেক অভিনেত্রীর জনপ্রিয়তা কমেছে বলে বিয়ে মাহির ক্যারিয়ারেরও ক্ষতি করবে বলে তাঁদের আশঙ্কা৷
স্বামীর সঙ্গে চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি
স্বামী পারভেজ মাহমুদ অপুর সঙ্গে চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি
তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে, কিংবা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে বিয়ে বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়৷ চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম সফল অভিনেত্রী শাবানা বিয়ে করেছিলেন মাত্র ২১ বছর বয়সে৷ বিয়ের পরে প্রায় ২৪ বছর দাপটের সঙ্গেই অভিনয় করেছেন তিনি৷
এবং হুমায়ুন ফরিদী
জাতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিত্বদের অনেকের বিয়েই নানা সময়ে আলোচিত হয়েছে৷ রাজনীতির অঙ্গনে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ-বিদিশা, ক্রীড়াঙ্গনে সাকিব আল-হাসান ও উম্মে আহমেদ শিশিরসহ অনেকের বিয়েই বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে৷ স্বাধীনতার পর সবচেয়ে আলোচিত বিয়েটিতে নাম ছিল দুই অখ্যাত তরুন-তরুণীর৷ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে যৌতুক ছাড়া বিয়ে করেছিলেন তাঁরা৷ স্বর্ণালঙ্কারবর্জিত সেই বিয়েতে একমাত্র অলঙ্কার ছিল বেলী ফুলের মালা৷ তাঁদের দাম্পত্যজীবন অবশ্য বেশি দীর্ঘ হয়নি৷ পাত্রী ছিলেন শিক্ষিকা৷ আর পাত্র? হুমায়ুন ফরিদী!
বাংলাদেশের নাটক এবং চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্রতীম পুরুষ হুমায়ুন ফরিদী সেই সত্তরের দশকেই যৌতুক-প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বেলী ফুলের মালা দিয়ে বধূবরণ করে৷