পুকুর থাকলেও, পাড় নাই। বছর না যেতেই রাস্তা ধ্বসে পড়ে এসব পুকুরে। যশোর সদরের বসুন্দিয়া এলাকায় রাস্তার ধারে খণন করা পুকুরগুলোর কারণে রাস্তার এরকম ভেঙে ধসে পড়ার চিত্র প্রত্যহ চোখে পড়ে।
এমনকি অপরিকল্পিত এসব রাস্তার অর্ধেকটাই কোথাও কোথাও পুকুরে বিলীন হয়ে গেছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব রাস্তা বা সড়ক অল্প দিনের মধ্যেই যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে সরকারের প্রতিবছর রাস্তা মেরামতে ল¶ ল¶ টাকা জলে পড়ছে।
স্থানীয়রা বলেন, সরকার কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা তৈরি করে। কিছুদিন না যেতেই এসব রাস্তা গিলে ফেলে পুকুরে। অল্প অল্প করে ভাঙতে ভাঙতে একসময় পুরো রাস্তায় বিলীন হয়ে যায় পুকুরে। এতে জনসাধারণ পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বছরের পর বছর এসব ভাঙা রাস্তার আর মেরামত হয় না। পুুকুরধারে রাস্তা ভাঙনের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধিরা নেননা কোন পদক্ষেপ। ফলে অবাধে গড়ে উঠা পাড় বিহীন পুকুর গুলোর কারণে একদিকে জনদুর্ভোগ বাড়ে অন্যদিকে সরকারের অপচয় হয় ল¶ ল¶ টাকা। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। গতবছর এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলায় এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত সড়কের পাশে পুকুর ও নালা খনন করা হচ্ছে। সড়কের ধার ঘেঁষে পুকুর, কূপ, মাটি বা সেচ নালা ইত্যাদি খনন করলে সড়কের পার্শ্ব-ঢাল এবং আড়ি-ঢাল ¶তিগ্রস্থ হচ্ছে।
এসব ক্ষেত্রে সড়কের সীমানার বাইরে ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রেখে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কিত কার্যক্রম হাতে নেওয়া যায়। নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে গ্রামীণ সড়কের ধার ঘেঁষে পুকুর, সেচনালা খনন করা দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তি রাস্তার ধার ঘেঁষে পুকুর/ খাল/ কূপ/ সেচনালা তৈরি করলে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নিজ খরচে সুর ঢাল নির্মাণ করবেন। এ সংক্রান্ত কতিপয় আইন/ বিধি-বিধান স্মরণ করে দেওয়া হয় নির্দেশনায়। দ্য বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট, ১৯৫২এর ৩ ধারা অনুসারে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো পুকুর খনন বা পুণঃখনন করা যাবে না।
যদি কেউ এমনভাবে পুকুর বা সেচনালা ইত্যাদি খনন করেন যার ফলে ভূমির বা সড়কের বা পথের ব্যবহার বা ভোগদখলের ক্ষেত্রে কোনরূপ অসংগত অসুবিধার সৃষ্টি করে তাহলে কর্তৃপ¶ দ্য বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট, ১৯৫২ এর ৩ ধারার (৩) উপধারা অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে তা অপসারণ, খনন বা পুণঃখণন বন্ধ বা ভরাট করার আদেশ দিতে পারেন। যদি কেউ দ্য বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট, ১৯৫২ এর ৩ ধারার বিধান লক্সঘন করেন বা ৩ ধারা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের আদেশ পালনে ব্যর্থ হন তাহলে ওই আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী আদালত দোষী ব্যক্তিকে ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা অর্থদন্ড অথবা উভয় ধরনের দন্ডে দন্ডিত করতে পারেন। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ১৯৯৬ এর বিধি ২৮ অন্যুায়ী নিজ ভূমির কমপক্ষে ১০ ফুট অভ্যন্তরে পুকুর বা জলাশয় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ সরকারি রাস্তার সীমানার কিনারা হতে কমপক্ষে ১০ ফুট দূরত্বে এবং ৪৫ ডিগ্রি ঢালে পাড় রেখে পুকুর/জলাশয় খনন করতে হবে। দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪৩১ অনুযায়ী সরকারি রাস্তার ¶তিসাধন ফৌজদারি দন্ডনীয় অপরাধ।
এই আইনে ৫ বছরের কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। সরকারি ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভূমি ও ইমারত (দখল পুণরুদ্ধার) অধ্যাদেশ-১৯৭০ এর ধারা-৫ অনুযায়ী অবৈধভাবে দখলকৃত ভূমির উপর পুকুর নালা বা পুকুর খনন বা পুণঃখণন করলে জেলা প্রশাসক উক্ত নালা বা পুকুর ৩০ দিনের মধ্যে অপসারণের আদেশ দিতে পারেন। জনস্বার্থে গুরুত্ব বিবেচনায় তিনি বিশেষে ৭ দিনের মধ্যেও অপসারণের আদেশ দিতে পারেন।
উক্তরূপ অবৈধ দখলের জন্য ৭ ধারা অনুযায়ী আদালত দোষী ব্যক্তিকে কারাদন্ড বা জরিমানা অথবা উভয় ধরনের দন্ডে দন্ডিত করতে পারেন। নির্দেশনায় গ্রামীণ সড়কের পার্শ্বে প্রচলিত আইন/ বিধি-বিধানের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে কোন পুকুর, কূপ, মাটি বা সেচনালা খনন করা হলেপ্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।