নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা ৫/১২/২০১৮
একক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছে বিএনপি।২০ দলীয় জোটের শরিকদের সাথে আসন বণ্টনের সমঝোতা হয়ে যেতে পারে আজই। ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর সাথে কয়েক দিন ধরেই অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা চলছে। গণফোরাম বাদে অন্য দলগুলোর সাথে এ আলোচনা প্রায় শেষের পথে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত বিএনপির নেতারা বলেছেন, ৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই ধানের শীষের একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল এই দুই জোটেই প্রধান শরিক হিসেবে আছে বিএনপি। দুই পকেই সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দলটি। সবার প্রতীক হবে ধানের শীষ। এ েেত্র আসন বণ্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির এখনও চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে আসন বণ্টনের আলোচনা অনেকটা শেষ হলেও বাকি শরিকদের সাথে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। জানা গেছে, আজ জোটের শরিকদের মধ্যে আসনের দাবিদার বেশ কয়েকটি দলের সাথে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান বৈঠক করবেন। সে ক্ষেত্রে আজই জোটের আসন বণ্টনের সুরাহা হয়ে যেতে পারে।
আসন বণ্টন নিয়ে থেমে থেমে আলোচনা চলছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে। প্রত্যেক শরিক দলের দু-তিনজন নেতার সাথে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। আরও দু-তিন দিন এই আলোচনা চলবে। জানা গেছে, বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোকে কেবল বেশি আসন পেতে আলোচনা নয়, জনপ্রিয় এবং বিজয়ী হতে সক্ষম এমন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দল গণফোরামকে ঠিক কতটি আসন দেয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই সংখ্যা ১০-এর অধিক হবে না বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। তবে গণফোরাম আরো অধিক সংখ্যক আসনে তাদের প্রার্থী দিতে চায়।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘আমাদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’ নাগরিক ঐক্যের একটি সূত্র বলছে, অন্তত ৪-৫টি আসনে জোটগত মনোনয়ন চায় সংগঠনটি। আসন বণ্টন নিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং জেএসডির সাথেও একাধিক বৈঠক করেছে বিএনপি।
২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, আমাদের সাথে আজ বুধবার বসার কথা রয়েছে বিএনপির। আমরা ৫টি আসন চেয়েছি। এটা ধরে রাখতে চাই। জোটের শরিক এলডিপি, জাগপার সাথেও আজ বৈঠক করবে বিএনপি। এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেছেন, আমাদের সাথে ৪টি আসনে ইতোমধ্যে সমঝোতা হয়ে আছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি আসন নিয়ে আজ বিএনপির সাথে আমাদের বৈঠক আছে।
জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা গত দু’দিন রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে দেড় শতাধিক আসনে একক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। দলীয়ভাবে এই তালিকা যেকোনো সময় ঘোষণা করা হতে পারে। তবে প্রার্থীকে ৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ধানের শীষ প্রতীকসহ চিঠি দেয়া হবে। দল, জোট ও ফ্রন্টের একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনেও জমা দেয়া হবে। জানা গেছে, বিএনপির সিনিয়র নেতারা ছয়টি শূন্য আসনে সরকারের বাইরে অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা করেছেন। স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীকে দলীয় চিঠি দিয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া যায় কি না তা নিয়েও বিস্তারিত কথা হয়।
মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে ৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থী শূন্য হয়ে গেছে। এমনকি বিএনপি জোটের কোনো প্রার্থীও নেই এই ছয়টি আসনে। আসনগুলো হলো বগুড়া-৭, ঢাকা-১, মানিকগঞ্জ-২, জামালপুর-৪, রংপুর-৫ ও শরীয়তপুর-১ আসন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, সরকার চায় বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াক। কিন্তু আমরা শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আন্দোলনের অংশ হিসেবেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে চাই। সে জন্যই আমরা দলগতভাবে নির্বাচনের প্রতিটি প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছি।
দুই-এক দিনের মধ্যে আসন বণ্টনের ফয়সালা হবে : ফখরুল
দুই-এক দিনের মধ্যে আসন বণ্টনের ফয়সালা চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত রাতে গুলশানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই কথা জানান। তিনি বলেন, শত বাধা, নানা প্রতিকূলতা, গ্রেফতার-মামলার পরেও আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার ল্েয একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। সব রাজবন্দীর মুক্তি চাই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। দেশের মানুষ বার বার সংগ্রাম করে, লড়াই করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এবারো তারা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
নির্বাচন কমিশনের নিরপেতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। নির্বাচন কমিশন এমন একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে যার প্রতি মানুষের ন্যূনতম আস্থাও হারিয়ে ফেলছে। তারা শুধু সরকারের যে ইচ্ছা, সরকারের যে নকশা তা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেসব কাজ করছে সেসব বিষয়ে তারা নির্বিকার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্যের রেকর্ড করেছেÑ এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, উনার বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তিনি তো অনেক কথাই বলছেন, বলে যাচ্ছেন। মনোনয়ন বাণিজ্যে আওয়ামী লীগেরই অভিজ্ঞতা ভালো। তাদের মহাজোটের শরিক একটি দলের নেতার চাকরিও (পদ) গেছে এই বাণিজ্যের অভিযোগে। ফলে এ নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।